বসন্তের প্রথম দিন এবং বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। কয়েক বছর ধরে বসন্ত আর ভালোবাসা দিবস আসছে একসঙ্গে। তাই বুধবার মেলার পরতে পরতে লেগে থাকবে ঋতুরাজ বসন্ত আর ভালোবাসা দিবসের ছোঁয়া। রং-বেরঙের পাঞ্জাবি, হলুদ, সাদা আর লাল শাড়ি পরে যুগলরা আসবেন মেলায়। প্রিয়জনকে দেবেন বই উপহার। প্রাণের এই মেলায় তরুণ-তরুণীরা বসন্ত আর ভালোবাসার রঙে নিজেদের রাঙাবেন। তাদের উচ্ছ্বাসে জমবে বইমেলা।
বুধবার বসন্ত হলেও প্রেমিক-যুগলরা মঙ্গলবার থেকেই নানা রঙের শাড়ি-পাঞ্জাবি পরে মেলায় এসেছেন, ঘুরেছেন আর কিনেছেন বই। তাদের অনেকের মাথায় ফুলের টায়া, কেউ আবার চুলে আর কানে ফুল গুঁজে প্রিয়জনের সঙ্গে ঘুরছেন। তাদের দুষ্টু-মিষ্টি খুনসুটিতে মেলা পেয়েছে ভিন্নমাত্রা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আনিসুল ইসলাম এসেছেন তার প্রিয়জনকে নিয়ে। তিনি বলেন, আগে বসন্ত আর ভালোবাসা দিবস দুই দিনে হওয়ায় আমরা প্রিয়জনের সঙ্গে সময় কাটাতে দুই দিন সময় পেতাম। কিন্তু এখন এক দিনে হয়ে যাওয়াতে সেই সুযোগ হারিয়ে ফেলেছি। তাই ইচ্ছা করেই আমার প্রিয় মানুষটাকে নিয়েই আজকে মেলায় এসেছি। কালকেও (বুধবার) আসব।
এদিকে বসন্ত ও ভালোবাসা দিবসের এই দিনকে কেন্দ্র করে বাড়তি প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন প্রকাশকরাও। প্রেম ভালোবাসা নিয়ে গল্প, উপন্যাস আর কবিতার বইগুলো সবার সামনেই সাজিয়ে রাখা হয়েছে। প্রিয়জনকে বই উপহার দিতে দর্শনার্থীরা এসব বই-ই বেশি কিনছেন বলে জানান বিক্রয়কর্মীরা।
‘তাম্রলিপি প্রকাশনী’র বিক্রয়কর্মী মার্টিন বলেন, ১৪ ফেব্রুয়ারিকে কেন্দ্র করে আমাদের বিশেষ প্রস্তুতি রয়েছে। আমাদের নতুন কিছু প্রেম ভালোবাসার গল্প আর উপন্যাসও আনা হয়েছে। যুগলরা তাদের ভালোবাসার মানুষকে বই উপহার দেওয়ার জন্য আমাদের কিছু বিশেষ বই আছে। যেমন- মেজর আবু সাঈদের অরণ্য ও মেঘবালিকার গল্প, হিমাদ্রি শর্মার হৃদয়জুড়ে মায়া, ফখরুল হাসানের একমুঠো রোদ্দুর, ফাহমিদা চৌধুরীর অপেক্ষা, মৌরি মরিয়মের লগ্নজিতা উল্লেখযোগ্য।
তিনি বলেন, মৌরি মরিয়ম আপুর বইগুলো প্রায়ই রোমান্টিক আর প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে। ভালোবাসার মানুষকে উপহার দেওয়ার জন্য তার বইগুলো ভালো হতে পারে।
অন্য প্রকাশ প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী দিনা বলেন, ‘‘আমাদের প্রকাশনীর সঙ্গে হুমায়ূন আহমেদ স্যার ওতোপ্রোতভাবে মিশে আছেন। তাই স্যারের প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে বই বিশেষ করে ‘বৃষ্টি বিলাস’, ‘তেঁতুল বনে জোছনা’, ‘দিঘির জলে কার ছায়া গো’, ‘লীলাবতী’, ‘মৃন্ময়ী’, ‘শুভ্র’ ভালো সাজেশন হতে পারে। এ ছাড়া জনপ্রিয় লেখকদের মধ্যে সাদাত হোসাইনের ‘প্রিয়তম অসুখ সে’, ‘তোমার নামে সন্ধ্যা নামে’ বই ভালো চলছে। আর প্রেমের কবিতার মধ্যে বীথি রহমানের ‘বিষয়টা সন্দেজনক’ বইটা ভালো পছন্দ হবে।’’
অন্বেষা প্রকাশনীর বিক্রয় প্রতিনিধি আশিক বলেন, ভালোবাসা দিবসকে কেন্দ্র করে অনেকেই আমাদের প্রকাশনীতে আসছেন। প্রিয়জনকে ভালোবাসার বই উপহার দিচ্ছেন। তার মধ্যে ইসমত আরা প্রিয়া ম্যামের ‘আমার শুধু মানুষ হারায়’, পলাশ আহমেদের ‘কৃষ্ণমেঘ’, শরিফুল মুস্তফা মুনীরের ‘নিশীথ কুসুমের গন্ধ’ বই ভালো উপহার হতে পারে।
এ ছাড়া হুমায়ূন আহমেদের ‘মেঘ বলেছে যাব যাব’, সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘শবনম’, তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায়ের ‘কবি’, বুদ্ধদেব বসুর ‘তিথিডোর’, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘শেষের কবিতা’, ‘চোখের বালি’, বুদ্ধদেব গুহর ‘বাবলি’, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘প্রথম প্রণয়’, ‘ভালোবাসা, প্রেম নয়’, ‘যুবক-যুবতীরা’, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কপালকুণ্ডলা, হুমায়ূন আহমেদের নবনী, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘দেবদাস’, ‘শ্রীকান্ত’, আনিসুল হকের ‘নন্দিনী’, ‘আমারও একটি প্রেম কাহিনী আছে’, ইমদাদুল হক মিলনের ‘যত দূরে যাই’, মোশতাক আহমেদের ‘ফাগুন বসন্ত’ বইগুলো প্রিয় মানুষদের উপহার হিসেবে দেওয়া যায়।
নতুন বই ১১০টি
মঙ্গলবার মেলা শুরু হয় বিকেল ৩টায় এবং চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। এদিন নতুন বই এসেছে ১১০টি।
বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় স্মরণ: সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আহমাদ মোস্তফা কামাল। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন হরিশংকর জলদাস এবং ফারজানা সিদ্দিকা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম।
প্রাবন্ধিক বলেন, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ যেভাবে তার পরবর্তী প্রজন্মের লেখকদের কাছে এক অনিবার্য প্রসঙ্গ হয়ে উঠলেন, তা সত্যিই বিস্ময়কর। সাদামাটা গল্প বলার ছলেই তিনি পাঠকদের নিয়ে গেছেন এক দার্শনিক উচ্চতায়, দৃশ্যমান করে তুলেছেন একটি জনগোষ্ঠীর সামষ্টিক চিন্তা-বিশ্বাস-সংস্কারের বিমূর্ত রূপ।
আলোচকরা বলেন, জনজীবনের ভাষাকেই সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ তার সাহিত্যের ভাষা হিসেবে ব্যবহার করেছেন। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর প্রাসঙ্গিকতা এখানেই যে তিনি অতীতের চরিত্রগুলোর সঙ্গে আমাদের একটি নিবিড় যোগসূত্র তৈরি করে দেন।
সভাপতির বক্তব্যে সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, সাহিত্যের ভেতর দিয়ে জীবনের বাস্তবতাকে তুলে ধরার নিপুণ কারিগর সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্। তার সাহিত্যে তিনি সমকালীন জনগোষ্ঠীর অনুভূতির কাঠামোকে ধারণ করেছেন। ফলে কেবল আমাদের সময়েই নয় ভবিষ্যতেও সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ ও তার সাহিত্যকর্ম অনিবার্য এবং প্রাসঙ্গিক হয়ে থাকবে।
লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন নাট্যকার ও অনুবাদক খায়রুল আলম সবুজ, গবেষক আফরোজা পারভীন, কবি শিহাব শাহরিয়ার ও শিশুসাহিত্যিক কামাল হোসাইন।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি জাহিদ হায়দার, হেনরী স্বপন, শিহাব শাহরিয়ার, মতিন রায়হান, জুনান নাশিত, টিমোনী খান রিনো, সাকিরা পারভীন ও মু. আহসান উল্লাহ ইমাম খান তমাল। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী নাসিমা খান বকুল, ফয়জুল্লাহ সাঈদ ও চন্দ্রিমা দেয়া। এ ছাড়া ছিল তুনাজ্জিনা রহমত মৌরীর পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘গীতিকবি আনিসুল হক স্মৃতি পরিষদ’, ‘হামিবা সাংস্কৃতিক একাডেমি’ ও সৌন্দর্য প্রিয়দর্শিনীর পরিচালনায় নৃত্য সংগঠন ‘প্রিয়দর্শিনী’র পরিবেশনা।
সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী মো. হারুনুর রশিদ, মিতা চক্রবর্তী, শ্রাবন্তী সরকার, আফরোজা খান মিতা, শহীদ কবীর পলাশ, মো. মজিবুর রহমান, ফারহানা ফেরদৌসী তানিয়া, মাহবুবা রহমান এবং এম এম উম্মে রুমা।
বুধবারের সময়সূচি
বুধবার মেলা শুরু হবে বিকেল ৩টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ভাষা সংগ্রামী গাজীউল হক শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন রাফাত আলম মিশু। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন সুজাতা হক এবং মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন অধ্যাপক আবদুল মান্নান চৌধুরী।