অমর একুশে বইমেলা চলে মাস জুড়ে। তবে প্রকাশক ও প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মীদের নজর থাকে সাপ্তাহিক ছুটি বা অন্য কোনো সরকারি বন্ধের দিনের দিকে। বিশেষত শুক্রবার ও শনিবারের অপেক্ষায় থাকেন তারা। সপ্তাহের অন্যান্য দিন মেলা ছয় ঘণ্টা চললেও এই দুদিন মেলা চলে ১২ ঘণ্টা। তাই মেলা হয় জমজমাট। আর বই বিক্রিও হয় সর্বোচ্চ সংখ্যায়।
ঐতিহ্য প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী মো. সোলাইমান বলেন, ‘মেট্রো রেলের সুবিধা এবং ছুটির দিন থাকায় শুক্র-শনি একটু বেশি জমে ওঠে মেলা। পাঠক সমাগম বেশি হয়। বইয়ের বিক্রিও বাড়ে। তাই এই দুদিনকে কেন্দ্র করে আমাদের মধ্যে একটু আগ্রহ বেশি কাজ করে।’
অক্ষর প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী হাসিবুল হক বলেন,’ শুক্রবার ও শনিবারকে কেন্দ্র করে আমাদের অনেক বই আনা হয়। যেসব বইয়ের স্টক শেষ হয়ে গেছে সেগুলোর স্টক পূরণ করা হয়। বিক্রির চাহিদাও বেশি থাকে। বলা যায়, পুরো সপ্তাহ আমরা অপেক্ষা করি এই দুদিনের জন্য।
আগামী প্রকাশনীর বিক্রয় প্রতিনিধি তানজিম হাসান তারেক বলেন, ‘শুক্রবার ও শনিবার সকাল ৯টায় মেলা শুরু হয়। স্বাভাবিকভাবেই এই দুদিন বিক্রি ও পাঠক সমাগম বেশি হয়। প্রকাশকরা তো অবশ্যই এরকম কোনো দিনের অপেক্ষায় থাকবেন। কয়েকদিন পরপরই শুক্র ও শনিবার নিয়ে আনতে পারলে প্রকাশকদের মতো খুশি মনে হয় না আর কেউ হবে। আর এই দুদিনে ফুরিয়ে যাওয়া বইয়ের স্টক পূরণ করা হয়।’
অন্বেষা প্রকাশনীর সিইউ ফাতেমা বুলবুল বলেন, শুক্রবার এবং শনিবারকে কেন্দ্র করে আমাদের বইগুলো দ্রুত নিয়ে আসার চেষ্টা করি।’
শোভা প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী প্রসেনিজৎ চন্দ্র শীল বলেন, এই দুইদিন ছুটির দিন হওয়ায় সবাই বাসায় থাকে। আর মেট্রো রেল হওয়াতে কর্মজীবীরা খুব দ্রুত এবং সহজে মেলায় চলে আসতে পারেন। আর এই দুদিন ভালোই মেলা জমবে।’
মাওলা ব্রাদার্সের বিক্রয় প্রতিনিধি শামিম ইসলাম বলেন, ‘অবশ্যই এই দুটি দিনকে কেন্দ্র করে একটু আলাদা চিন্তা থাকে। যেসব বই বেশি চলতে পারে বলে মনে করা হয় সেসবের স্টকটা একটু বেশি রাখা হয়।’
বুধবার মেলার সপ্তম দিনে নতুন বই এসেছে ৬৯টি।
এদিন বিকেল ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘স্মরণ: গোবিন্দ চন্দ্র দেব’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক প্রদীপ কুমার রায়। আলোচনায় অংশ নেন জয়দুল হোসেন ও সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক।
প্রাবন্ধিক বলেন, ড. গোবিন্দ চন্দ্র দেব নানা অভিধায় অভিহিত ছিলেন। তিনি একদিকে ছিলেন অনন্য চিন্ত্যক, দর্শনের অধ্যাপক, সর্বজনীন প্রেম ও প্রজ্ঞার এক বিরল ব্যক্তিত্ব, সর্বোপরি একজন উঁচুস্তরের মানবিক গুণসম্পন্ন মানুষ। তার চিন্তার পরিসর ছিল সর্বব্যাপী, তা ছিল মানবতা ও বিশ্বপ্রেম-রসে জারিত।
আলোচকবৃন্দ বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চে বর্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে নির্মমভাবে নিহত হওয়ার আগ পর্যন্ত গোবিন্দ চন্দ্র দেব মানুষের মঙ্গলের জন্য কাজ করে গেছেন।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক বলেন, ড. গোবিন্দ চন্দ্র দেব একজন স্মরণীয় বাঙালি। যুক্তি, বুদ্ধি, বিবেক ও গভীর দার্শনিক দৃষ্টি দিয়ে জীবন ও জগতকে প্রত্যক্ষ করেছেন তিনি। তার জীবন, কর্ম ও দর্শন তরুণ প্রজন্মের জন্য অনুকরণীয় হয়ে থাকবে।
লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কথাসাহিত্যিক ও নাট্যকার ইসহাক খান, প্রাবন্ধিক ও গবেষক মিল্টন বিশ্বাস, শিশুসাহিত্যিক সারওয়ার-উল ইসলাম এবং কবি মেঘ অদিতি ।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি বিমল গুহ, শিহাব সরকার এবং টোকন ঠাকুর। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী মীর বরকত, কাজী মাহতাব সুমন এবং অনন্যা লাবণী।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে পুথি পাঠ করেন জালাল খান ইউসুফী। এছাড়াও ছিল নূরননবী শান্তের পরিচালনায় ‘ভাবনগর ফাউন্ডেশন’ পরিবেশিত চর্যাপদের গান এবং সাকিবুল ইসলামের পরিচালনায় নৃত্যসংগঠন ‘মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি একাডেমী’র পরিবেশনা।
বৃহস্পতিবারের সময়সূচি
বইমেলার অষ্টম দিন বৃহস্পতিবার মেলা শুরু হবে বিকেল ৩টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। এদিন বিকেল ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘স্মরণ: আহমদ শরীফ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান।