বঙ্গোপসাগরের নোনা জলে পুণ্যস্নানের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে সুন্দরবনের দুবলার চরের রাস উৎসব। সোমবার সকালে স্নান ও পূজা-অর্চনার পরই এবারের মিলন মেলায় সমাপ্তি টানা হয়। এর আগে শনিবার শুরু হয় রাস পূজা।
বাগেরহাটের মোংলা উপজেলা সদর থেকে সুন্দরবনের দুবলার চরের দূরত্ব প্রায় ৮৫ কিলোমিটার। জলপথে এই দূরত্ব পাড়ি দিয়ে এবারের রাস উৎসবে ২৫ হাজারের বেশি সনাতন ধর্মাবলম্বী পুণ্যার্থী অংশগ্রহণ করেন।
রাস পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ বসু সন্তু এই তথ্য জানিয়ে বলেন, ‘খুবই শান্তিপূর্ণভাবে রাস উৎসব শেষ হয়েছে। পুণ্যার্থীরা নির্বিঘ্নে পূজা-অর্চনা ও পুণ্যস্নান করেছেন। তবে ভক্ত ও পুণ্যার্থীদের দাবি অনুযায়ী পূজার পাশাপাশি আগের মতো কবিগান, শাস্ত্রীয় গান ও ধর্মীয় আলোচনার ব্যবস্থা থাকলে আরও ভাল হতো।’
রাস পূজায় অংশ নেয়া অর্ণব তালুকদার বলেন, ‘প্রথমবার রাসে এসেছি। খুবই ভাল লেগেছে। তবে একটু কবিগান ও শাস্ত্রীয় গানের ব্যবস্থা থাকলে আয়োজন পূর্ণাঙ্গ হতো।’
খুলনার রূপসা এলাকার কাকলী দেবনাথ বলেন, ‘লঞ্চে যাত্রা ও থাকায় কিছুটা কষ্ট হলেও সার্বিক ব্যবস্থা ছিল খুব ভাল। আমাদের খুব ভাল লেগেছে। আবারও এই আয়োজনে আসার ইচ্ছে আছে।’
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মো. নূরুল করিম বলেন, ‘রাস পূজা উপলক্ষে বন বিভাগের টহল জোরদার করা হয়েছিল। সবকিছু সঠিকভাবেই হয়েছে। কোনোরকম অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।’
প্রসঙ্গত, দুবলার চরের রাস উৎসব নিয়ে নানা মত প্রচলিত আছে। জানা গেছে, ঠাকুর হরিচাঁদের অনুসারী হরি ভজন নামে এক হিন্দু সাধু মেলার শুরু করেছিলেন ১৯২৩ সালে। এই সাধু চব্বিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে সুন্দরবনে গাছের ফল-মূল খেয়ে জীবন ধারণ করেন।
আবার কারও কারও মতে, শারদীয় দুর্গোৎসবের পর পূর্ণিমার রাতে বৃন্দাবনবাসী গোপীদের সঙ্গে রাস নৃত্যে মেতেছিলেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অবতার শ্রীকৃষ্ণ। এটিকে স্মরণ করেই দুবলায় আয়োজিত হয়ে আসছে রাস উৎসব।
অনেকে এটাও মনে করেন, শ্রীকৃষ্ণ কোনো এক পূর্ণিমা তিথিতে পাপ মোচন ও পুণ্যলাভে গঙ্গাস্নানের স্বপ্নাদেশ পান। তার স্বপ্নাদেশকে সম্মান জানাতে প্রতিবছর দুবলার চরে বসে রাসমেলা।