লেখাটা কার ঠিক মনে নেই। কেউ একজন ‘মায়া’ শব্দটির ব্যখ্যা দিয়ে বলেছিলেন, ‘বছরের পর বছর একই সঙ্গে থেকেও অনেকের প্রতি মায়া জন্মায় না। আবার কথা না বলা প্রাণীটাও জীবন হয়ে যায়।’
যারা পশুপাখি ভালোবাসেন, তারা ছোট্ট এ দুটি বাক্যের মরমার্থ কত বড় সেটা ধরতে পারবেন।
পোষা হোক কিংবা বন্য, পশুপাখি কথা বলতে না পারলেও তাদেরও অনুভূতি, চাহিদা ও অধিকার আছে। আর তাই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে প্রাণীদের অনুভূতিগুলো বোঝা, এদের চাহিদা ও অধিকারগুলো নিশ্চিত করা মানুষের দায়িত্ব।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রতি বছর পালিত হয় বিশ্ব প্রাণী দিবস।
প্রাণী দিবস কী?
প্রতি বছর ৪ অক্টোবর প্রাণীদের অধিকার ও কল্যাণ নিশ্চিত করতে এবং প্রাণীদের প্রতি সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালন করা হয়।
বিশ্ব প্রাণী দিবসের আনুষ্ঠানিক ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী এ দিবসের মূল লক্ষ্য হলো, পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তে প্রাণীদের কল্যাণের মাধ্যমে এদের অবস্থার উন্নতি করা। এ ছাড়াও পরিবেশে প্রাণীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা, তাদের রক্ষা ও যত্নে যা যা করণীয় তা নিয়ে আলোচনার একটি বিশেষ দিন এটি।
জাতি, ধর্ম, বিশ্বাস বা রাজনৈতিক মতাদর্শ নির্বিশেষে দিবসটিকে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ভাবে পালন করা হয়।
ডেস অফ দি ইয়ারের তথ্য অনুযায়ী, ১৯২৫ সালে প্রথম জার্মান লেখক ও প্রকাশক হেনরীক জিম্মারমেন একটি ম্যাগাজিনে প্রথম বিশ্ব প্রাণী দিবসের ধারণাটি প্রকাশ করেন। ম্যাগাজিনটির নাম ছিল ‘মেন্স উন্ড হুন্দ’ (মানুষ ও কুকুর)। তিনি ১৯২৫ সালের ২৪ মার্চ জার্মানির বার্লিন স্পোর্ট প্যালেসে দিবসটি উদযাপন করেন। পাঁচ হাজারেরও বেশি লোক ওই অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন।
১৯২৯ সালে প্রথমবারের মতো ৪ অক্টোবর বিশ্ব প্রাণী দিবস পালন করা হয়।
বিশ্ব প্রাণী দিবস ২০২৩-এর বার্তা
‘গ্রেট অর স্মল, লাভ দেম অল।’ অর্থাৎ বড় বা ছোট, তাদের (প্রাণী) সবাইকে ভালোবাসুন।
আসুন প্রাণিবন্ধু হই
প্রাণীদের প্রতি সদয় হতে ও ভালোবাসতে বিশেষ দিনের প্রয়োজন নেই। শুধু প্রাণী দিবস নয়, যেকোনো সময়ে সাধ্য ও সামর্থ্যের মধ্যে সামান্য কিছু পদক্ষেপ নেয়া যায়, যেমন:
রাস্তাঘাটের অসুস্থ, আহত, নিপীড়িত কুকুর, বিড়াল, পাখি দেখলে উদ্ধার করে তাদের চিকিৎসা ও খাদ্যের ব্যবস্থা করা।
অনেকেই অর্থ খরচ করে বিদেশি কুকুর, বিড়াল কিনে থাকেন পালার জন্য। এটা না করে বরং পথের অসহায় প্রাণীদের লালন-পালনের দায়িত্ব নিতে পারেন। আপনিও একজন সঙ্গী পেলেন, সেও একটি ঘর পেল।
এ ছাড়াও যেসব সংগঠন প্রাণীদের নিয়ে কাজ করছে তাদের বিভিন্নভাবে সহায়তা করতে পারেন।
কোনো ক্ষুধার্থ প্রাণী আপনার কাছে আসলে অবশ্যই তাকে খাবার দেয়ার চেষ্টা করবেন।
এভাবে ছোট কিছু ভালো কাজের প্রভাব হতে পারে অনেক বড়।
লেখক ও কবি অ্যাথি থম্পসন প্রাণী নিয়ে লেখা তার একটি কবিতায় বলেছেন, ‘যখন কিছুই দেয়ার থাকবে না, তোমার হৃদয়ভরা ভালোবাসা আর মৃদু স্পর্শই তখন আমার (প্রাণী) জন্য হতে পারে অনেক কিছু।’
তাই আসুন প্রাণিবন্ধু হই। এদের ভালোবাসি, ভালোবাসতে ক্ষতি নেই।