স্বাভাবিকভাবে সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতেই সিলেটে ঢল নামে পর্যটকের। বাড়তি ছুটি পেলে তো কথাই নেই। পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে থাকে ভিড়ে ভিড়াক্কার চিত্র। তিনদিনের টানা ছুটি মিলে যাওয়ায় ব্যতিক্রম হচ্ছে না এবারও।
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবির (সা.) ছুটি বৃহস্পতিবার। আর পরের দুদিন শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি। ফলে টানা তিনদিনের ছুটি পেতে যাচ্ছেন চাকরিজীবীরা। আর এই ছুটিতে সিলেটে ঢল নামতে যাচ্ছে পর্যটকের। ইতোমধ্যে সিলেটের হোটেল-মোটেল, রিসোর্টগুলোর ৯০ শতাংশ কক্ষ আগাম বুকিং হয়ে গেছে।
দেশের অন্যতম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত জনপদ সিলেট। এখানকার হাওর, পাহাড়, ঝর্ণা, নদী দেখতে সারাবছরই ভিড় করেন পর্যটকরা। আর কোনো উৎসব বা দীর্ঘ ছুটিতে রীতিমতো পর্যটকের ঢল নামে। হোটেল-রিসোর্টগুলোতে কক্ষ খালি পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়ে। জাফলং, বিছনাকান্দি, পাংথুমাই, লালাখাল, সাদপাথর এলাকা পর্যটকের পদভারে হয়ে ওঠে মুখর।
বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত টানা তিন দিনের ছুটির কারণে সিলেটে লাখো পর্যটকের সমাগম হবে বলে আশা করছেন পর্যটন খাতের উদ্যোক্তারা।
সিলেটের হোটেল-মোটেল ব্যবসায়ী ও পর্যটন-সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৫ দিন ধরেই বিভিন্ন মাধ্যমে সিলেটের হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টগুলো বুকিং দিয়ে রাখছেন পর্যটকরা। ইতোমধ্যে ৯০ শতাংশই বুকিং হয়ে গেছে। বিশেষত বড় হোটেল ও রিসোর্টগুলোর কোনো কক্ষ ফাঁকা নেই। কক্ষ ফাঁকা না থাকায় মঙ্গলবার অনেক পর্যটক ফোন করলেও তাদের ফিরিয়ে দিতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিলেটের দুটি রিসোর্টের সংশ্লিষ্টরা।
সিলেট বিভাগে ৫ শতাধিক হোটেল, মোটেল ও রিসোর্ট রয়েছে। এগুলোর বেশিরভাগই পর্যটকনির্ভর। এখানকার প্রধানতম পর্যটন কেন্দ্র জাফলং। জাফলংকে বলা হয় প্রকৃতি-কন্যা। ভারতের মেঘালয়ের পাহাড়, ঝর্ণা ও পাহাড় থেকে নেমে আসা নদী, খাসিয়া পল্লী দেখতে সারা বছর ভিড় করেন পর্যটকরা।
জাফলংয়ের গুচ্ছগ্রাম এলাকার গ্রিন ভিউ রিসোর্টের স্বত্বাধিকারী বাবুল আহমদ বলেন, ‘বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্র ও শনিবার আমাদের রিসোর্ট খালি থাকে না। এবার একদিন বাড়তি ছুটি থাকায় সপ্তাহখানেক আগেই সব কক্ষ বুকিং হয়ে গেছে। ফলে এখন অনেকে ফোন করলেও তাদের ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে।’
নগরের জিন্দাবাজার এলাকার হোটেল গোল্ডেন সিটির ব্যবস্থাপক মিষ্ঠু দত্ত বলেন, সারাবছরই আমরা এরকম বাড়তি ছুটি এবং উৎসবের জন্য অপেক্ষায় থাকি। এরকম সুযোগে পর্যটকরা বেশি আসেন। তাছাড়া এখন সিলেটের আবাহাওয়াও অনুকুলে আছে। প্রচুর বৃষ্টিপাত হচ্ছে। তাই এখন সিলেট ঘুরে বেড়ানোর উপযুক্ত সময়। আগামী তিনদিন সিলেটে প্রচুর পর্যটক থাকবেন বলে আশা করছি। ইতোমধ্যে আমাদের হোটেলের বেশিরভাগ কক্ষ বুকিং হয়ে গেছে।
তিনদিনের ছুটিতে সিলেটে লাখখানেক পর্যটক সমাগমের আশা প্রকাশ করেন সিলেটের হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমাত নুরী জুয়েল। তিনি বলেন, ‘পর্যটকের ভিড় বাড়লে সংশ্লিষ্ট সবাই লাভবান হন। গাড়িচালক, নৌকার মাঝি, রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে মুদি দোকানি সবাই। ফলে আমাদের সবাইকে পর্যটকদের সমাদর করা উচিত।’
তিনি বলেন, ‘আগামী তিনদিন সিলেটের হোটেল-মোটেলে ভালো ব্যবসা হলেও এবার পর্যটনের ভরা মৌসুমে পর্যটক সমাগমের আশা কম। কারণ নভেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে নির্বাচনী ডামাডোল ও রাজনৈতিক সহিংসতার শঙ্কা রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে অনেকেই হয়তো বেড়াতে বের হতে উৎসাহিত হবেন না।’
পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয় নিয়ে কথা হয় ট্যুরিস্ট পুলিশের সিলেট রিজিওনের এসপি মো. বেলাল হোসেন বলেন, ‘সাপ্তাহিক ও বিভিন্ন ছুটির সময় সিলেটে পর্যটকের ভিড় থাকে। এসব দিনে পর্যটকদের নিরাপত্তায় এখানে বিশেষভাবে সতর্ক ও প্রস্তুত থাকে ট্যুরিস্ট পুলিশ। আগামী তিন দিনও এর ব্যতিক্রম হবে না।
‘স্বল্পসংখ্যক জনবল নিয়েও সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে আমরা পর্যটকদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিতে সচেষ্ট থাকব। প্রয়োজনে স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা নেয়া হবে।’
সিলেটের সবচেয়ে বেশি পর্যটন কেন্দ্র গোয়াইনঘাট উপজেলায়। জাফলং ছাড়াও দেশের দুর্লভ জলার বন রাতারগুল, পাথরের বিছানা বিছানো বিছনাকান্দি, স্বচ্ছ জলের লালাখাল, পাহাড়ি ঝর্ণার পাংথুমাইয়ের অবস্থান এই উপজেলায়ই। অবশ্য এখানকার খরস্রোতা নদীগুলোতে দুর্ঘটনায় পর্যটকের প্রাণহানি ঘটনাও ঘটে সবচেয়ে বেশি।
তবে পর্যটকদের সতর্ক করতে প্রশাসন তৎপর থাকবে জানিয়ে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তবিবুর রহমান বলেন, ‘পর্যটকদের নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সাঁতার না জানা কেউ যাতে পানিতে না নামেন এ ব্যাপারে স্বেচ্ছাসেবীরা প্রচার চালাবে।’