বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

তেঁতুল: অনেক উপকারের পাশাপাশি রয়েছে কিছু সতর্কতাও

  •    
  • ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ২০:৪৪

নানা উপকারিতা থাকলেও পরিমাণ না বুঝে বা শরীরের অবস্থা না বুঝে তেঁতুল খেলে হতে পারে হিতে বিপরীত।

তেঁতুলের স্বাদ পছন্দ করেন না, নাম শুনলেই মুখে পানি আসে না, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুস্কর। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে টক-মিষ্টি এ ফলটি সবারই পছন্দের।

ফুচকার টক বা দই বড়ার স্বাদ বাড়ানো, গরমে প্রাণ জুড়ানো শরবৎ কিংবা গরম গরম তেঁতুল চা, যাই বলেন না কেন, মুখের স্বাদ বাড়াতে তেঁতুল সেরা। এছাড়া চাটনি, সস ও বিভিন্ন রান্নার স্বাদ বাড়াতে এর জুড়ি নেই।

আজকে লিখব নারী-পুরুষ, বুড়ো-গুড়ো নির্বিশেষে সবার পছন্দের তেঁতুল নিয়ে। চলুন শুরুতে জেনে নেই তেঁতুলের উপকারিতা নিয়ে।

তেঁতুল পরিচিতি

টক-মিষ্টি স্বাদের একটি ফল হল তেঁতুল। বাইরের শক্ত খোলসের ভেতরে বীজসহ রসালো এ ফল দেখতে অনেকটাই খেজুরের মতো। কাঁচা অবস্থায় টক হলেও, পাকার সঙ্গে সঙ্গে মিষ্টতা আসে এ ফলে।

তেঁতুল সাধারণত একটি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ফল। তেঁতুল ব্যবহারের সবচেয়ে জনপ্রিয় উপায় হল ফলটি থেকে রস বের করে তা ব্যবহার করা। এ ছাড়াও তেঁতুলের গুঁড়া, পেস্ট ও এর বীজেরও বিভিন্ন ব্যাবহার রয়েছে।

তেঁতুলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি, ভিটামিন সি, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও অন্যান্য পুষ্টিগুণ পাওয়া যায়। তাই তো শুধু মুখের স্বাদ বৃদ্ধি নয়, শারীরিক অনেক ক্ষেত্রেও উপকারি ভূমিকা রাখে জিভে জল আনা এ ফল।

তেঁতুলের পুষ্টিগুণ

স্বাদে টক-মিষ্টি তেঁতুলের রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ। প্রতি ১০০ গ্রাম পরিমাণ তেঁতুলে কতটা কী কী পুষ্টিগুণ রয়েছে, চলুন দেখে নেই এক নজরে-

  • ২.৩ গ্রাম প্রোটিন
  • ৬২.৩ গ্রাম শর্করা
  • ৫.১ গ্রাম ফাইবার (আশ)
  • ০.৬ গ্রাম ফ্যাট (চর্বি)
  • ১.৯ মিলিগ্রাম নিয়াসিন (ভিটামিন বি৩)
  • ১৪ মাইক্রোগ্রাম ফোলেট (ফলিক অ্যাসিড)
  • ৩.৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি
  • ৬২৭ মিলিগ্রাম পটাসিয়াম
  • ৭৪ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম
  • ৯২ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম
  • ২.৮ মিলিগ্রাম আইরন

এ ছাড়াও আরও অন্য বিভিন্ন পুষ্টিগুণ পাওয়া যায় তেঁতুলে যা আপনার শরীরের জন্য যথেষ্ট উপকারী।

তেঁতুলের উপকারিতা

কাঁচা তেঁতুল পছন্দ করেন বা তেঁতুলের শরবৎ, যেভাবেই খেতে পছন্দ করেন, তেঁতুল খেয়ে দিনশেষে নিজের শরীরের অনেক উপকার করছেন আপনি।

  • তেঁতুলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আপনার শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলে শারীরিক ফিটনেস বজায় রাখতে সাহায্য করে।
  • ২০১৪ সালের একটি গবেষণা থেকে জানা যায়, তেঁতুলে রয়েছে ক্যান্সার প্রতিরোধ করার উপাদান। এ ছাড়া তেঁতুলের বীজে রয়েছে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস মার্কারকে হ্রাস ও রেনাল সেল কার্সিনোমার অগ্রগতিকে ধীর করে দেয়ার ক্ষমতা। এর ফলে শরীরে ক্যান্সারের সেল উৎপাদনের হার কমে যায়। সেইসঙ্গে স্ট্রেস হরমোনও নিয়ন্ত্রণে থাকে।
  • আপনার হৃদযন্ত্রকে ভালো রাখতে ও শরীরের খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে তেঁতুল। তেঁতুলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পলিফেনল ও ফ্ল্যাভোনয়েড, যা শরীরে খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে ও ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। এতে এথেরোস্ক্লেরোসিসের (ধমনীতে চর্বির স্তর জমা) ঝুঁকি কমে যায়।
  • যাদের ফ্যাটি লিভারের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য বেশ উপকারী একটি খাবার হলো তেঁতুলের রস। বিভিন্ন গবেষণা বলে, তেঁতুলে প্রোসায়ানিডিন নামক একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা লিভারের ক্ষতি হওয়া থেকে লিভারকে রক্ষা করে।
  • তেঁতুলে রয়েছে জীবাণু রোধকারী ক্ষমতা। প্রাকৃতিক জীবাণুনাশক হিসেবে তেঁতুলে রয়েছে বিভিন্ন উপাদান, যা প্যাথোজেনিক অণুজীব থেকে আপনাকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
  • বিভিন্ন গবেষণা ও পুষ্টিবিদদের দাবি, রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে বেশ উপকারী তেঁতুল। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যে যা বিশেষ উপকারী।

মস্তিষ্ক ও হাড়ের রক্ষায় তেঁতুলের উপকারিতা রয়েছে। ভিটামিন বি ও ম্যাগনেসিয়ামে ভরপুর তেঁতুল আপনার মস্তিস্ক ও হাঁড়ের কার্যকারিতা ঠিক রাখতে ও তাদের রক্ষা করতে সাহায্য করে।

তেঁতুলের অপকারিতা

নানা উপকারিতা থাকলেও পরিমাণ না বুঝে বা শরীরের অবস্থা না বুঝে তেঁতুল খেলে হতে পারে হিতে বিপরীত।

অতিরিক্ত তেঁতুল খেলে কী কী সমস্যা দেখা দিতে পারে, চলুন একটু নজর বুলিয়ে নেই।

  • আপনার যদি অ্যালার্জির সমস্যা থাকে বা ফল খেলে অ্যালার্জি হয়, তবে তেঁতুল খেলে আপনি বিপাকে পড়তে পারেন।
  • তেঁতুলে অ্যাসিডের পরিমাণ বেশি থাকায় অনেকেই তেঁতুল খেলে দাঁতের সমস্যায় ভুগে থাকেন বলে জানান দন্ত চিকিৎসকরা।
  • তেঁতুলে অ্যাসিড বেশি থাকে। তাই অনেক সময় তেঁতুল খেলে অ্যাসিডিটির সমস্যায় পড়তে পারেন।
  • যাদের ভাসোকনস্ট্রিকশনের (রক্তনালীর সঙ্কীর্ণ হয়ে যাওয়ার রোগ) সমস্যা রয়েছে, তাদের সম্পূর্ণভাবে তেঁতুল এড়িয়ে চলা উচিত।
  • তেঁতুল যেহেতু রক্তচাপ কমিয়ে দিতে সাহায্য করে, তাই নিম্ন রক্তচাপ যাদের রয়েছে, তাদের তেঁতুল এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।
  • যাদের হজমের সমস্যা রয়েছে, তাদের তেঁতুল খেলে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থাকলে বা এর জন্যে যদি কোনো ওষুধ খেয়ে থাকেন, তবে অবশ্যই তেঁতুল এড়িয়ে চলুন।
  • গর্ভবতী অবস্থায় বা যারা শিশুকে বুকের দুধ পান করান, তাদের তেঁতুল খাওয়ার বিষয়ে বিশেষ সতর্কতা মেনে চলা উচিত বা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তা খাওয়া উচিত।

সর্বোপরি রোজ রোজ তেঁতুল খাওয়া গেলেও তা পরিমাণের মধ্যে রাখার চেষ্টা করুন। শারীরিক কোনো সমস্যা থাকলে পুষ্টিবিদ বা চিকিৎসকের সঙ্গে আলাপ করে নিন। এতে তেঁতুলের সর্বোচ্চ উপকারিতা নিতে পারবেন আপনি।

এ বিভাগের আরো খবর