বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

স্ন্যাগস বা বন্যপ্রাণীর বৃক্ষ কী, কেন প্রয়োজন

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফর্নিয়ার পরিবেশ বিশেষজ্ঞ অ্যান্ড্রু উয়েন ‘লাইফ আফটার ডেথ’ শিরোনামের এক প্রতিবেদনে গবেষণার বরাত দিয়ে লিখেন, একটি গাছ প্রকৃতপক্ষে জীবিত থাকার চেয়ে মৃত অবস্থায় বন্যপ্রাণীদের অধিক বাসস্থান তৈরি করতে পারে। দাঁড়িয়ে থাকা মৃত গাছকে ‘ট্রি স্ন্যাগস’ বা বন্যপ্রাণীর গাছ বলা হয়।

বাকলে গর্ত বা ফাটল। শুকিয়ে গেছে কাণ্ড বা শাখার অংশ। পাতা বিবর্ণ কিংবা দাগযুক্ত। কাণ্ডে গজিয়েছে মাশরুম বা অন্যান্য ছত্রাক। মাটি থেকে শিকড় বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।

গাছের এমন চিত্র দেখলে মনে হয় এটি মৃত। অনেকেই হয়তো ভাবেন, প্রকৃতিকে তার দেয়ার মতো আর কিছু নেই, কিন্তু জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ওয়াইল্ড লাইফ রেসকিউ সেন্টার (ডব্লিউআরসি) পরিদর্শন করে এ বিষয়ে নতুন কিছু জানার সুযোগ হলো।

জাবির প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ওয়াইল্ড লাইফ রেসকিউ সেন্টার বা ডব্লিউআরসি দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র প্রাণী উদ্ধার ও সংরক্ষণ কেন্দ্র। ২০০৪ সালে অধ্যাপক মোস্তফা ফিরোজের উদ্যোগে ডব্লিউআরসি গঠন করা হয়। এখানে প্রকৃতিকে নিজের মতো করে গড়তে দেয়া হয়েছে।

সেন্টারটি গাছপালা ও প্রাণীদের নিরাপদ আবাসস্থল। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের পাশাপাশি এখানে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ।

প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল হাসানের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ডব্লিউআরসিতে প্রায় ১০০ প্রজাতির গাছ আছে। এখানে প্রকৃতি যে পরিবেশ তৈরি করেছে, তাতে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করা হয় না।

তিনি বলেন, ‘এখানে মৃত গাছগুলো রেখে দেয়া হয়; কেটে ফেলা হয় না। এগুলো প্রকৃতিতে অন্যান্য প্রাণী, পোকামাকড়ের আবাসস্থল অথবা খাবারের জোগান দেয়।’

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফর্নিয়ার পরিবেশ বিশেষজ্ঞ অ্যান্ড্রু উয়েন ‘লাইফ আফটার ডেথ’ শিরোনামের এক প্রতিবেদনে মৃত গাছের কিছু উপকারিতা ব্যাখ্যা করেন।

গবেষণার বরাত দিয়ে তিনি লিখেন, একটি গাছ প্রকৃতপক্ষে জীবিত থাকার চেয়ে মৃত অবস্থায় বন্যপ্রাণীদের অধিক বাসস্থান তৈরি করতে পারে। দাঁড়িয়ে থাকা মৃত গাছকে ‘ট্রি স্ন্যাগস’ বা বন্যপ্রাণীর গাছ বলা হয়।

তার গবেষণায় বলা হয়, বিভিন্ন ধরনের পাখি, বাদুড়, কাঠবিড়ালী ও ইঁদুরসহ অনেক প্রাণী ফাঁপা গহ্বর ও মৃত কাঠের ফাটলে বাসা তৈরি করে। অন্যান্য শিকারি প্রাণীর হাত থেকে বাঁচতেও তারা এসব গহ্বরে আশ্রয় নিতে পারে।

ওই প্রতিবেদনে মৃত গাছ সম্বন্ধে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় তুলে ধরা হয়, যেগুলো নিচে দেয়া হলো।

  • মৃত গাছ পোকামাকড়, শ্যাওলা ও ছত্রাককে আকৃষ্ট করে, যা বন্যপ্রাণীদের খাবারের উৎস হয়।
  • পাতাহীন মৃত গাছের উঁচু শাখাগুলো থেকে পাখিরা সম্ভাব্য শিকার বা অন্যান্য শিকারিকে শনাক্ত করতে পারে।
  • এ ছাড়া শ্যাওলা, ছত্রাক ও খালি চোখে দেখা না যাওয়া অণুজীব এসব মৃত গাছগুলোতে বৃদ্ধি পায় এবং মাটিতে গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি ফেরাতে সাহায্য করে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়াইল্ড লাইফ রেসকিউ সেন্টার (ডব্লিউআরসি)। ছবি: নিউজবাংলা

‘লাইফ আফটার ডেথ’ শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়, মৃত গাছের আশপাশে কিছু বন্যপ্রাণী বা পাখি বেশি দেখা যায়। যেমন:

কাঠঠোকরা: এ পাখি গাছের মধ্যে ছিদ্র করে বাসা তৈরি করে ও এক বাসায় ওরা বেশি দিন থাকে না। এ বাসা পরবর্তী সময় যেসব প্রাণী নিজেদের জন্য কাঠ গর্ত করে বাসা তৈরি করতে পারে না (যেমন: কাঠবিড়ালী, বাদুড়), তাদের উপকারে আসে।

বাজপাখি ও শকুন: গাছের উঁচু শাখায় বসে এরা শিকারকে শনাক্ত করতে পারে, যাকে বলে ‘বার্ডস আই ভিউ’। উঁচু থেকে পাখির চোখে দেখা। যেহেতু মৃত গাছে পাতা থাকে না, ফলে এগুলোতে উঁচুতে বসে নিচে শিকারের গতিবিধি লক্ষ্য করা সহজ হয়।

বলা হয়ে থাকে, ‘ডেড ট্রিজ আর গুড হোম ফর ওয়াইল্ড লাইফ’। একটি বন চিন্তা করলে স্বাভাবিকভাবেই সবুজ গাছপালার কথাই কল্পনায় আসবে, কিন্তু শুকনো ডালপালা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা পাতাহীন মৃত গাছ ছাড়াও বন অসম্পূর্ণ।

এ বিভাগের আরো খবর