এবছরের শুরু থেকেই সারা দেশে হানা দিয়েছে ডেঙ্গু। প্রতিনিয়ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে বেড়েই চলেছে রোগী। সেসঙ্গে বাড়ছে মৃত্যু।
এমন বিপর্যয়কর পরিস্থিতিতে বেশি বেশি ভিটামিনযুক্ত ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। কিন্তু দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে সে সুযোগ থেকেও বঞ্চিত সাধারণ মানুষ। ফলে পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ এখন অনেকের কাছে আকাশ কুসুম চিন্তার মতো।
তবে এ ক্ষেত্রে ধনী-গরীব সবার বন্ধু হয়ে উঠতে পারে কলা। ছোট্ট এ ফলটি পুষ্টিগুণে ভরপুর। আবার দামেও সাশ্রয়ী। ফলে যে কেউ চাইলেই কলা খেয়ে প্রাত্যহিক পুষ্টির চাহিদা মেটাতে পারে স্বল্প খরচেই।
কলা এমন একটি ফল, যা কাঁচা বা পাকা উভয় অবস্থাতেই খাওয়া যায়। বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও সহজলভ্য ফলও এটি।
সারা বিশ্বে পাওয়া গেলেও কলা মূলত বিশ্বের উষ্ণ অঞ্চল, বিশেষ করে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় জন্মে বেশি। এর বিভিন্ন জাত রয়েছে। জাতের ওপর নির্ভর করে এর আকার, রং ও স্বাদে ভিন্নতা আসে।
উজ্জ্বল হলুদ বর্ণের কলা সবচেয়ে জনপ্রিয় হলেও জাতভেদে সবুজ, লাল, খয়েরি ইত্যাদি বিভিন্ন রংয়ে কলা পাওয়া যায়।
কলায় প্রচুর পরিমাণের ফাইবার, পটাশিয়াম, ভিটামিন বি৬, ভিটামিন সি এবং বিভিন্ন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও খনিজ রয়েছে যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী ও গুরুত্বপূর্ণ।
চলুন আজকে জেনে নেই কলা সম্পর্কে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও মজার তথ্য।
পুষ্টি উপাদান
আগেই বলেছি, কলায় রয়েছে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান। একটি মাঝারি আকারের কলার প্রতি একশ গ্রাম কলায় কী পরিমাণ পুষ্টিগুণ রয়েছে, এক নজরে দেখে নেয়া যাক-
- ক্যালোরি ৮৯ গ্রাম
- প্রোটিন ১.১ গ্রাম
- শর্করা ২২.৮ গ্রাম
- ফাইবার ২.৬ গ্রাম
- ফ্যাট ০.৩ গ্রাম
- পানি ৭৫ শতাংশ
কাঁচা ও পাকা অবস্থায় কলার পুষ্টিগুণের ভিন্নতা থাকে।
স্বাস্থ্য উপকারিতা
হার্ট
কলায় থাকে প্রচুর পরিমাণের পটাশিয়াম থাকে যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। আর রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকলে সুস্থ থাকে হৃৎপিণ্ড। ফলে স্ট্রোকের ঝুঁকিও কমে। বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা যায়, রোজ একটি কলা খেলে স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে ২৬ শতাংশ।
এছাড়াও কলায় রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ফ্ল্যাভোনয়েড, যা অন্যান্য হৃদরোগজনিত অন্যান্য সমস্যা মোকাবিলায় সহায়ক।
হজম বা পরিপাক
কলায় পাওয়া যায় ডায়েটারি ফাইবার (হজমে সহায়তাকরী আঁশ) যা পেটের হজম ক্ষমতা বাড়িয়ে পেট পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। অ্যান্টাসিডের চেয়ে বেশি উপকারী এই উপাদান।
বিভিন্ন গবেষণা জানায়, যাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা আছে, তারা রোজ সকালে খালি পেটে দুটি কলা খেলে উপকার পাবেন।
শক্তি
কলা খেলে তাৎক্ষণিক শক্তি পাওয়া যায় শরীরে।
ন্যাচারাল সুগার, সল্যুবল ফাইবার ও পটাশিয়াম থাকায় অ্যানার্জি ড্রিঙ্কস বা যেকোনো অ্যানার্জি বুস্টারের চেয়ে অনেক বেশি শক্তি জোগায় কলা। সেইসঙ্গে এটি সম্পূর্ণভাবে প্রাকৃতিক একটি খাবার।
ক্যান্সার
পাকা কলায় রয়েছে টিউমর নেক্রোসিস ফ্যাক্টর যা প্রাকৃতিকভাবে রক্তে শ্বেতকণিকা বাড়াতে সাহায্য করে।
এতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। ফলে শরীরে ক্যান্সারের কোষের বৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত হয়।
স্ট্রেস বা চাপ নিয়ন্ত্রণে
কলায় আছে অ্যামাইনো অ্যাসিড ট্রিপটোফ্যান। এটি শরীরে সিরোটোনিমে পরিণত হয়।
সিরোটোনিম একটি নিউরো ট্রান্সমিটার, যা স্ট্রেস কমিয়ে মন ভালো রাখতে সাহায্য করে। বলা হয় স্ট্রেস কমাতে কলার বিকল্প নেই।
তাই, যখনই অতিরিক্ত চাপ অনুভত করবেন, কলা খান।
কলা নিয়ে কিছু তথ্য
- ফল হলেও কলা পানিতে ভাসে
- বিভিন্ন ডায়েটের জন্য কলা সারা বিশ্বে জনপ্রিয়
- কলা গাছে জন্মালেও এটি একটি ভেষজ
- কলা ‘বেরি’ শ্রেণিবদ্ধ ফল
- উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে কলা
- কলায় ছালে চুল্কানি বা প্রদাহ কমানোর ক্ষমতা আছে
- কলার সঙ্গে মানব ডিএনএর ৫০ শতাংশ মিল রয়েছে
- দুপুর বা রাতের চেয়ে সকালে কলা খেলে বেশি উপকার পাওয়া যায়
- কলা মূলত অনুর্বর। আজকে আপনি যে কলা খাচ্ছেন, জিনগতভাবে সেই একই কলা আপনার দাদাও খেয়েছেন।