বাঙালির রান্না বলে কথা। তেল-মশলা দিয়ে রান্না না করলে চলে? মুখের স্বাদ বলে কথা!
তরকারি হোক বা ভাজাপোড়া, বেশি করে তেল দিয়ে, নানান মশলার মেলবন্ধন করে, সুস্বাদু সব খাবার প্রিয়জনদের সামনে পরিবেশন করতে পছন্দ করেন বাঙালি নারীরা। অবশ্য, বর্তমানে পুরুষরাও পিছিয়ে থাকছেন না এ ক্ষেত্রে।
খাদ্য নিয়ে খুব সচেতন নন যেসব পরিবার তাদের ঘরে এ চিত্র রোজকার।
কর্মব্যস্ত দিনগুলোতে বাইরে থেকে ফেরা, সারাদিনের ক্লান্ত প্রিয়জনকে গরম গরম ধোঁয়া ওঠা এক কাপ চা বা কফির সঙ্গে গরম গরম ভাজাপোড়া নাস্তা দিয়ে চাঙ্গা করতে পছন্দ করেন না, এমন মানুষ পাওয়া দায়।
সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলতেও পরিবারের সকলে মিলে খেতে পছন্দও করেন বিভিন্ন নাস্তা।
আর সম্প্রতি চলছে প্রিও বর্ষাকাল। ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে। আকাশও মেঘলা।
খিচুড়ি যেন খেতেই হবে। আর সকালে বা বিকেলে নাস্তায় থাকতে হবে মুচমুচে ভাজাপোড়া। বৃষ্টির দিনে হাতে এক কাপ গরম ধোঁয়া ওঠা চায়ের সঙ্গে জমে ওঠে গরম গরম বিভিন্ন ভাজাপোড়ার আইটেম। এই না হলো বাঙালি!
তবে এবার একটু মুখের লাগাম টানুন। একে তো তেলের দাম আকাশ ছুই ছুই। তার ওপর সাস্থের কথাটা ভাবছেন কি একটুও?
জানি, স্বাস্থ্য সচেতন হলেও এসব ভাজাপোড়া খেতে মন চায় কম-বেশি সবারই।
বিভিন্ন গবেষণা বলছে, যেই তেলই ব্যাবহার করেন না কেন, রোজকার খাবারে চার থেকে পাঁচ টেবিল চামুচের বেশি তেল ব্যাবহার করা উচিত না একদমই।
ভেবে দেখুনতো বিষয়টি! তেলে ভাজা এতো বাহারি খাবার বাদ দিলে, তেলের খরচ যেমন বেচে যাবে, নিজের শরীরেও দেখবেন অনেক পরিবর্তন।
চলুন এক নজরে দেখে নেই এক মাস তেল খাওয়া বন্ধ করলে কী কী উপকার পাবেন নিজের শরীরের।
হৃদয়ঘটিত উপকারিতা
না না। একদমই ভাববেন না হৃদয় ঘটিত অনুভূতি নিয়ে কিছু বলবো আপনাদের। সে নাহয় অন্য এক দিন সময় নিয়ে আলোচনা করা যাবে।
আজ কথা হবে মানব দেহের হৃদযন্ত্র নিয়ে।
যেসব তেলে ট্রান্সফ্যাট ও স্যাচুরেতটেড ফ্যাটের পরিমাণ বেশি, সেসব তেল যদি নিয়মিতভাবে খাওয়া হয়, তাতে হৃদযন্ত্রজনিত রোগের সমস্যা বাড়তে বাধ্য বলে জানাচ্ছে বিভিন্ন গবেষণা।
এতে মানব শরীরে বেড়ে যায় খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা। তাই খাদ্যে যদি তেলের ব্যাবহার কমানো যায়, তবে আপনি এড়াতে পারবেন হৃদরোগে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি।
কিছুদিন তেল খাওয়ার বিষয়টি এড়াতে পারলে এ অভ্যাস আপনাকে যেমন সুস্থ থাকতে সাহায্য করবে, তেমনি বাঁচিয়ে দেবে আপনার তেলের খরচও।
ওজন নিয়ন্ত্রণের উপকারিতা
ওজন কমিয়ে নিজেকে ফিট রাখতে চান না, এমন কেউ কি আছেন? সম্ভবত না।
আর যাদের ওজন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তারা নিশ্চয়ই চান তা যেন বজায় থাকে লক্ষি বাচ্চার মতো।
যে ক্ষেত্রেই বিবেচনা করি না কেন, ওজন ঠিক রাখতে নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে নিজের ক্যালোরির দিকে।
কষ্ট করে ডায়েট মেনে চলেও অনেকের ওজন কমে না শুধু অপরিমিত তেলের ব্যবহারের কারণে। তাই তেলের ব্যবহার কমাতে পারলে নিয়ন্ত্রণে থাকবে আপনার ওজন। যদি তা একবারে বাদ দিতে পারেন, তাহলে তো সোনায় সোহাগা।
রক্তে কমবে শর্করার মাত্রা
শুধু চিনি খেলে শরীরে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়, এ ধারণাটি ঠিক নয়। তেলের ব্যবহারও অনেকাংশে বাড়িয়ে দেয় শরীরে শর্করার মাত্রা।
পরিশোধিত তেল খাওয়া কমালেও শরীরে শর্করার মাত্রার পরিবর্তন দেখবেন কিছু সময় পর।
এতে বাড়তি শর্করা নেমে আসবে স্বাভাবিক পর্যায়ে।
ত্বকের উপকারিতা
ত্বক যেমনই হোক না কেন, তার যত্ন নেয়ার ক্ষেত্রে সবারই সমান মনোযোগ দেয়া উচিত।
ত্বকের জেল্লা ধরে রাখতে খাবারের গুরুত্ব অসীম। সঠিক খাবার ত্বককে ভেতর থেকে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল করে তা দীর্ঘদিন ধরে রাখে।
খাবারে তেলের ব্যাবহারে ত্বকে প্রদাহ বা ইনফ্লেমেশন হতে পারে। আর এ সমস্যা এড়াতে আপনাকেও খাবারের ক্ষেত্রে এড়িয়ে চলতে হবে যেকোনো তেলের ব্যবহার।
হজমের উপকার
বাসার খাবার খেয়েও অনেকেই ভোগেন এসিডিটির সমস্যায়। আবার অফিসে গিয়ে কলিগদের সঙ্গে জমিয়ে খাচ্ছেন বিভিন্ন ভাজাপোড়া।
ফলে রোজই খেতে হচ্ছে গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ। তাতে পাচ্ছেনও সাময়িক সমাধান।
তবে আমরা কম বেশি সবাই জানি, এ ধরণের ওষুধ নিয়মিত না খাওয়াই ভালো।
এ সমস্যার সমাধানে, বিভিন্ন গবেষণা ও পুষ্টিবিদরা বলছেন তেল বাদ দিতে। এতেই পাওয়া যাবে উপকার, বাড়বে হজম শক্তি।