মানবদেহে পুষ্টির একটি বড় উৎস দুধ। দৈনন্দিন জীবনে ক্যালসিয়ামের প্রধান উৎস হিসেবেও বিবেচনা করা হয় স্নেহজাত এ তরলকে। রাতের ঘুম ভালো করতে এক গ্লাস উষ্ণ দুধ অনেকেরই পছন্দের তালিকায় থাকে। আবার অনেকেই সারাদিন অক্লান্ত থাকতে সকাল সকালই দুধ পান করেন।
নারী-পুরুষ, শিশু বা বয়স্ক, যেকোনো বয়সের সকলেরই পর্যাপ্ত পুষ্টির জন্য প্রতিদিন দুধ খাওয়া প্রয়োজন। তবে অনেকেই এ পুষ্টিকর পানীয় এড়িয়ে যান গ্যাস বা আসিডিটির ভয়ে। আবার সকালে খেলেও একই সমস্যার সম্মুখীন হন তারা।
কেন এ সমস্যা?
বিভিন্ন গবেষণায় পুষ্টিবিদরা জানিয়েছেন, একেকজনের খাদ্য পরিপাক করার ক্ষমতা একেক রকম। দুধ অতি পুষ্টিকর হলেও দুধের মূল উপাদান ল্যাকটোজেন হজম করতে পাকস্থলির যে ক্ষমতা থাকা দরকার, তা অনেকের থাকে না। আবার দুধের সঙ্গে ফল বা তেলমশলা জাতীয় খাবারও খেয়ে থাকেন অনেকে। আর তাতেই বাঁধে বিপত্তি।
যদিও সবাই খাদ্য পরিপাকের সমস্যায় ভোগেন না, তবুও বিপদ এড়াতে কিছু কিছু খাবার দুধের সঙ্গে না খাওয়াই ভালো। তাতে পরিপাকের যেকোনো ঝামেলামুক্ত থাকা যায়।
চলুন, এমন কিছু খাবার সম্পের্কে জেনে নেই, দুধের সঙ্গে যেগুলো খেলে ঘটতে পারে বিপত্তি।
দই
দুধ থেকেই দই হয়। তবে দুগ্ধজাত খাবার হলেও এ দুটির সমন্বয় ঘটানো যাবে না। গবেষণা বলছে, দুধ ও দই একসঙ্গে খাওয়া শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এ দুটি পুষ্টিকর খাবার একসঙ্গে খেলে যাদের গ্যাস বা আসিডিটির সমস্যা আছে, তাদের আরও বেশি অসুবিধায় পড়তে হতে পারে।
টক ফল
সকালে ঘম থেকে উঠে অনেকেই নাশতায় শুধু ফল খেতে পছন্দ করেন। অনেকেই আবার রাতের খাবার না খেয়ে ফল খেয়ে নেন, তারপর এক গ্লাস উষ্ণ দুধ খেয়ে শুয়ে পড়েন।
এই তো নিজের অসাবধানতায় বাধিয়ে ফেললেন বিপদ!
লেবু, কমলা, মাল্টা, আঙ্গুর, আনারসের মতো টক জাতীয় বিভিন্ন ফল সাইট্রিক অ্যাসিডসমৃদ্ধ। এ অ্যাসিড দুধের প্রোটিনকে সহজে হজম হতে দেয় না। ফলে দুধ খাওয়ার আগে-পরে এ ধরণের ফল খেলে ঘটাতে পারে গ্যাস বা পেটব্যাথার মতো সমস্যা।
তাই বিপত্তি ঠেকাতে দুধের সঙ্গে সরাসরি তো নয়ই, দুধ খাওয়ার কমপক্ষে ১ ঘণ্টা আগে ও পরে এড়িয়ে চলুন টকজাতীয় যেকোনো ফল।
গুড়
গুড়ের পায়েস, গুড়ের তৈরি বিভিন্ন মিষ্টি বা তরল দুধের সঙ্গেই চিনি না মিশিয়ে গুড় মিশিয়ে খেতে পছন্দ করেন অনেকে। স্বাদে অতুলনীয়! বেশ আয়েশ করে খাচ্ছেন?
থামুন, থামুন! পেটে সমস্যা থাকলে দুধের সঙ্গে গুড় খাবেন কি না তা নিয়ে চিন্তা করুন।
দুধের সঙ্গে গুড় খেলে পরিপাকে সমস্যা হয়। বরং গুড়ের পরিবর্তে ব্যাবহার করতে পারেন চিনি। তবে চিনিও স্বাস্থ্যের পক্ষে খুবই ক্ষতিকর।
মাছ
মাছে-ভাতে বাঙালি! মাছ দিয়ে ভরপেট খেয়ে বসে গেলেন দুধ-ভাত খেতে। কিংবা এক গ্লাস গরম দুধে চুমুক দিলেন!
না, তা আর করা যাবে না। হজমে সমস্যা থাকলে মাছের সঙ্গে দুধ বা দুগ্ধজাত খাবার একেবারেই বাদ দিতে হবে।
মাছ ও দুধ দুটিই প্রোটিনের ভালো উৎস। তবে এ দুটির মেলবন্ধন মোটেও ভালো কিছু নয়। পেটে গিয়ে হতে পারে বিষক্রিয়া। পরিপাকের সমস্যা তো আছেই, অনেকের আবার অ্যালার্জির সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
নোনতা খাবার
অল্প ক্ষুধায় হালকা নোনতা খাবার কে না পছন্দ করে? তবে নিমকি, চিপস বা ভাজাপোড়ার মত খাবারগুলো এমনিতেই পেটে গ্যাস সৃষ্টির জন্য দায়ী। আর এর সঙ্গে দুধ যোগ হলে তো কথাই নেই।
নোনতা খাবার বা ভাজাপোড়ার সঙ্গে দুধ খেলে শরীরের ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায় বলে দাবি বিভিন্ন গবেষণার। আর এর ফলে হজমের সমস্যা থাকলে তা আর আটকাতে পারবেন না মোটেই।
তাই দুধের পুষ্টি পেতে সাধ হয়, অথচ পেটের সমস্যার কারণে যারা দুধপান করতে ভয় পাচ্ছেন, উপরের বিষয়গুলো মাথায় রেখে যদি দুধপান করেন, তাহলে সমস্যা বাড়ার সম্ভাবনা কমে যাবে।