বাংলাদেশ থেকে জনপ্রিয় গন্তব্যের তালিকায় ভারত, থাইল্যান্ড, নেপালের পাশাপাশি সাম্প্রতিককালে জায়গা করে নিয়েছে মালদ্বীপও। মালদ্বীপের অধিকাংশ জনসংখ্যাই মুসলিম। তাই বাংলাদেশি জীবনধারার সঙ্গে স্থানীয় জনসংখ্যার জীবনযাপনে খুঁজে পাওয়া যায় অনেক মিল। এ ছাড়া ছোট্ট এই দেশটিতে বসবাস করে প্রায় ১ লাখ বাংলাদেশি নাগরিক। অর্থাৎ দেশটির সমগ্র জনসংখ্যার প্রায় এক পঞ্চমাংশই বাংলাদেশি। অনেক মিল থাকা সত্ত্বেও মালদ্বীপের কিছু রীতিনীতি আমাদের দেশ থেকে ভিন্ন। আবার ভ্রমণের ক্ষেত্রেও মাথায় রাখতে হয় বিশেষ কিছু ব্যাপার।
অল্প খরচে মালদ্বীপ ঘুরে আসতে চাইলে তাই অবশ্যই মাথায় রাখবেন এই ১০টি বিষয়।
ভ্রমণের সঠিক সময় বাছাই
মালদ্বীপের ৯০ হাজার বর্গ কিলোমিটার আয়তনের মাঝে স্থলভাগ আছে মাত্র ২৯৮ বর্গ কিলোমিটার। সমুদ্রের অনিশ্চিত আবহাওয়ার ওপরই নির্ভর করে দেশটির সমগ্র আবহাওয়া। তবে সর্বজনীনভাবে মালদ্বীপের আবহাওয়াকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। মে’র মাঝামাঝি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত চলে বৃষ্টির মৌসুম। এ সময়ে হুটহাট বৃষ্টির কারণে সমুদ্র থাকে উত্তাল এবং পর্যটনের জনপ্রিয়তা স্বাভাবিকভাবেই কমে যায়। অপরদিকে জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত চলে গ্রীষ্মের মৌসুম। এই সময়ে সমুদ্র মোটামুটি শান্ত থাকে এবং পর্যটকদের ভিড় থাকে তুঙ্গে।
সমুদ্রপ্রধান দেশ হওয়ায় উত্তাল সমুদ্রের মাঝে ভ্রমণের বিষয়টা অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই ফ্লাইট বুক করার আগে ভালোভাবে দেখে নিতে হবে তখন মালদ্বীপের মৌসুমটা কেমন।
অনেকে বৃষ্টির মৌসুমের শেষের দিকে মালদ্বীপ ভ্রমণের পরিকল্পনা করে। এতে খরচ কম পড়ে, আবার মোটামুটি গ্রীষ্মের আমেজটাও পাওয়া যায়।
পছন্দমত সময়ে ফ্লাইট বুক করার জন্য দেখে নিতে পারেন গোযায়ান। গোযায়ান ব্যবহার করে সম্পূর্ণ অনলাইনেই আপনার সুবিধামত তারিখ অনুযায়ী বুক করে ফেলতে পারবেন কাঙ্ক্ষিত ফ্লাইটটি।
থাকার জায়গা বাছাই
কোথাও ঘুরতে গেলে যাতায়াত নিশ্চিত করার পরই আসে থাকার ব্যবস্থা করা। অনেকেই মনে করেন, মালদ্বীপে হোটেল এবং রিসোর্ট বলতেই বিলাসবহুল ৫ তারকা থাকার ব্যবস্থা। কিন্তু বিষয়টা ঠিক এমন নয়।
মালদ্বীপের দ্বীপগুলোকে স্থানীয় দ্বীপ এবং রিসোর্ট দ্বীপ- এই দুই ভাগে ভাগ করা হয়। সেখানে রিসোর্ট দ্বীপগুলোতে সম্পূর্ণভাবে সাধারণ জনবসতি থেকে আলাদা ৫ তারকা রিসোর্টগুলো গড়ে ওঠে। অপরদিকে স্থানীয় দ্বীপগুলোতে থাকার ব্যবস্থা ভিন্নরকম। একেবারে সমুদ্র সৈকতের পাশে হোটেলগুলোতে প্রতিরাত কক্সবাজারের সমান খরচেই থাকা যায়। তাই বিলাসবহুল ট্যুর অথবা বাজেট- সব ধরনের থাকার ব্যবস্থা আছে মালদ্বীপে।
আপনার পছন্দমতো হোটেল বুক করার জন্যও ব্যবহার করতে পারেন গোযায়ান। বাজেট অনুযায়ী বাছাই করে নিতে পারবেন আপনার জন্য সেরা হোটেলটি।
ভিসার জন্য প্রস্তুতি
সৌভাগ্যবশত মালদ্বীপের ভিসার প্রক্রিয়া একদমই সোজা। এক্ষেত্রে বাড়তি কোনো কাগজপত্রের প্রয়োজন হয় না। দেশ থেকে অনলাইনে ভিসার ফর্ম পূরণ করলেই ভিসার যাবতীয় সব কাজ শেষ। মালদ্বীপ পৌঁছানোর পর শুধুমাত্র ফর্মটি ফোনে দেখালেই আপনার পাসপোর্টে সিল দিয়ে দেয়া হবে। এই সিলটি আপনার ভিসা হিসাবে কাজ করবে। তাই মালদ্বীপ ভ্রমণের পূর্বে অবশ্যই ভিসা ফর্মটি পূরণ করে নিয়ে যেতে হবে।
মালদ্বীপের মুদ্রা
প্রতিটি দেশেরই নিজস্ব মুদ্রার প্রচলন থাকে। তবে মালদ্বীপের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা একটু ভিন্ন। মালদ্বীপের মুদ্রার নাম ‘রুপাইয়া’। তবে পর্যটন নির্ভর রাষ্ট্র হওয়ার কারণে কম-বেশি সব জায়গায়ই ডলার ব্যবহার করে কেনাকাটা করা যায়। এমনকি জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্যগুলোতে সবকিছুর দাম ডলারেই লেখা থাকে। তাই স্থানীয় মুদ্রায় বিনিময় না করে, একবারে ডলার ব্যবহার করেই সম্পন্ন করতে পারবেন আপনার যাবতীয় সব লেনদেন।
রিসোর্ট বা হোটেলে যাওয়ার ব্যবস্থা
মালদ্বীপের রাস্তা বলতে মূলত সমুদ্র। গাড়ির তুলনায় দেশটিতে স্পিডবোট বেশি চলে। তাই মালে এয়ারপোর্টে অবতরণ করার পরই আপনাকে স্পিডবোটে চড়ে পরবর্তী গন্তব্যে যেতে হবে। স্পিডবোটের সময়সূচি এবং খরচ সম্পর্কে আগে থেকেই ধারণা নিয়ে রাখা উচিত। সাধারণত এই ভাড়া কিছুটা চড়া হয়। তাই বাজেটের মধ্যে স্পিডবোটের খরচটা যোগ করতে ভুলবেন না। স্পিডবোটের পরিবর্তে খরচ কমাতে ব্যবহার করা যায় জনসাধারণের ফেরিও।
সূর্য হতে সাবধান
মৌসুম যেটাই হোক, মালদ্বীপে প্রায় সারা বছরজুড়েই কড়া রোদ পাওয়া যায়। এই অতিরিক্ত রোদে ত্বক পুড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে অনেক বেশি। তাই পর্যাপ্ত সানস্ক্রিন এবং পানি সবসময় সঙ্গে রাখা প্রয়োজন। তাছাড়া ছাতা, টুপি ইত্যাদি সঙ্গে রাখলেও ভালো হয়।
স্থানীয় সামুদ্রিক জীব সংরক্ষণ
মালদ্বীপের সামুদ্রিক প্রাণিজগৎ অসম্ভব রকমের সমৃদ্ধ। সমুদ্র সৈকতেই দেখা মেলে নার্স হাঙ্গর, স্টিং রে, ম্যানটা রে ইত্যাদি বিরল প্রাণীর। এর কারণ হলো- মালদ্বীপে সমুদ্র এবং সামুদ্রিক প্রাণী সংরক্ষণের স্বার্থে বিভিন্ন সরকারি নিয়ম প্রণয়ন করা আছে।
যেখানে-সেখানে ময়লা ফেলা, সামুদ্রিক প্রাণী অথবা অন্যান্য প্রাণীদের উত্যক্ত করা, যেখানে-সেখানে খাবার দেয়া ইত্যাদি থেকে বিরত থাকতে হবে। মালদ্বীপ ঘুরতে গেলে অবশ্যই সামুদ্রিক প্রাণী ও পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে।
স্থানীয় খাবারের স্বাদ নেয়া
মালদ্বীপে পর্যটন জনপ্রিয় হওয়ায় বেশিরভাগ রেস্টুরেন্টে কন্টিনেন্টাল খাবার পরিবেশন করা হয়। তবে মালদ্বীপের স্থানীয় খাবারও অত্যন্ত সুস্বাদু। দ্বীপরাষ্ট্র হওয়ায় মালদ্বীপে মাছ জাতীয় খাবারের জনপ্রিয়তা অনেক বেশি। প্রায় প্রতি বেলাতেই স্থানীয় মানুষজন মাছ খায়। তাই মালদ্বীপ ঘুরতে গেলে একটু খুঁজে গুলহা, গারুধিয়া অথবা মাস রিহা (মালদ্বীপের মাছের তরকারি) বের করে অবশ্যই খেয়ে দেখতে পারেন।
বায়োলুমিনেসেন্ট সমুদ্র সৈকত দেখা
জ্যান্ত প্রাণী থেকে আলো ছড়ালে সেটাকে বায়োলুমিনেসেন্ট বলে। জোনাকি পোকা এর একটা ভালো উদাহরণ। মালদ্বীপে জোনাকি পোকা না থাকলেও, সমুদ্র সৈকত থেকেই রাতের বেলা আলো ঠিকরে বের হয়। এটা সম্ভব হয় বিশেষ কিছু ব্যাকটেরিয়া ও প্ল্যাঙ্কটনের কারণে।
প্রকৃতির এই অলৌকিক ঘটনা মালদ্বীপে গিয়ে অবশ্যই একবার দেখে আসা উচিত। এটি দেখতে পারবেন হুলহুমালে বীচ, মিরিহি দ্বীপ, কুরেধু বীচ ইত্যাদি জায়গায়।
মালদ্বীপের ভাষা
মালদ্বীপের বেশীরভাগ মানুষ মালদিভিয়ান অথবা ধিভেহি ভাষায় কথা বলেন। তবে পর্যটনপ্রধান রাষ্ট্র হওয়ায় দেশটিতে ইংরেজিভাষীর সংখ্যা অনেক। তাই ভাষা নিয়ে কোনো ধরনের সমস্যা হওয়ার কথা না মালদ্বীপ ঘুরতে গিয়ে।
এ ছাড়া মালদ্বীপে বাংলাদেশি জনসংখ্যা অতি উচ্চ হওয়ায়, অনেকের সঙ্গেই পথে ঘাটে বাংলায়ও কথা বলতে পারবেন।
মালদ্বীপ ঘুরে আসার জন্য এখনই সেরা সময়। বাংলাদেশ থেকে সরাসরি মালে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত ফ্লাইট থাকায় খরচ ও সময় উভয়ই বেঁচে যায়। তাই আপনার পরবর্তী ছুটিতে পরিকল্পনা করুন মালদ্বীপে ঘুরে আসার।