বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

শাহপরীর দ্বীপে পর্যটনের নতুন দুয়ার

  • রহমত উল্লাহ, টেকনাফ (কক্সবাজার)   
  • ৩ জুলাই, ২০২৩ ১৮:২৮

২০১২ সালে দ্বীপের পশ্চিমের বেড়িবাঁধ ভেঙে জোয়ারের পানি ঢুকে যাতায়াতের প্রধান সড়কটির কয়েক কিলোমিটার অংশ ভেঙে যায়। বেড়িবাঁধ সংস্কার ও দৃষ্টিনন্দন সড়কটি সড়কটি নির্মিত হওয়ায় এখন টেকনাফ সদর থেকে শাহপরীর দ্বীপে ২০ মিনিটে পৌঁছে যাচ্ছেন পর্যটকরা।

কক্সবাজারের সীমান্ত উপজেলা টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের একটি বড় গ্রাম শাহপরীর দ্বীপ।

বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডের দক্ষিণ স্থলভাগের সর্বশেষ ঠিকানা। বঙ্গোপসাগর আর মিয়ানমারের সীমান্ত ঘেঁষে নাফ নদীর মোহনা, সর্বদক্ষিণে নৈসর্গিক সৌন্দর্যে সমৃদ্ধ জনপদ।

শাহপরীর দ্বীপে ৫০ হাজারের বেশি মানুষের বসতি। সড়ক পথে টেকনাফ উপজেলা সদরের সঙ্গে দূরত্ব ১৩ কিলোমিটার। পর্যটন জেলা কক্সবাজারের এই দ্বীপে পর্যটনের নতুন দুয়ার খুলেছে দৃষ্টিনন্দন সড়ক।

চট্টগ্রাম থেকে আসা নাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘স্ত্রীকে নিয়ে কক্সবাজারে বেড়াতে এসেছি। শাহপরীর দ্বীপ বাস্তবিকই দেখার মতো একটি জায়গা। পূর্ব দিকে নাফ নদী, ওপাশে মিয়ানমার। পশ্চিমে বঙ্গোপসাগর- দেখতে অপূর্ব সুন্দর।

‘আর এসব দেখার জন্য এখানে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন সড়কটি বড় মাধ্যম হয়ে উঠেছে। এখন টেকনাফ সদর থেকে শাহপরীর দ্বীপে ২০ মিনিটে পৌঁছে যান পর্যটকরা। নান্দনিক এই সড়কে দাঁড়িয়ে ছবি তোলাটা আমাকে দারুণভাবে মুগ্ধ করেছে। এটিকে সুন্দর করে রাখা আমাদের প্রত্যেকের কর্তব্য।’

২০১২ সালের জুন মাসে দ্বীপের পশ্চিমের বেড়িবাঁধ ভেঙে জোয়ারের পানি ঢুকে যাতায়াতের প্রধান সড়কটির কয়েক কিলোমিটার অংশ ভেঙে যায়। তখন থেকে জোয়ার-ভাটার বৃত্তে বন্দি হয়ে পড়ে দ্বীপবাসী। সড়ক বিলীন হয়ে সাবরাং হারিয়াখালী থেকে শাহপরীর দ্বীপ পর্যন্ত ৫ কিলোমিটারের বেশি ভঙ্গুর রাস্তা পাড়ি দিতে হতো হেঁটে এবং নৌকায়। যাতায়াতে দীর্ঘ এক দশক সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে দ্বীপের বাসিন্দাদের।

টেকনাফ-শাহপরীর দ্বীপের মানুষের এই দুর্ভোগ লাঘবে ৫ দশমিক ১৫ কিলোমিটার সড়ক সংস্কার ও পুনর্নির্মাণের জন্য ২০১৮ সালে একনেকে ৬৭ কোটি ৭৮ লাখ টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স জে কে এন্টারপ্রাইজ সড়কটির কাজ পায়।

২০২০ সালে শুরু করা সড়কের কাজ শেষ হয়েছে। জোড়া লেগেছে শাহপরীর দ্বীপ সড়কের দুই প্রান্ত। সড়কটি ইতোমধ্যে যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৭ ডিসেম্বর কক্সবাজারের এসে আনুষ্ঠানিকভাবে তা উদ্বোধন করেন।

শাহপরীর দ্বীপ সড়ক সংস্কার প্রকল্পের ঠিকাদার ও জে কে এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আব্দুল জব্বার চৌধুরী বলেন, ‘শাহপরীর দ্বীপ সড়কটি যে অবস্থায় ছিল, তা দেখলে মনে হতো ধ্বংসস্তূপ। এখানে কাজ করা চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার ছিল। তারপরও এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘ সময়ের ভোগান্তির কথা ভেবে কাজটি নিয়েছি। আয়তনে কম হলেও সড়কটি এখন দেশের অন্যতম একটি দৃষ্টিনন্দন ও পর্যটক-আকর্ষণী সড়ক। সড়কটি দেখতে এখন এলাকার লোকজন ও দূর-দূরান্ত থেকে পর্যটকরা ভিড় করছেন।’

দীর্ঘ এক দশকের বেশি সময়ের ভোগান্তির অবসান ঘটিয়ে সড়কপথে যাতায়াত শুরু হওয়ায় দ্বীপবাসীর খুশির শেষ নেই। যোগাযোগে ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে দৃষ্টিনন্দন সড়কটি। প্রতিদিন শত শত মানুষ সড়কের সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে আসছেন। এটিকে এ অঞ্চলের কিশোরগঞ্জের মিঠাইন বা পদ্ম সেতুর সংযোগ সড়ক বলছেন অনেকে।

শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দা সাংবাদিক জাকারিয়া আলফাজ বলেন, ‘বেড়িবাঁধ ভেঙে অরক্ষিত এবং বিলীন সড়ক নিয়ে চরম ভোগান্তিতে ছিলেন দ্বীপবাসী। বর্তমানে বেড়িবাঁধ হয়েছে এবং যোগাযোগের প্রধান সড়কটিও সংস্কার হয়েছে। দৃষ্টিনন্দন সড়কটি দেখতে বিভিন্ন জায়গা থেকে এখানে আসছেন পর্যটকরা।’

স্থানীয় লবণ ব্যবসায়ী আমির হোসেন বলেন, ‘এক সময় সড়কের বেহাল দশার কারণে সাগর থেকে ধরা মাছ সময়মতো অন্যত্র পরিবহন করা সম্ভব হতো না। তাতে করে মাছ পচে যেত। আমরা ১০ বছর পর্যন্ত এ ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি। বর্তমানে সড়ক জোড়া লেগেছে। আমারা এখন পণ্য সরাসরি চট্টগ্রাম বা ঢাকায় নিয়ে যেতে পারছি।’

দ্বীপবাসী সত্তরোর্ধ্ব মদিনা খাতুন বলেন, ‘জীবনে ভাবিনি এ সড়ক দিয়ে ফের টেকনাফে আসা-যাওয়া করতে পারব। স্বপ্নের মতো লাগছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আল্লাহ তাকে যেন হাজার বছর বাঁচিয়ে রাখে।’

এদিকে সড়কে যাতায়াত সুবিধা পেলেও দ্বীপের স্থানীয় বাসিন্দারা রাতের বেলা যান চলাচলে ঝুঁকির কথা বলছেন। সড়ক বাতি না থাকায় রাতে ডাকাতিসহ অনাকাঙ্ক্ষিত নানা ঘটনার আশঙ্কা করছেন তারা। দ্বীপবাসী দৃষ্টিনন্দন শাহপরীর দ্বীপ সড়কের দু’পাশে সড়ক বাতি স্থাপন ও হারিয়াখালী থেকে শাহপরীর দ্বীপের মাঝামাঝি স্থানে একটি পুলিশ বক্স স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর হোসেন জানান, সড়ক বাতি বা সৌর বাতি ব্যবহার করে এটিকে আকর্ষণীয় করার উদ্যোগ নেয়ার জন্য উপজেলা পরিষদের উন্নয়ন সভায় প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়েছে।

কক্সবাজার সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) উপ-সহকারী প্রকৌশলী ক্ষীর্তি চাকমা বলেন, ‘দীর্ঘ কয়েক বছর ভোগান্তির পর বেড়িবাঁধ সংস্কার হলে আমরা সড়ক সংস্কারের পদক্ষেপ নিয়েছি। সাফল্যের সঙ্গে সড়কের সংস্কার কাজও সম্পন্ন হয়েছে। এটি শেখ হাসিনা সরকারের একটি অর্জন। এ সড়ক সংস্কারের মাধ্যমে টেকনাফের দক্ষিণ জনপদে উন্নয়নের দুয়ার উন্মোচিত হয়েছে।’

এ বিভাগের আরো খবর