ত্যাগের মহিমা নিয়ে আবারও এসেছে ঈদুল আজহা। ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম বড় ধর্মীয় এই উৎসবটি উদযাপন হবে আজ বৃহস্পতিবার। যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে ঈদ উদযাপনে প্রস্তুত গোটা দেশ।
ঈদুল-আজহা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীসহ বিশ্বের সব মুসলিমকে আন্তরিক অভিনন্দন ও মোবারকবাদ জানিয়ে পৃথক বাণী দিয়েছেন।
সকালে ঈদ জামাতে শরিক হয়ে নামাজ আদায়ের মধ্য দিয়ে শুরু হবে ঈদ উদযাপন। মহান সৃষ্টিকর্তার অনুগ্রহের আশায় ঈদের নামাজ শেষে নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী পশু কুরবানি দেবেন ধর্মপ্রাণ ও সামর্থ্যবান মুসলমানরা। মূলত মনের পশুকে জবাই করে মানুষে মানুষে ভেদাভেদ ভুলে যাওয়াই দিনটির উদ্দেশ্য।
ঈদ উদযাপন আজ হলেও পরের দুই দিনও পশু কোরবানির বিধান রয়েছে। ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী জবাই করা পশুর মাংসের একটি অংশ বিলি করা হয় দুস্থ ও দরিদ্রদের মাঝে। এ ছাড়া কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রির অর্থও গরিবের মাঝে বিতরণ করা হয়।
প্রায় চার হাজার বছর আগের কথা। মহান আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি পেতে নিজ সন্তান হজরত ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানি দিতে চেয়েছেন হজরত ইব্রাহিম (আ.)। তবে আল্লাহর কুদরতে হজরত ইসমাইল (আ.)-এর পরিবর্তে একটি দুম্বা কোরবানি হয়। হজরত ইব্রাহিম (আ.) ত্যাগের যে মহিমা স্থাপন করেছেন, তা অনুসরণেই সারা বিশ্বে মুসলিম সম্প্রদায় হিজরিবর্ষের ১০ জিলহজ আল্লাহর অনুগ্রহ পেতে পশু কোরবানি করে থাকে।
ঈদের জামাত
রাজধানীতে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে হাইকোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহে, সকাল সাড়ে ৭টায়।
তবে আবহাওয়া প্রতিকূল হলে জাতীয় ঈদগাহের ঈদের প্রধান জামাত সকাল ৭টা ৩০ মিনিট থেকে পরিবর্তিত হয়ে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মুকাররমে সকাল ৮টায় অনুষ্ঠিত হবে।
ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ কমিটির সভাপতি ও কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ জানান, কিশোরগঞ্জের শত বছরের ঐতিহ্য ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ময়দানের ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৯টায়।
বায়তুল মুকাররমে পবিত্র ঈদুল আজহার পাঁচটি জামাত অনুষ্ঠিত হবে। প্রতি বছরের মতো এবারও সকাল ৭টা থেকে পর্যায়ক্রমে এসব জামাত অনুষ্ঠিত হবে এই জাতীয় মসজিদে।
বায়তুল মুকাররমে নির্ধারিত সকাল ৭টার প্রথম জামাতে ইমামতি করবেন বায়তুল মুকাররমের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা এহসানুল হক। মুকাব্বির থাকবেন জাতীয় মসজিদের খাদেম আব্দুল হাদী।
সকাল ৮টায় অনুষ্ঠিত হবে দ্বিতীয় জামাত। এতে ইমামতি করবেন বায়তুল মুকাররমের পেশ ইমাম মাওলানা মুহীউদ্দিন কাসেম। মুকাব্বির থাকবেন জাতীয় মসজিদের অবসরপ্রাপ্ত মুয়াজ্জিন হাফেজ ক্বারী মো. আতাউর রহমান।
তৃতীয় জামাত হবে সকাল ৯টায়। ইমামতি করবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুফসসির ড. মাওলানা আবু সালেহ পাটোয়ারী। মুকাব্বির থাকবেন চিফ খাদেম মো. শহিদ উল্লাহ।
সকাল ১০টায় চতুর্থ জামাতের ইমাম থাকবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরিচালক মাওলানা মো. আনিসুজ্জামান সিকদার। মুকাব্বিবের দায়িত্ব পালন করবেন খাদেম হাফেজ মো. রুহুল আমিন।
পঞ্চম ও সবশেষ জামাত হবে সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে। এতে ইমামতি করবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুফতি মাওলানা মোহাম্মদ আবদুল্লাহ। মুকাব্বির থাকবেন খাদেম হাফেজ মো. জহিরুল ইসলাম।
এসব জামাতের কোনোটিতে নির্ধারিত ইমাম উপস্থিত না থাকলে বিকল্প ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক মাওলানা জাকির হোসেন।
সারাদেশে বিভাগ, জেলা, উপজেলা, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ এবং সরকারি সংস্থাগুলোর প্রধানগণ জাতীয় কর্মসূচির আলোকে নিজ নিজ কর্মসূচি প্রণয়ন করে ঈদ উদযাপন করবেন।
এছাড়াও বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার ও বেসরকারি গণমাধ্যমগুলো যথাযোগ্য গুরুত্ব সহকারে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করবে। সংবাদপত্রগুলো বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করবে। অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলো বিশেষ নিবন্ধ প্রকাশ করবে।
ঈদ উদযাপন উপলক্ষে দেশের সব হাসপাতাল, কারাগার, সরকারি শিশু সদন, বৃদ্ধ নিবাস, মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে।
বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস ও মিশনগুলোতে যথাযথভাবে পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপন করবে।
উপলক্ষে সারাদেশে আইন-শৃংখলা রক্ষায় বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
কোরবানির পশুর রক্ত বা বর্জ্য দ্বারা যাতে পরিবেশ দূষণ না ঘটায় সে লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনসহ দেশের সব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান।