বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

টাঙ্গাইলে দেড়শ’ বছরের ‘জামাই মেলা’

  •    
  • ২৬ এপ্রিল, ২০২৩ ২২:৩৯

প্রতিবছর ১১, ১২ ও ১৩ বৈশাখ (সনাতন পঞ্জিকা অনুসারে) রসুলপুরে মেলা বসে। এই মেলাকে কেন্দ্র করে আশপাশের অন্তত ৩০টি গ্রামের মেয়ে জামাতারা শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে আসেন। তারাই মেলার মূল আকর্ষণ। আর মেলায় জমায়েত হন ৩০ গ্রামের মেয়ে জামাতারা।

‘প্রতিবছরই আমরা শ্বশুরবাড়ি থেকে মেলায় আসার দাওয়াত পাই। এই মেলা আমাদের কাছে খুবই আকর্ষণীয়। মেলাকে কেন্দ্র করে অনেক আত্মীয়ের সঙ্গে দেখা ও ভাব-বিনিময় হয়। সব মিলিয়ে আমরা মেলার দিন আনন্দে মেতে উঠি।’

টাঙ্গাইল সদর উপজেলার রসুলপুরে চলমান ‘জামাই মেলা’য় কথাগুলো বলছিলেন সুকুমার সাহা ও প্রদীপ সাহা।

রসুলপুর বাছিরন নেছা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে মঙ্গলবার শুরু হওয়া এই মেলা চলবে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত। একদিকে ঈদের আনন্দ অপরদিকে মেলাকে কেন্দ্র করে স্কুল মাঠে মানুষের ঢল নেমেছে। এই আয়োজন ঘিরে এলাকায় উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।

মেলাটি জামাই মেলা নামেই পরিচিত। রসুলপুর গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি হারেজ মিয়া বলেন, ‘আমরা যখন ছোট ছিলাম, তখনও দাদার কাছে এই মেলার কথা শুনেছি। এই আয়োজনকে কেন্দ্র করে এলাকার মেয়ে জামাতারা শ্বশুরালয়ে আসেন। তারা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মেলায় আসেন এবং কেনাকাটা করেন। আর মহাসড়কের পাশে হওয়ায় মেলাটি প্রতিবছরই জমে ওঠে। এটি জেলার মধ্যে অন্যতম ঐতিহ্যবাহী একটি মেলা।

স্থানীয়রা জানান, প্রতিবছর ১১, ১২ ও ১৩ বৈশাখ (সনাতন পঞ্জিকা অনুসারে) রসুলপুরে মেলা বসে। এই মেলাকে কেন্দ্র করে আশপাশের অন্তত ৩০টি গ্রামের মেয়ে জামাতারা শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে আসেন। তারাই মেলার মূল আকর্ষণ। আর মেলায় জমায়েত হন ৩০ গ্রামের জামাইয়েরা।

এছাড়া মেলার দিন শাশুড়িরা মেয়ে জামাইয়ের হাতে কিছু টাকা দেন। সেই টাকা দিয়ে জামাই বাজার করে এনে শ্বশুরবাড়ির লোকদের খাওয়ান। এ কারণেই মেলাটি ‘জামাই মেলা’ হিসেবে পরিচিত। তিন দিনের এই মেলায় রসুলপুরসহ আশপাশের গ্রামের লক্ষাধিক মানুষের সমাগম ঘটে।

সরেজমিনে দেখা যায়, বিভিন্ন ধরনের খেলনা, প্রসাধনী, খাবারের দোকানসহ ছোট-বড় দেড় শতাধিক দোকান বসেছে মেলায়। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এসেছেন দোকানিরা। মিষ্টি জাতীয় পণ্যের দোকানও আছে। এছাড়া মেলায় রয়েছে একাধিক ফার্নিচারের দোকান। বড়দের পাশাপাশি ছোট ছেলে-মেয়েরাও মেলা উপভোগ করছে।

রসুলপুরের কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক রাশেদ রহমান বলেন, ‘জামাই মেলার বয়স দেড়শ’ বছরের মতো হবে। এ এলাকার মানুষের কাছে ঈদ বা পূজা-পার্বণের মতোই এই মেলা একটি বড় উৎসবের উপলক্ষ।

‘ব্রিটিশ আমলে এটি বৈশাখী মেলা হিসেবে শুরু হলেও এখন এটি জামাই মেলা হিসেবে পরিচিত। মেলা সামনে রেখে রসুলপুর ও আশপাশের গ্রামগুলোর বিবাহিত মেয়েরা তাদের স্বামীকে নিয়ে বাবার বাড়ি চলে আসেন। আর জামাইকে মেলা উপলক্ষে বরণ করে নেয়ার জন্য শ্বশুর-শাশুড়িরা আগে থেকেই নেন নানা প্রস্তুতি। এছাড়া রসুলপুরসহ আশপাশের গ্রামের যুবকদের নিয়ে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী করা হয়েছে। এতে করে মেলার পরিবেশ স্বাভাবিক ও সুন্দর থাকে।’

পার্শ্ববর্তী বড় বাসালিয়া গ্রামের আকড়ি ব্যবসায়ী ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘আমি এমনিতে রডমিস্ত্রির কাজ করি। মেলা আসলে একটু বাড়তি লাভের আশায় কয়েক বছর ধরে আকড়ি বিক্রি করি। বর্তমানে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা দরে আকড়ি বিক্রি হচ্ছে। সব মিলিয়ে ব্যবসা ভালোই হচ্ছে।’

অপর ব্যবসায়ী ফরিদা বেগম বলেন, ‘এটি টাঙ্গাইল জেলার একটি ঐতিহ্যবাহী মেলা। দুপুর থেকেই নারী-পুরুষ, শিশু থেকে বৃদ্ধ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ মেলায় ভিড় করছে। তারা বিভিন্নভাবে মেলা উপভোগ করে থাকেন। আমাদের বেচাকেনাও ভালো হচ্ছে।’

মেলা কমিটির আহ্বায়ক আবুল হাসেম বলেন, ‘মেলায় দুই শতাধিক দোকান বসেছে। এখানে মিষ্টি জাতীয় খাবার বেশি বিক্রি হয়। মেলায় আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে স্বেচ্ছাসেবকরা দায়িত্ব পালন করছে।’

এ বিভাগের আরো খবর