‘হে মহাভাগ ব্রহ্মপুত্র, হে লোহিত্য, আমার পাপ হরণ করো’ মন্ত্র পাঠ করে ফুল, বেলপাতা, ধান, দূর্বা, হরীতকী, ডাব, আম্রপল্লব দিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বী পুণ্যার্থীরা পাপমুক্তির বাসনায় লাঙ্গলবন্দে স্নানোৎসবে অংশ নিচ্ছেন।
নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার লাঙ্গলবন্দে ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে শুরু হয়েছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মহাতীর্থ অষ্টমী স্নানোৎসব। দুদিনব্যাপী এ উৎসবে নদের ১৮টি ঘাটে ১০ লাখের বেশি পুণ্যার্থীর আগমন ঘটেছে বলে জানিয়েছে উৎসব উদযাপন পরিষদ। এবার বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত ,নেপাল ও ভুটান থেকে পুণ্যার্থীরা স্নানোৎসবে যোগ দিয়েছেন।
শুক্ল তিথি অনুযায়ী মঙ্গলবার রাত ৯টা ১৭ মিনিটে শুরু হয়েছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মহা অষ্টমীর স্নানোৎসব। দু’দিনব্যাপী এই উৎসব ঘিরে লাখো পুণ্যার্থীর পদচারণে মুখরিত হয়ে উঠেছে লাঙ্গলবন্দের সাড়ে তিন কিলোমিটার এলাকা।
ভারতের কলকাতা থেকে আগত পুণ্যার্থী জ্যাতি রানী বলেন, ‘তীর্থযাত্রীরা লাঙ্গলবন্দে আসেন পাপ মোচনের জন্য। একই বাসনা নিয়ে বহুদূর থেকে এখানে ছুটে এসেছি। আয়োজনের সব কিছুই সুন্দর। তবে যানজট আর বৃষ্টিতে ভোগান্তি হয়েছে।’
কিশোরগঞ্জের লাল মোহন চন্দ বলেন, ‘যানজট পার করে হলেও পরিবারের সবাই আসতে পেরেছি। তবে বৃষ্টিতে পরিবার নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়। এখানে স্নান করার ইচ্ছে ছিলো বহু বছরের। জীবনে যত পাপ আছে তা থেকে মুক্তি পেতে প্রার্থনা জানিয়েছি মহাভাগ ব্রহ্মপুত্রের কাছে।’
ঘাটগুলোতে নৌকা ভেড়াতে গিয়েও জট লেগে যায়। ছবি: নিউজবাংলা
নারায়ণগঞ্জের পালপাড়া থেকে আগত প্রাপ্তি সাহা বলেন, ‘পুরো পরিবার নিয়ে স্নান করেছি রাজ ঘাটে। প্রার্থনা করেছি- ভালো থাকুক সবাই। মঙ্গল হোক দেশ ও জাতির।’
মুন্সীগঞ্জ থেকে আসা পূবালী রায় বলেন, ‘একে হলো বৃষ্টি, তার ওপর সড়কে যানজট। তাই ট্রলার পথই আমরা বেছে নিয়েছি। আমাদের গ্রামসহ আশপাশের ৫০টির বেশি নৌযান এসেছে লাঙ্গলবন্দে। প্রতি বছরই আমরা এখানে আসি। তবে গেল কয়েক বছর করোনা মহামারির কারণে বড় পরিসরে উৎসব হয়নি। এবার অনেক মানুষ এসেছে। তাই ট্রলার ঘাটে ভিড়তেও সময় লেগেছে। তবুও ভালো লাগছে স্নান সম্পন্ন করতে পেরে।’
সীতাকুণ্ড থেকে আগত পুরোহিত কৃষ্ণ কুমার সাহা জানান, হিন্দু ধর্মের শাস্ত্রীয় পুরানমতে, হিন্দু দেবতা পরশুরাম হিমালয়ের মানস সরোবরে গোসল করে পাপমুক্ত হন। লাঙ্গল দিয়ে চষে হিমালয় থেকে এ পানিকে বহ্মপুত্র নদরূপে নামিয়ে আনেন সমভূমিতে। পৌরাণিক এ কাহিনীকে স্মরণ করে প্রতি বছর চৈত্র মাসে মহাতীর্থ অষ্টমীতে লাঙ্গলবন্দের ব্রহ্মপুত্র নদে তীর্থযাত্রীরা পুণ্য লাভের আশায় জড়ো হন।
দু’দিনব্যাপী স্নান উৎসব শান্তিপূর্ণভাবে শেষ করতে সব ধরনের আয়োজন করা হয়েছে বলে জানান লাঙ্গলবন্দ স্নান উদযাপন পরিষদের নির্বাহী সদস্য শিখন চন্দ সরকার। তিনি বলেন, ‘এ বছর দশ লাখের বেশি পুণ্যার্থীর আগমন ঘটেছে লাঙ্গলবন্দে। সব রকম আয়োজন সফল হওয়ায় খুশি সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।’
নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান জানান, পুণ্যার্থীদের নিরাপত্তায় তিন কিলোমিটার এলাকা জুড়ে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়৷ পুণ্যার্থীদের নিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ, র্যাব ও আনসার সমন্বয়ে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
তীর্থস্থানের তিন কিলোমিটার এলাকা সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। স্থাপন করা হয়েছে ওয়াচ টাওয়ার। কোনো ধরনেন অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই এবার শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হচ্ছে উৎসব। তবে পুণ্যার্থী বেশি হওয়ায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজট লেগে যায়। মহাসড়কের যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশ কাজ করছে।