শকুনকে বলা হয় প্রকৃতির ঝাড়ুদার। আবর্জনা ও মৃত প্রাণিদেহ খেয়ে পরিবেশ পরিচ্ছন্ন ও দূষণমুক্ত রাখে শকুন। তবে বাংলাদেশ থেকে বর্তমানে শকুন বিলুপ্ত হওয়ার পথে। এগুলো সাধারণত ভারতের বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় বসবাস করে। সেখানে খাদ্যের অভাব দেখা দিলে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় চলে আসে ওরা।
বাংলাদেশে এসে অসুস্থ হয়ে পড়া শকুনগুলোর চিকিৎসার জন্য দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার সিংড়া জাতীয় উদ্যান বা শাল বনে গড়ে তোলা হয়েছে ‘শকুন উদ্ধার ও পরিচর্যা কেন্দ্র’।
দেশের একমাত্র এই শকুন পরিচর্যা কেন্দ্র থেকে বুধবার দুটি শকুন চিকিৎসা শেষে মুক্ত আকাশে অবমুক্ত করা হয়েছে।
গত এক বছরে বিভিন্ন জায়গা থেকে মোট ১০টি শকুন উদ্ধার করে এই কেন্দ্রে আনা হয়। চিকিৎসা শেষে দুটিকে মুক্ত আকাশে ছেড়ে দেয়া হয়। বাকিগুলোও পর্যায়ক্রমে অবমুক্ত করা হবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ।
বুধবার শকুন অবমুক্ত করার সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বনবিভাগের বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চলের বন সংরক্ষক ইমরান আহমেদ, দিনাজপুরের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বসির-আল মামুন, শকুন চিকিৎসা ও পরিচর্যা কেন্দ্রের মুখ্য গবেষক সারওয়ার আলম দিপু এবং গ্লোবাল থ্রেটনেন্ট স্পাইসেস অফিসার ক্রিস বাউডেন।
জানা গেছে, কিছু শকুন শীত মৌসুমে বিভিন্ন এলাকা থেকে বাংলাদেশে আসে। দীর্ঘ পথ পাড়ি দেয়ার কারণে কোনো কোনোটি অসুস্থ হয়ে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় নামে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এসব শকুনের পরিণতি হয় মৃত্যু।
তবে আহত অবস্থায় যেগুলো উদ্ধার করা হয় সেগুলোকে নিয়ে আসা বীরগঞ্জের সিংড়া ফরেস্টে। সিংড়া ফরেস্টে শকুন উদ্ধার ও পরিচর্যা কেন্দ্র স্থাপনের পর থেকে পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। সিংড়া ফরেস্ট থেকে প্রতি বছর উদ্ধারকৃত ২০ থেকে ২৫টি শকুন সুস্থ করার পর অবমুক্ত করা হয়।
বন সংরক্ষক ইমরান আহমেদ বলেন, ‘অন্যান্য বছর অবমুক্ত করার সময় শকুনের গায়ে জিপিএস ট্র্যাকার লাগানো হলেও চলতি বছর শকুনের গায়ে স্যাটেলাইট ট্র্যাকার লাগানো হয়েছে। এতে করে শকুন কোন কোন অঞ্চলে বিচরণ করছে এবং ওরা আবারও বাংলাদেশে ফেরত আসছে কি না তা আমরা জানতে পারব।’
শকুন উদ্ধার ও পরিচর্যা কেন্দ্রের মুখ্য গবেষক সারওয়ার আলম দিপু জানান, ২০১৬ সালে বাংলাদেশ বন বিভাগ ও আইইউসিএন বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে সিংড়া জাতীয় উদ্যানে কেন্দ্রটি চালু করা হয়। এরপর থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ২৪৯টি শকুন সুস্থ করে মুক্ত আকাশে অবমুক্ত করা হয়েছে।
চলতি বছরে প্রায় ৪০টি শকুন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে উদ্ধার করে অবমুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া উত্তরাঞ্চল থেকে এক বছরে ২৫টি শকুন উদ্ধার করা হয়। তাৎক্ষনিকভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ১৫টি শকুন অবমুক্ত করা হয়েছে।