দুই দিনের শখ, কিন্তু ক্ষতি হয় দীর্ঘদিনের। সাত-পাঁচ না ভেবেই চুলে লাগাচ্ছেন আকর্ষণীয় সব রং, যার কেমিক্যাল চুল থেকে ত্বক সব ক্ষেত্রেই বিপজ্জনক। তাই চুল কালার ক্ষেত্রে যেসব বিষয় জানা দরকার তা জানিয়েছেন ভারতের ডা. বি. সি. রায় হাসপাতালের ডার্মাটোলজিস্ট ডা. গৌরব রায়। তার ভাষায় সেগুলো তুলে ধরা হল।
‘চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা।’ বিদিশার নিশার মতো ঘন কালো চুল এখন অতীত। তিরিশের কোঠায় ঢোকামাত্রই কাঁচা-পাকা চুল এখন অধিকাংশকেই চিন্তায় ফেলছে, এ ছাড়াও কেউ কেউ স্বেচ্ছায় চুলে রং করছেন। কালো আজ আর ভালো নয়, এখন নারীরা রঙিন চুলের নেশায় মেতেছেন। তাই লাল, নীল, হলুদ, সবুজ চুলে বাদ নেই কিছুই। এই পাশ্চাত্য ট্রেন্ড আদৌ কি চুলের জন্য ভালো? শুধু চুলই নয়, শরীরেও কিন্তু এই রং ব্যবহারের নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে।
রাসায়নিকযুক্ত হেয়ার কালার ব্যবহারে সতর্কতা
দীর্ঘদিন ধরে কেউ অ্যামোনিয়াযুক্ত হেয়ার কালার বা ডাই ব্যবহার করলে তাদের মধ্যে কোনো জিনিসের গন্ধ না পাওয়ার মতো প্রবণতা দেখা যায়। অ্যামোনিয়াযুক্ত ডাই ব্যবহারের সময় নিশ্বাসের মাধ্যমে সেই গন্ধ ফুসফুসে গিয়ে অ্যাজমা রোগীদের মারাত্মক ক্ষতি করে। রঙে থাকা প্যারাফেলিনিনডায়ামাইন চুলের জন্য ক্ষতিকর, তবে বিভিন্ন গবেষণার তথ্য এই অত্যাধুনিক চুলের রং বা ডাই থেকে ক্যানসার হওয়ার কোনো প্রমাণ দেয়নি।
প্রাকৃতিক রঙের ব্যবহার
প্রাকৃতিক উপকরণ মেহেদি পাতা, চা বা কফি ফোটানো জল, বিট-গাজরের নির্যাস দিয়ে কিছু প্রতিষ্ঠান অ্যামোনিয়া ও পিপিডি ছাড়া প্রাকৃতিক উপায়ে হেয়ার কালার তৈরি করে। এতে কোনো রকম প্রতিক্রিয়া বা ঝুঁকি থাকে না এবং চুলের কোনো ক্ষতিও হয় না।
চামড়া থেকে একটু দূরে রং লাগানো
ত্বকের চামড়া থেকে সবসময় একটু দূরে রং লাগানো ভালো। রং যাতে ত্বকের সংস্পর্শে না আসে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। অ্যামোনিয়াযুক্ত ডাই লাগিয়ে চুল ধোয়ার সময় সেই পানি ত্বকের অন্য জায়গায় লাগলে এবং এতে থাকা কেমিক্যালের ঝাঁজালো গন্ধ নাক, মুখ, চোখ ও চামড়ার মাধ্যমে ভেতরে প্রবেশ করলে বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। তাই সবসময় অ্যামোনিয়াহীন রংই ভালো। আপাতদৃষ্টিতে লাল, বাদামি বা কোনও স্থায়ী রংই চুলের জন্য উপকারী নয়।
উপাদানের কথা মাথায় রাখা
মেহেদির রং সবসময়ই হালকা হওয়া উচিত। ‘ফেনল’ সমৃদ্ধ যেকোনো চুলের রং ব্যবহারে চুল রুক্ষ ও নষ্ট হতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে চুলে রং করলে তা ত্বকের সংস্পর্শে এলে এগজিমার সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ ছাড়া এ ধরনের কৃত্রিম রঙে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড থাকে যা চুলের মেলানিন তথা প্রাকৃতিক কালো রংকে ভেঙে দেয়। ফলে চুল সাদাটে হয়ে যায়। সে জন্য চুলে রং বাছাই করার আগে অবশ্যই উপাদানের কথা মাথায় রাখতে হবে।