মুখরোচক খাবার মানেই পুরান ঢাকা। আর বিশেষ বিশেষ দিনে বাহারি রকমের খাবার তো থাকেই। পুরান ঢাকার ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের কাছে দুই ঈদের পর শবে বরাতের রাতটিই অন্যতম বড় ধর্মীয় উৎসব। আর এই রাত উদযাপনের অন্যতম অনুষঙ্গ হচ্ছে রুটি-হালুয়া।
পুরান ঢাকার চকবাজারের মূল সড়কের পাশাপাশি গেন্ডারিয়া রেলস্টেশন রোড, লোহারপুল মোড়, নাজিরাবাজার, কলতাবাজার, নারিন্দা মোড়, বেগমগঞ্জ, সূত্রাপুর, মালিটোলা মোড়, রায় সাহেবের বাজারে শবে বরাতে শামিয়ানা টাঙিয়ে হালুয়া-রুটির বেচা-কেনা হয়। এছাড়াও এ রাতকে কেন্দ্র করে ঐতিহ্যবাহী আনন্দ বেকারি, বোম্বে সুইটস অ্যান্ড কাবাব, ইউসুফ বেকারি, আল-রাজ্জাক কনফেকশনারি, কুসুম বেকারিসহ সব বেকারির দোকানে বিশেষ ধরনের রুটি পাওয়া যায়। এসব খাবারের দোকানের আশপাশে এলেই রুটির মিষ্টি একটা ঘ্রাণ নাকে এসে ঠেকে। রুটি নিতে গুলশান, বনানী, ধানমন্ডি, মিরপুর, গাবতলী থেকে শুরু করে ঢাকার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোকজন আসেন।
প্রতিবছরের মতো এবারও পুরান ঢাকার অলিগলিতে দোকানিরা বিভিন্ন ধরনের রুটির পসরা সাজিয়ে বসেছেন। মঙ্গলবার সরেজমিনে পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা যায়, শবে বরাত উপলক্ষে প্রতি পিস ফেন্সি রুটি কেজি প্রতি ১৫০-২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফুল ও মাছ আকৃতির বাহারি নকশায় ফুটিয়ে তোলা হয় এসব রুটি।
শবে বরাতের দিনে পুরান ঢাকার প্রতি গলিতেই বিভিন্ন বেকারি কিংবা কনফেকশনারি সামনে ফেন্সি রুটির পসরা সাজিয়ে বসেন দোকানিরা। এ রুটি মিষ্টি জাতীয় হয়ে থাকে। তাছাড়া ফেন্সি রুটি দিয়ে খাওয়ার জন্য পাশাপাশি বিক্রি করা হয় বুটের ও গাজরের হালুয়া। হালুয়া বাটিপ্রতি ৩০ টাকা থেকে শুরু হয়ে ১৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
শবে বরাতে এই রুটি আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতেও পাঠানো হয়। বিশেষ করে শ্বশুর-শাশুড়িরা জামাতার বাড়িতে আনুষ্ঠানিকভাবে এই রুটি পাঠান।
স্থানীয়রা জানান, উনিশ শতকের শেষের দিকে ঢাকার নবাবদের হাত ধরে শবে বরাত পালনের ব্যাপক প্রচলন শুরু হয়। মুঘল আমল থেকেই খাবারের এই ধারাবাহিকতা চলে আসছে। নবাবরা বেশ ঘটা করেই শবে বরাত পালন করতেন। সে সময়ে আলোকসজ্জা করা হতো। পাশপাশি মিষ্টি বিতরণ করা হতো। এখন বাংলাদেশে শবে বরাত পালন ধর্ম এবং সংস্কৃতির অংশ হয়ে গেছে।
গেন্ডারিয়া মোড়ে শামিয়ানা টাঙিয়ে খাবারের পসরা সাজিয়ে বসা জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, রুটি তৈরিতে ময়দার সঙ্গে দুধ, ডিম, ঘি, কিসমিস, সাদা তিল ও কাজুবাদাম ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়াও হালুয়ার মধ্যে রয়েছে পেঁপে, চালকুমড়া, মিষ্টি কুমড়া, ডাল, ময়দা, সুজি, গাজরসহ বিভিন্ন প্রকারের হালুয়া।
রায়সাহেব বাজারে কুসুম কনফেকশনারির মালিক আহমদ শরীফ বলেন, শবে বরাত উপলক্ষেই আমরা বিশেষ ধরনের রুটি বানিয়ে থাকি। সকাল থেকে বিক্রি শুরু করেছি, বেচাকেনা ভালোই চলছে। জিনিসপত্রের দাম বাড়তি তারপরেও রুটির কেজি প্রতিবারের মতো কাছাকাছিই রাখা হয়েছে।