বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বিদ্যানন্দের জীর্ণ পাঠাগার থেকে বার্তা

  •    
  • ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ২১:৫৭

বিদ্যানন্দের স্বেচ্ছাসেবক মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘পুরনো শত শত পাঠাগার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বইয়ের অভাবে। বই না থাকায় পাঠক থাকে না। আর পাঠক না থাকলে পাঠাগার থাকে না। এই স্টলের ডিজাইনের মাধ্যমে আমরা সেসব পাঠাগারের চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। সেসব পাঠাগারকে জাগিয়ে তুলে নতুন রূপে ফেরাতে আমাদের এই উদ্যোগ।’

অমর একুশে বইমেলার বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গণে ৮০৫ থেকে ৮২০ পর্যন্ত স্টলগুলোর অবস্থান একটু ভেতরের দিকে। পাঠক বা দর্শনার্থীর খুব বেশি আনাগোনা নেই এদিকে। তবে কেউ ওদিকে এগুলে ৮০৯ নম্বর স্টল দেখে স্বাভাবিকভাবেই থমকে দাঁড়াবেন। পাঠাগারের রূপ দেয়া স্টলটির দৈন্যদশা এবং বিপণনকর্মী হিসেবে থাকা দুই প্রতিবন্ধী যে কারও দৃষ্টি কাড়বে।

স্টলের বইয়ের তাকগুলো ঘুণে ধরা। মনে হবে যেকোনো মুহূর্তে ভেঙে পড়বে। বইগুলোর মলাটে ধুলোর আস্তরণ। পৃষ্ঠাগুলো খেয়ে ফেলছে পোকায়। পড়ে আছে ভাঙা চেয়ার ও টেবিল। প্রবেশ পথের নামফলকেও ধরেছে মরিচা। অযত্ন-অবহেলার একটা ছাপ ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে স্টলটিতে।

কথা বলে জানা যায়, স্টলটি বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের। স্টলের এই প্রকৃতির মাধ্যমে তারা সমাজে একটা বার্তা দিতে চায়।

কী সেই বার্তা জানতে চাইলে স্টলে থাকা বিদ্যানন্দের স্বেচ্ছাসেবক মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘পুরনো শত শত পাঠাগার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বইয়ের অভাবে। বই না থাকায় পাঠক থাকে না। আর পাঠক না থাকলে পাঠাগার থাকে না। এই স্টলের ডিজাইনের মাধ্যমে আমরা সেসব পাঠাগারের চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। সেসব পাঠাগারকে জাগিয়ে তুলে নতুন রূপে ফেরাতে আমাদের এই উদ্যোগ।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের এখান থেকে কেউ বই কিনলে তাকে সেই বইয়ের একটা কপি আমরা ফ্রি দিচ্ছি। সেই ফ্রি বইতে উনি শুভেচ্ছা বার্তা লিখে আমাদের কাছে ডোনেট করে যাবেন। এভাবে এ পর্যন্ত পাঁচশরও অধিক বই সংগ্রহ হয়েছে।

‘এসব বই গ্রামের কোনো জীর্ণ-শীর্ণ পাঠাগার, বৃদ্ধাশ্রম বা মাদরাসা বা এতিমখানার পাঠাগারে পাঠানো হবে। যেখানে পাঠাগার ভেঙে গেছে বা পাঠাগার নেই, সেখানে আমরা নতুন পাঠাগার বানিয়ে দেব।’

‘এই স্টলে থাকা বইগুলো আমাদের প্রকাশনীর। বিদ্যানন্দের একটা প্রকাশনী আছে। ছয় বছর ধরে আমরা বইমেলায় প্রকাশনী স্টলও পাচ্ছি। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মাঠে ৩৫০ নম্বর স্টলটিও বিদ্যানন্দের।’

আরেকটি ব্যতিক্রমী দিক হলো, এই স্টলে বিপণনকর্মী হিসেবে যাদের রাখা হয়েছে তারা দু’জনই দৃষ্টিহীন। পাঠকদের তারা বই কিনে একটি বই ডোনেট করার জন্য আহবান জানাচ্ছেন। আর কোনো ক্রেতা এলে তাদের স্টল সম্পর্কে বিস্তারিত জানাচ্ছেন।

তাদের একজন মোহাম্মদ মহসিন। তিনি নীলফামারীর ছেলে। এবার সরকারি বাংলা কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে তিনি জিপিএ ফাইভ পেয়েছেন।

মহসিন বলেন, ‘আমি বিদ্যানন্দের একজন স্বেচ্ছাসেবক। বিদ্যানন্দ হঠাৎ করে ভাবল যে তারা প্রতিবন্ধী মানুষকে দিয়ে স্টল পরিচালনা করবে। তাদের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। এটি সচেতনাতামূলক কাজ। বাংলাদেশের অনেক সেক্টর প্রতিবন্ধী মানুষকে কাজ করতে দিতে চায় না। যে কাউকে কাজ দিলেও তাদেরকে কাজ করার আগে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। সেই প্রশিক্ষণটা প্রতিবন্ধীদের দেয়া হলে কিছু সীমাবদ্ধতা ছাড়া প্রতিটি সেক্টরে প্রতিবন্ধীরা কাজ করতে পারবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. আল আমিন বিদ্যানন্দের এই স্টল থেকে দুটি বই কিনে বের হচ্ছিলেন। এই ব্যতিক্রম স্টল সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘বিদ্যানন্দ মানবিক কাজের মাধ্যমে দেশে তাদের সুন্দর একটা ইমেজ তুলে ধরেছে। এসব কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তারা একুশে পদকও পেয়েছে।

‘এই স্টলটিও খুব সুন্দর উদ্যোগ। একটা বই কেনার মাধ্যমে আরেকটি বই কোনো পাঠাগারে ডোনেট করার সুযোগটা ভালো লাগার বিষয়। অবশ্যই এটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ।’

মেলার ২৩তম দিনে ৭৮ নতুন বই

বৃহস্পতিবার অমর একুশে বইমেলার ২৩তম দিনে নতুন বই এসেছে ৭৮টি।

বিকাল ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় জন্মশতবর্ষে বঙ্গবন্ধুবিষয়ক কথাসাহিত্য, নাটক ও চলচ্চিত্র এবং জন্মশতবর্ষে বঙ্গবন্ধুবিষয়ক গবেষণা ও মুক্তগদ্য চর্চা শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান।

প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মিল্টন বিশ্বাস এবং ফরিদ কবির। আলোচনায় অংশ নেন রফিকুর রশীদ, সুভাষ সিংহ রায়, সরিফা সালোয়া ভিনা ও মাসুদ পথিক। সভাপতিত্ব করেন গোলাম কুদ্দুছ।

লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কামাল চৌধুরী, জহরত আরা, মোস্তফা আল-মেহমুদ রাসেল ও আনজীর লিটন।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন তার রাণা, দুলাল সরকার, কামরুজ্জামান, রাজ কুমার সাহা, মাহমুবা ফারুক, আতিক আজিজ।

আবৃত্তি পরিবেশন করেন শফিকুল ইসলাম বাহার, চৌধুরী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর, জিনিয়া ফেরদৌস কনা ও অনন্যা সাহা।

এছাড়া ছিল হাসান আবদুল্লাহ বিপ্লবের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘ঘাসফুল’, শাহিনুর আল- আমিনের পরিচালনার সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘সম্প্রীতি সংস্কৃতি সংসদ’-এর পরিবেশনা।

সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী ঝুমা খন্দকার, চাল খান, ফাহিম হোসেন চৌধুরী, অণিমা রায়, মঞ্জু সাহা, মিরা মণ্ডল ও আশরাফ মাহমুদ।

যন্ত্রানুষঙ্গে ছিলেন রবীন্দ্রনাথ পাল (তবলা), রবিনস চৌধুরী (কি-বোর্ড), হাসান আলী (বাঁশি) ও বিশ্বজিৎ সেন (মন্দিরা)।

শুক্রবারের অনুষ্ঠানসূচি

শুক্রবার অমর একুশে বইমেলার ২৪তম দিন। মেলা চলবে সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত।

সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত মেলায় শিশুপ্রহর চলবে।

এ বিভাগের আরো খবর