বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বইমেলা: দৃষ্টিহীনে স্পর্শ ব্রেইলের আলো বিতরণ

  •    
  • ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ২০:৪৭

অমর একুশে বইমেলার বাংলা একডেমি অংশে সবার নজর কাড়ছে স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনীতে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের বই পড়ার দৃশ্য। কেউ বই দেখছেন, কেউ দাঁড়িয়ে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের পড়া শুনছেন। আবার কেউ কৌতূহলী মন নিয়ে ব্রেইল পদ্ধতি সম্পর্ক জানতে চাইছেন। সব প্রশ্নের জবাব দিচ্ছেন স্পৰ্শ ব্রেইল প্রকাশনীর স্টলের সহযোগীরা।

অমর একুশে বইমেলার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে দৃষ্টিহীন মানুষের জন্য আলো বিতরণ করছে স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনা। প্রকৃতির নিষ্ঠুর নিয়মে আটকে পড়া দৃষ্টিবঞ্চিতদের নিয়ে স্পর্শ ফাউন্ডেশনের এই আয়োজন।

বাংলা একডেমি অংশে সবার নজর কাড়ছে স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনীতে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের বই পড়ার দৃশ্য। কেউ বই দেখছেন, কেউ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের পড়া শুনছেন। আবার কেউ কৌতূহলী মন নিয়ে ব্রেইল পদ্ধতি সম্পর্ক জানতে চাইছেন। সব প্রশ্নের জবাব দিচ্ছেন স্পৰ্শ ব্রেইল প্রকাশনীর স্টলের সহযোগীরা।

কথা বলে জানা গেল- বই বিক্রি নয়, দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরা যেন পড়তে পারে সে তথ্য জানাতেই মেলায় স্টল নিয়েছে স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনী। ২০১১ সাল থেকে প্রকাশনা সংস্থাটি ব্রেইল আকারে বই প্রকাশ করে আসছে। ২৪ ফেব্রুয়ারি তারা নতুন ৩০টি ব্রেইল বইয়ের মোড়ক উম্মোচন করবে। সর্বমোট তারা ১৩১টি বই প্রকাশ করেছে।

স্পৰ্শ ব্রেইল প্রকাশনীর স্টলের স্বেচ্ছাসেবক ঊষা বলেন, ‘দৃষ্টিহীনদের মাঝে সাহিত্যের রস পৌঁছানোই আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য। বইমেলায় শুধু আমাদের এই প্রকাশনীতেই দৃষ্টিহীনদের ব্রেইল বই পাওয়া যায়। আমরা চাই, যারা দৃষ্টিহীন তারাও যেন সাহিত্যের রস থেকে বঞ্চিত না হয়।

‘তারা কেন বঞ্চিত হবে? তাদেরও তো ইচ্ছে থাকে যে তারা বিভিন্ন লেখকের গল্প-উপন্যাসের বই পড়বে। তারা জাফর ইকবাল স্যার, হুমায়ুন আহমেদ স্যারকে পড়তে চায়। কিন্তু এসব বই তো আর ব্রেইলে পাওয়া যায় না। বইমেলার প্রতিটি স্টলে যেন ব্রেইল বই থাকে সেটাই আমাদের সামাজিক আন্দোলনের লক্ষ্য।’

ঊষা বলেন, ‘আমরা এখানে কোনো ব্রেইল বই বিক্রি করি না। এখানে দৃষ্টিহীনরা আসে আর বসে বই পড়ে। আর আমাদের যখন প্রকাশনা উৎসব হয় তখন যেসব দৃষ্টিজয়ী রেজিস্ট্রেশন করেছে তাদের মাঝে ব্রেইল বই ফ্রিতে বিতরণ করা হয়।

‘গত বছর পর্যন্ত আমাদের মোট প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ছিল ১০১টি। আর এ বছর সুলতানাস ড্রিম, চাঁদের পাহাড়, বাবা যখন ছোট, আমার দেশের মাটির গন্ধে, একাত্তরের চিঠিসহ মোট ত্রিশটি বই আমরা প্রকাশ করছি। ২৪ ফেব্রুয়ারি আমাদের প্রকাশনা উৎসবে এসব বই ফ্রিতে বিতরণ করা হবে।’

ব্রেইল বই লেখা আর পড়ার পদ্ধতি সম্পর্কে ঊষা বলেন, ‘ব্রেইল বই পড়ার জন্য ছয় ডটের একটি কোড নম্বর থাকে। বাংলার প্রতিটি বর্ণ এই ছয় ডট দিয়ে লেখা। ব্রেইল বই পড়তে হলে তাদের এই ছয় ডটের কোড শিখতে হয়। এরপর তারা পৃষ্ঠাকয় থাকা ছাপ হাত দিয়ে স্পর্শ করে বুঝতে পারে কোন বর্ণ দিয়ে কী শব্দ লেখা হয়েছে।’

ব্রেইল বই তৈরির খরচ সম্পর্কে জানতে চাইলে স্টলে থাকা সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্র তরিকুল ইসলাম নাজিম বলেন, ব্রেইল বই করার আলাদা পদ্ধতি আছে। এগুলো একটু কস্টলি। এই প্রিন্টারগুলো ভারতে পাওয়া যায়। যেসব পাতা দিয়ে এই বইগুলো তৈরি করা হয় এগুলো পানপাতা, ১৫০ গ্রাম। প্রতিটি পৃষ্ঠা কিনতে ৪-৫ টাকা পড়ে যায়। আর প্রিন্টিং কস্ট, যে মুদ্রণ করবে তাদের বিল আছে। প্রকাশনী সংস্থার ব্যবসা তো আছেই। ওভারঅল এটা এক্সপেনসিভ একটি বিষয়।’

স্টলে এসে ব্রেইল বই পড়ছিলেন বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর দৃষ্টিজয়ী শিক্ষার্থী মহিনি আক্তার তামিম। তিনি বলেন, ‘এই ব্রেইল পদ্ধতি শিখতে আমার এক মাস সময় লেগেছে। ছয় বছর বয়সে আমি প্রথম স্কুলে ভর্তি হই। তখনই আমার ব্রেইল পদ্ধতি শেখা।

‘আমার হুমায়ুন আহমেদ স্যারের হিমু সমগ্র, মিসির আলী; বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পথের পাঁচালি বইগুলো পড়ার অনেক ইচ্ছে। কিন্তু এই বইগুলোর ব্রেইল না থাকায় সেই ইচ্ছে পূরণ করতে পারছি না। এই বইগুলো ছাড়াও আমি রবীন্দ্রনাথকে জানতে চাই। নজরুলকে পড়তে চাই। আমি চাই যেন বড় বড় কবিদের বইগুলো কয়েকটি হলেও ব্রেইল করা হয়।’

তামিম বলেন, ‘আমি এখানে এসে চাঁদের পাহাড়, সূর্যের দিন, একাত্তরের চিঠি, আমার বন্ধু রাশেদসহ আরও কয়েকটি বই শেষ করেছি। একমাত্র স্পর্শই আমাদের জন্য ব্রেইল বই সরবরাহ করে। তাই আমরা স্পর্শের কাছে কৃতজ্ঞ।’

মেলার ২০তম দিনে নতুন ১০০ বই

সোমবার ছিল অমর একুশে বইমেলার ২০তম দিন। এদিন নতুন বই এসেছে ১০০টি। বিকেল ৪টায় মেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘বাংলাদেশের বিমূর্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নূরুননবী শান্ত। আলোচনায় অংশ নেন বেলাল হোসেন ও হোসেন আল মামুন। সভাপতিত্ব করেন কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা।

লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন মোহাম্মদ সাদিক, জয়দীপ দে, স. ম. শামসুল আলম ও আলী ছায়েদ।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন আনিসুল হক, দীলতাজ রহমান, সাহেদ মন্তাজ, ফারহান ইশরাক, নাসরীন নঈম, জাহাঙ্গীর হোসাইন, রুহুল মাহবুব, বোরহান মাসুদ, নাদির খানম এবং লুনা রাহনুমা।

আবৃত্তি পরিবেশন করেন মাহমুদা আখতার, দেওয়ান সাইদুল হাসান, নাজমুল আহসান, জি. এম. মোর্শেদ এবং তিতাস রোজারিও। পুঁথিপাঠ করেন জালাল খান ইউসুফী।

অনুষ্ঠানসূচি

মঙ্গলবার শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। রাত সাড়ে ১২টায় কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করে দিনের কর্মসূচি শুরু হবে।

মেলা চলবে সকাল ৮টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত।

সকাল ৮টায় বইমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে স্বরচিত কবিতা পাঠের আসর। এতে সভাপতিত্ব করবেন কবি জাহিদুল হক।

বিকাল চারটায় অনুষ্ঠিত হবে অমর একুশে বক্তৃতা-২০২৩। স্বাগত বক্তব্য দেবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। অমর একুশে বক্তৃতা-২০২৩ শীর্ষক একুশে বক্তৃতা দেবেন রামেন্দু মজুমদার। সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন।

সন্ধ্যায় রয়েছে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ, আবৃত্তি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

এ বিভাগের আরো খবর