রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নির্দেশে ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে যে সামরিক অভিযান শুরু হয়েছিল, ১০ দিন বাদে তার বার্ষিকী। এ সময়ে প্রাণ গেছে হাজারো সামরিক-বেসামরিক মানুষের। একটু নিরাপদে বাঁচার আশায় ঘর ছেড়ে পালিয়ে বিদেশে গেছে ৮০ লাখের বেশি ইউক্রেনীয়। যুদ্ধ তবুও চলছে সমরের নিয়মে।
করোনাভাইরাস মহামারি আকারে এসে পৃথিবীকে উলট-পালট করে দিয়ে যখন একটু ক্ষান্ত দিয়েছিল, তখনই মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে এলো দৃশ্যত অন্তহীন এ যুদ্ধ। এ দুইয়ের প্রভাব ও সুনীতির অভাবে একে একে ঘায়েল হতে থাকে বিভিন্ন দেশের অর্থনীতি। বাদ পড়েনি মোড়ল রাষ্ট্রগুলোও।
মহামারি ও যুদ্ধের মধ্যে ধুঁকতে থাকা শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি পঙ্গু হয়ে যায় গত বছরের মে মাসের দ্বিতীয়ার্ধে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকটে থাকা দক্ষিণ এশিয়ার দেশটি হয়ে পড়ে ঋণখেলাপি।
এ অঞ্চলের আরেক দেশ পাকিস্তানের অবস্থাও সঙ্গিন। রিজার্ভ কমতে কমতে ৩০০ কোটি ডলারের নিচে নেমে গেছে। সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে সহায়তার অর্থ পেতে আদাজল খেয়ে নেমেছেন রাষ্ট্রের কর্তারা।
প্রতিবেশীদের মতো রিজার্ভ ছাড়াও নানামাত্রিক সংকটে আমরা। আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের প্রথম কিস্তি পেলেও আমাদের ঘর আলোকিত করার বিদ্যুতের দাম বেড়েছে; রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডারের মূল্য চড়া। মাছ, মাংস, তরিতরকারির দর বাড়ার প্রতিযোগিতা চলছে। শীতে কিছুটা কমে আসা লোডশেডিং গরমে ঘন ঘন হওয়ার শঙ্কাও আছে।
দুই মহাদেশ বিস্তৃত তুরস্ক ও যুদ্ধবিধ্বস্ত প্রতিবেশী সিরিয়ায় ৬ ফেব্রুয়ারির সর্বনাশা ভূমিকম্পে মৃত্যু লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে ৩৬ হাজার ছাড়িয়েছে। জমে যাওয়া শীতে ভয়াবহ দুর্যোগে রাতারাতি ফকির হয়ে গেছেন অনেক ‘বাদশাহ’। আকস্মিক শূন্যতা সঙ্গী হয়েছে লাখ লাখ মানুষের।
চারিদিকে এত দুর্দশা আর হতাশার মধ্যে আনন্দের তীব্র সংকটে থাকা বাংলাদেশিদের কাছে নবযৌবনের বার্তা নিয়ে এসেছে ঋতুরাজ বসন্ত। শুধু যোগ-বিয়োগের খেলাময় জীবনে এ যেন ক্ষণিকের বিরতি।
অফিস-বাসা-অফিসে নিয়মিত হয়ে পড়া মধ্যবিত্ত আজ কিছু সময়ের জন্য থাকতে চাইবেন আত্মভোলা হয়ে; বর্ণিল জামা গায়ে উৎসবের রঙে রাঙাতে চাইবেন ক্রমশ বিবর্ণ হয়ে পড়া চিত্তকে। উচ্চবিত্তও পহেলা ফাল্গুন আর ভ্যালেন্টাইন’সকে জায়গা করে দেবেন রুটিনে।
নিম্নবিত্তের জীবনেও লাগবে ফাগুনের ঢেউ। তার ফেরি করা জিনিসে তৃপ্ত হবে বাকি দুই বিত্তের চিত্ত।
শীতে আড়াল হয়ে যাওয়া রূপের আগুন ফাগুনে ফিরে পাবে প্রকৃতি। পত্রময় বৃক্ষে দেখা যাবে নতুন পাতার বাহার। আপন রঙে ভুবন রাঙাবে ফুল গাছগুলো।
ফলদ গাছের মুকুলগুলো ধীরে ধীরে হতে থাকবে রসের আধার। পুষ্প, বৃক্ষের এই রূপের মুকুটে পালক যুক্ত করবে বর্ণিল পাখিরা। এককথায় দুর্যোগ আর দুর্ভাবনায় একাকার পৃথিবীকে ক্ষণিকের জন্য রূপ, রসে ভরিয়ে দেবে ফাল্গুন।
মৃত্যুর মিছিল আর পাশবিকতার উৎসবের মধ্যে যেমন বন্ধ থাকে না সন্তান জন্মদান, তেমনই দুঃখ-দুর্দশার মধ্যেও থেমে থাকে না বসন্তের জয়গান।