প্রেমের সবচেয়ে অন্তরঙ্গ ধাপ হলো চুমু। অজস্র কথা যা প্রকাশ করতে পারে না তা সহজভাবে বুঝিয়ে দিতে পারে দু ঠোঁটের আলতো একটু স্পর্শই। তাই হয়তো ‘শেষের কবিতায়’ লাবণ্যর উদ্দেশে অমিত রায় লিখেছিল, ‘চুমিয়া যেয়ো তুমি/আমার বনভূমি/দক্ষিণ-সাগরের সমীরণে/যে শুভখনে মম/আসিবে প্রিয়তম/ডাকিবে নাম ধরে অকারণ।’
প্রিয়জনকে চুমু খেতে; ভালোবাসার প্রকাশ ঘটাতে আসলে কোনো দিনক্ষণের দরকার হয় না স্বাভাবিকভাবেই। তবুও এর জন্য একটা বিশেষ দিন থাকা তো মন্দ নয়। তাই অনেক বছর ধরে চলছে আসছে বিশ্ব চুম্বন দিবস। প্রতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি এ দিবস পালন করা হয়।
কোনও দেশে চুম্বন অভিবাদন হিসেবে চিহ্নিত হয়, কোনও দেশে জনসমক্ষে চুমু খাওয়া মানেই কটূক্তি। প্রকাশ্যে চুমু খাওয়া ও তার ছবি নিয়ে দেশে ২০১৮ সালের জুলাইয়ে ঘটেছিল এক আলাচিত ঘটনা। সেদিন বৃষ্টি ভেজা দুপুর গড়িয়ে যখন বিকেল হবে হবে ভাব, তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের সামনে, রাস্তার ধারে দুই তরুণ-তরুণীর বসে চুমু খাওয়ার এক ছবি তুলেছিলেন এক ফটোগ্রাফার।
ছবিটি তোলার পর ‘বর্ষা মঙ্গল কাব্য, ভালোবাসা হোক উন্মুক্ত’ ক্যাপশনে ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন জীবন আহমেদ। এ নিয়ে তখন ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয়।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, চুম্বন আসলে প্রেমের, ভালবাসার, আদরের, স্নেহের অঙ্গ। চুম্বন মানেই কেবল ঠোঁটে ঠোঁট নয়, চুমু খাওয়া যেতে পারে হাতে, গালে, কপালে, নাকে, ইত্যাদি শরীরের বিভিন্ন অংশে।
চুম্বনের একটি দীর্ঘ ইতিহাস আছে, কয়েক হাজার বছর আগের। চুম্বনের মতো আচরণের প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় বেদ নামক সংস্কৃত ধর্মগ্রন্থে। প্রাচীন কবিতায়ও আছে চুম্বনের কথা। বছরের সবচেয়ে রোমান্টিক দিনটি ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবসের আগের দিনই অনেক বছর ধরে পালন করা হচ্ছে চুম্বন দিবস।
বিশেষজ্ঞদের মতে, চুমু স্বাস্থ্যসম্মত। চুমু প্রিয়জনের প্রতি ভালোবাসা প্রেম ও যত্নের প্রকাশ, তাই প্রিয়জনের কাছ থেকে পাওয়া এই চুমু অনেকক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করে। চুমু স্ট্রেস হরমোন কমায়, শারীরিক ও মানসিক চাপ কমাতে চুমু অপরিহার্য।
চিকিৎসকেদের মতে, চুমু অ্যালার্জির লক্ষণও কমাতে পারে। চুম্বনের ফলে ভালো অনুভূতি হয়, কারণ এর ফলে ভালো অনুভূতির হরমোন প্রকাশ করে। এক ধরনের হরমোন বের হয় চুম্বনের ফলে। যার ফলে মেজাজের ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে।
চুমু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। ঠোঁটে চুমু খাওয়ার সময়ে ব্যাকটেরিয়া বিনিময় হয়, যা ইমিউন সিস্টেমের ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি , চুমু শরীরের এড্রিনালিন হরমোনের ক্ষরণ ঘটায়, যা শরীরের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
চুমু এক প্রকারের ব্যায়ামও বটে। চুমুর সময় মুখের দুই দিক থেকে ত্রিশটির মত মাসেলের ব্যবহার হয়ে থেকে। তাই চুমু দিলে মুখের ব্যায়াম হয়। গবেষণায় প্রমাণিত, সামান্য একটা চুমু মানসিক চাপ, হাইপারটেনশন অনেকটাই কমিয়ে আনতে সক্ষম। চুম্বনের সময় প্রতি মিনিটে প্রায় ২ থেকে ২৫ ক্যালরি পর্যন্ত বার্ন হয়।
আপনার আলতো চুমুর ছোঁয়ায় প্রিয়জনের মুখের নরম হাসিই বুঝিয়ে দেবে তার জীবনে আপনি কতটা গুরুত্বপূর্ণ। বাঙালির যে কোনও আবেগ গভীরভাবে প্রকাশের শেষ আশ্রয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাইতো অনেক আগেই বলেছেন- ‘দুটি তরঙ্গ উঠি প্রেমের নিয়মে/ভাঙিয়া মিলিয়া যায় দুইটি অধরে/ব্যাকুল বাসনা দুটি চাহে পরস্পরে/দেহের সীমায় আসি দুজনের দেখা/প্রেম লিখিতেছে গান কোমল আদরে/অধরেতে থরে থরে চুম্বনের লেখা।’