অমর একুশে বইমেলা মানেই হাজারও বইয়ের সমারোহ। এই বিশাল আয়োজন থেকে কিছু বই পাঠককে বেশ টানে। বয়স ভেদে পাঠকরা ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের বইয়ে হাত বাড়ায়। স্বভাবতই তেমন বইয়ের সম্ভার থাকা স্টলগুলোতে ক্রেতা-দর্শনার্থীর ভিড় থাকে তুলনামূলক বেশি।
বাংলা একাডেমি ও সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে চলমান মেলা ঘুরে বৃহস্পতিবার তেমনটাই দেখা গেছে। কিছু প্রকাশনীতে কবিতা বিশেষ করে প্রেমের কবিতার বই বেশি বিক্রি হচ্ছে। আবার কিছু প্রকাশনীতে অনুবাদগ্রন্থ, উপন্যাস আর ভ্রমণ কাহিনীর কাটতি বেশি। তবে তরুণী ক্রেতাদের ঝোঁক বেশি রোমান্টিক উপন্যাস আর কবিতায়।
বিভিন্ন প্রকাশঈর বিক্রয়কর্মীরাও তেমনটাই জানালেন।
অক্ষর প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী কাদের হাজী বলেন, ‘গল্পের বইয়ের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গল্পগুচ্ছ, কবিতার মধ্যে রুদ্র মোহাম্মদ শহীদুল্লাহর কবিতার বই আর জীবনী গ্রন্থের মধ্যে চেঙ্গিস খানের বই বিক্রি হচ্ছে। আর বাচ্চাদের বই তো আছেই। সে তুলনায় নতুন বইয়ের পাঠক কম।
‘তবে কবিতার বই বেশি বিক্রি হচ্ছে। আর মেয়েদের আগ্রহ বেশি প্রেমের কবিতার প্রতি। তারা প্রেমের কবিতার বই বেশি কিনছে। ছেলেরা বই কিনতে আসে না। গার্লফ্রেন্ড নিয়ে মেলায় আসে। তারপর গার্লফ্রেন্ডকে বই কিনে দিয়ে ছবি তুলে চলে যায়।’
সময় প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী সুপন্ত চাকমা বলেন, “আমাদের প্রকাশনী থেকে সায়েন্স ফিকশন বই বেশি চলছে। এসব বইয়ের মধ্যে জাফর ইকবাল স্যারের ‘প্রলয়’, ‘আমি পরামানব’, ‘ইকারাস’-এর বিক্রি বেশি। কবিতার বইয়ে তেমন সাড়া নেই। এছাড়া জাফর ইকবাল স্যার, আনিসুল হক স্যার আর হুমায়ূন আহমেদ স্যারের উপন্যাস ভালো বিক্রি হচ্ছে।”
তিনি বলেন, “মেয়েরা হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস বিশেষ করে ‘নবনী’, ‘তিতীর নীল তোয়ালে’, আর ‘আজ চিত্রার বিয়ে’ বেশি কিনছে।”
অনন্যা প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী শামিম হোসেন বলেন, “আমাদের এখানে থ্রিলার টাইপের বই বেশি বিক্রি হচ্ছে। আর দ্বিতীয় অবস্থানে আছে উপন্যাস। তার মধ্যে তৌহিদুর রহমান স্যারের ‘স্বপ্নস্নানের ফেরেশতা’ উপন্যাসটি বেশি বিক্রি হচ্ছে। আর হুমায়ুন আহমেদ স্যারের বই তো ক্রেতাদের প্রথম টার্গেট।”
কথাপ্রকাশ প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী রিয়াজ বলেন, ‘আমাদের প্রকাশন থেকে প্রবন্ধ আর গবেষণামূলক বই বেশি বিক্রি হয়। হরিশঙ্কর জলদাসের ‘কর্ণ’, রকিব হাসানের তিন গোয়েন্দা বইগুলো বেশি বিক্রি হচ্ছে। সিরাজুল ইসলাম স্যারের প্রবন্ধগুলোও পাঠক টানছে। মূলত প্রবন্ধই বেশি বিক্রি হচ্ছে। আর মেয়েদের রোমান্টিক উপন্যাসের প্রতি ঝোঁক বেশি।
ইত্যাদি প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী বলেন, “আমাদের এখানে অনুবাদগ্রন্থ আর থ্রিলার টাইপের বই বেশি বিক্রি হচ্ছে। এরপর বিজ্ঞানভিত্তিক বই আর গাণিতিক বইয়ের ভালো চাহিদা আছে। অনুবাদগ্রন্থের মধ্যে লায়লা ফেরদৌসের ‘কাইজেন’ বইটা ভালো বিক্রি হচ্ছে।
“আমাদের কবিতার বই থাকলেও সেগুলোতে সাড়া কম পাচ্ছি। আর বাচ্চাদের বই হলো মেলার প্রধান আকর্ষণ। রিয়াজ আহমেদের বাচ্চাদের বইগুলো ভালো চলে। আর এটা এক কথায় সবাই স্বীকার করবে যে মেয়েদের রোমান্টিক উপন্যাসের প্রতি আগ্রহ বেশি আর ছেলেরা অনুবাদগ্রন্থ।’