বর্তমানে দূষণ যে হারে বাড়ছে, তাতে মানুষের অ্যালার্জির প্রবণতা অনেক বেশি বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে শীতের সময় ডাস্ট অ্যালার্জিতে আক্রান্তের হার অন্য সময়ের তুলনায় কিছুটা বেশিই দেখা যায়। মূলত শীতকালে শুষ্ক আবহাওয়া, বাড়ি-রাস্তাঘাটের ধুলা অনেক সময় এই অ্যালার্জির কারণ হতে পারে। জেনে নেয়া যাক ডাস্ট অ্যালাৰ্জির লক্ষণ, কারণ, চিকিৎসা ও প্রতিকার সম্পর্কে।
লক্ষণসমূহ
অনবরত হাঁচি ও নাক থেকে পানি ঝরতে থাকে।
চোখ চুলকায়, লাল হয়ে যায়, চোখ থেকে ক্রমাগত পানি ঝরতে থাকে। চোখের নিচে ফুলে যেতে পারে।
নাক বন্ধ হয়ে যায়। নাক, মুখ, গলা চুলকাতে পারে। মুখের ভেতর তালু এবং গলার ভেতরেও চুলকাতে পারে। খুশখুশে কাশি হয়।
ডাস্ট অ্যালার্জি যে যে কারণে হতে পারে
পরিবারের কারও আগে থেকে অ্যালার্জির সমস্যা থাকলে বাকি সদস্যদেরও হতে পারে, তবে মনে রাখতে হবে এটি ছোঁয়াচে নয়।
অল্পবয়স্ক শিশু, হাঁপানি রোগী এবং গর্ভবতী মহিলাদের এ ধরনের অ্যালার্জি হতে পারে।
ডাস্ট মাইটস বা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ধুলার কণা বা পোকা বাতাসে ভেসে চলাচলের সময় নাকে ঢুকে জ্বালা সৃষ্টি করে। যার ফলে চুলকানি, হাঁচি, কাশি হতে পারে।
ঘাস বা ফুলের রেণু নাকে প্রবেশ করলে তা থেকেও অ্যালার্জিক রি-অ্যাকশন হয়।
আর্দ্র পরিবেশে ডাস্ট মাইটস বেশি থাকে। তাই বাসাবাড়ির পরিবেশ ভ্যাপসা হয়ে থাকলে অ্যালার্জির সমস্যা হতে পারে। শিশুদের ক্ষেত্রে বারবার নাক ওপরের দিকে ঘষার প্রবণতা দেখা যায়।
চিকিৎসা ও প্রতিকার
অ্যালার্জির জন্য দায়ী ফ্যাক্টর কোনটি, তা সঠিকভাবে নির্ণয় করতে কিছু পরীক্ষার প্রয়োজন। যেমন স্কিন অ্যালার্জি টেস্ট, ব্লাড টেস্ট ইত্যাদি।
চুলকানি, অনবরত হাঁচি, চোখ লাল হয়ে যাওয়া বা চোখ থেকে পানি ঝরতে থাকলে অ্যান্টি হিস্টামিনজাতীয় ওষুধ খেলে কিছুটা আরাম পাওয়া যায়। রিল্যাক্সড থাকুন, চোখ বন্ধ করে একটু রেস্ট নিন।
স্টেরয়েডজাতীয় স্প্রে ব্যবহার করে নাকের ভেতরের ফোলাভাব কমানো যায়।
নাক বন্ধ হয়ে থাকলে স্যালাইন সল্যুশন দিয়ে নাক পরিষ্কার করা যায়।
যেকোনো অ্যালার্জির সমস্যা দেখা দিলে ঠিক না হওয়া পর্যন্ত অ্যালার্জিজাতীয় খাবার যেমন- গরুর মাংস, ইলিশ মাছ, চিংড়ি, পুঁইশাক, বেগুন ইত্যাদি না খাওয়াই ভালো। এতে অ্যালার্জির সমস্যা আরও বেড়ে যায়।
বেশি করে সবুজ শাকসবজি খেতে হবে। সবুজ শাকসবজি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর সঙ্গে অ্যালার্জির প্রবণতা কমাতেও সাহায্য করে। সবুজ শাকসবজি শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন, খনিজের (মিনারেল) জোগান দেয়।
ডাস্ট অ্যালার্জির সমস্যায় গ্রিন টি বেশ ভালো কাজ করে। গ্রিন টির অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান অ্যালার্জির সমস্যার সঙ্গে লড়তে সাহায্য করে। চোখে লাল ভাব, র্যাশ বেরোনো ইত্যাদি রুখতে এটি অত্যন্ত কার্যকর।
মধু ডাস্ট অ্যালার্জি প্রতিরোধে কাজ করে। গবেষণা অনুযায়ী মধু পরিবেশে উপস্থিত অ্যালার্জেনের সঙ্গে শরীরকে খাপ খাওয়াতে সহায়তা করে। এ ছাড়া মধুতে থাকা প্রদাহবিরোধী বৈশিষ্ট্য অ্যালার্জি র্যাশ কমায়।
ডাস্ট অ্যালার্জির প্রভাব কাটাতে নেয়া যেতে পারে স্টিম বা গরম পানির ভাপ। এ জন্য একটি বড় পাত্রে গরম পানি নিয়ে তা থেকে নির্গত বাষ্প নাক ও মুখের সাহায্যে গ্রহণ করুন। অ্যালার্জির প্রভাব কমাতে কমপক্ষে ১০ মিনিট স্টিম বা ভাপ নিন। এতে নাকের বন্ধভাব দূর হবে।
মেনে চলুন
প্রতিদিনের ব্যবহার্য কাপড়চোপড়, চাদর, বালিশ ইত্যাদি মাঝে মাঝে কয়েক ঘণ্টা কড়া রোদে দিন।
সপ্তাহে অন্তত একবার বিছানার চাদর, বালিশের কভার পরিবর্তন করুন।
ডাস্ট অ্যালার্জি থাকলে বাসায় কার্পেট না রাখাই ভালো।
ঘরে যাতে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস প্রবেশ করতে পারে সেই ব্যবস্থা করতে হবে।
একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, অ্যালার্জির চিকিৎসা করেও এ সমস্যা থেকে একেবারে পরিত্রাণের উপায় নেই। তবে নিয়ম মেনে চললে এবং চিকিৎসকের পরামর্শমতো ওষুধ সেবন করলে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকা সম্ভব। তাই ডাস্ট অ্যালার্জির সমস্যা থেকে বাঁচতে বাইরে মাস্ক ব্যবহার করুন, হাইজিন মেনটেইন করুন ও সুস্থ থাকুন।
লেখক: লিভার, গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, এম এইচ শমরিতা হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজ