পৌষের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে প্রকৃতি। সারা দেশে জেঁকে বসেছে শীত। উত্তরের জনপদে বইছে কনকনে বাতাস। সিলেট অঞ্চলে শ্রীমঙ্গলে বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। জনজীবনে নেমে এসেছে স্থবিরতা।
শীতের এমন আয়োজনে ঢাকা শহর এতোদিন ছিল অনেকটাই ব্যতিক্রম। কয়েকদিন ধরে নগরে ঠাণ্ডা অনুভূত হলেও এর প্রভাব ছিল মূলত রাতে। দিন থেকেছে রৌদ্রকরোজ্জ্বল। ফলে শীতটা সেভাবে টের পাওয়া যায়নি।
এবার ঠান্ডা অনুভব করতে শুরু করেছে রাজধানীবাসীও। পৌষের ১৯তম দিনে এসে মঙ্গলবার জবুথবু নগরবাসী। একদিনের প্রভাবে ঢাকায় তাপমাত্রা কমে গেছে ৬ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
শীতের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় রাজধানীর বিপণি বিতান ও ফুটপাতে শীতবস্ত্রের দোকানে বেড়েছে ক্রেতার ভিড়। ছবি: নিউজবাংলা
মঙ্গলবার ঢাকার জনজীবন অনেকটাই শীতকাতর। সকাল থেকে কুয়াশাচ্ছন্ন পুরো শহর। হাতিরঝিল কুয়াশায় ঢাকা। দুপুরের দিকেও ঝিল ঘিরে মানুষের উপস্থিতি ছিল। তবে অন্যদিনের তুলনায় কম। কনকনে ঠান্ডায় ভিড় বেড়েছে চায়ের দোকানে। অনেকেই বলাবলি করছিলেন, শৈত্যপ্রবাহের কারণেই বুঝি বেড়েছে শীতের প্রভাব।
মঙ্গলবার বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে নগরীর পথঘাটে মানুষের চলাচলও কমে আসে। কাজ না থাকলে মানুষ খুব একটা ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না। বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রেও দর্শনার্থী কম দেখা গেছে।
শীতের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় রাজধানীর বিভিন্ন বিপণি বিতান ও ফুটপাতে শীতবস্ত্রের দোকানগুলোতে ভিড় জমাচ্ছেন ক্রেতারা। আর চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন বিক্রেতারা।
আবহাওয়া অফিসের তথ্য বলছে, শৈত্যপ্রবাহ আছে শুধু বৃষ্টির জন্য বিখ্যাত শ্রীমঙ্গলে। দেশের আর কোথাও এর তেমন একটা প্রভাব নেই।
ঢাকায় এত ঠান্ডা কেন- এমন প্রশ্নের জবাবে আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক নিউজবাংলাকে জানালেন, রাজধানী ঢাকায় একদিনের ব্যবধানে তাপমাত্রা কমে গেছে অন্তত ৪ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সঙ্গে আছে হিমেল হাওয়া। সেজন্য ঠান্ডাটা তীব্রভাবে অনুভূত হচ্ছে।
কুয়াশার কারণে রাজধানীতে মঙ্গলবার দুপুরেও ছিল সন্ধ্যার আধো অন্ধকার। ছবি: নিউজবাংলা
তিনি বলেন, ‘শ্রীমঙ্গল ছাড়া দেশে আর কোথাও শৈত্যপ্রবাহ নেই। সিলেটের এই জনপদে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে দিনের তাপমাত্রা অনেক কমে গেছে। আর সেজন্য বেশি শীত অনুভূত হচ্ছে।
- আরও পড়ুন: শ্রীমঙ্গলে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮.৫
‘রাতের তাপমাত্রা গত কয়েকদিন ধরেই কম রয়েছে। দিনে সূর্যালোক থাকায় সেটা তীব্রভাবে টের পাওয়া যায়নি। তবে আজ (মঙ্গলবার) দেশের অনেক জায়গায় ৪ থেকে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা কমেছে। আর ঢাকায় দিনের তাপমাত্রা কমেছে ৬ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।’
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ঢাকায় মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় তাপমাত্রা ছিল ১৮ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগের দিন একই সময়ে তা ছিল ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি। এ সময়ে বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৭৮ শতাংশ। ঢাকায় মঙ্গলবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
সারা দেশের মধ্যে কুমিল্লা ও রাজশাহীর বদলগাছীতে মঙ্গলবার তাপমাত্রা ছিল ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে। এছাড়া বেশিরভাগ অঞ্চলে তাপমাত্রা ১২ থেকে ২৩ ডিগ্রির ঘরে উঠা-নামা করেছে। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল টেকনাফে, ২৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
শৈত্যপ্রবাহে জবুথবু শ্রীমঙ্গলের জনজীবন। ছবি: রিপন দে
হঠাৎ করে তাপমাত্রা এতোটা কমে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক বলেন, ‘ভারতের দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ ও বিহার অঞ্চলে একটা কুয়াশা অঞ্চল ছিল। সেটি ধীরে ধীরে বেড়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। এজন্য শৈত্যপ্রবাহ না থাকলেও বেশি শীত অনুভূত হচ্ছে। এই প্রভাব আরও চার থেকে পাঁচদিন থাকবে।’
আগামী ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য মাত্রার কোনো শৈত্যপ্রবাহের আলামত নেই বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তবে বিচ্ছিন্নভাবে দেশের কোথাও কোথাও তাপমাত্রা কমতে পারে। জানুয়ারি মাসে এক থেকে দুটি মাঝারি ও তীব্র শৈত্যপ্রবাহের পূর্বাভাস থাকলেও সেটি অনুভূত হবে আরও পরে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, উপমহাদেশীয় উচ্চ চাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। আকাশ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলাসহ সারাদেশে আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। সারাদেশে রাত ও দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।