আমাদের শরীর রোগ-জীবাণু প্রতিরোধ করে। শরীরের এই প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থার ত্রুটি হলো অ্যালার্জি। যার অ্যালার্জি আছে, তার শরীর রোগ-জীবাণুর পাশাপাশি ক্ষতিকর নয় এমন বস্তুকেও ক্ষতিকর মনে করে, তার বিরুদ্ধেও প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ক্ষতিকর নয় এমন সব বস্তুর প্রতি শরীরের এই অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়াকে অ্যালার্জি বলা হয়।
এ কারণে অন্যদের জন্য ক্ষতিকর না হলেও অ্যালার্জি আছে এমন ব্যক্তির কাছে ইলিশ মাছ, চিংড়ি মাছ কিংবা গরুর গোস্ত ক্ষতিকর।
অ্যালার্জির লক্ষণ
একেকজনের কাছে অ্যালার্জির লক্ষণ একেক রকম। তবে সাধারণ লক্ষণগুলোর মধ্যে আছে চোখ ও ত্বক চুলকানো, হাঁচি, ভরাট নাক, গলা শক্ত হয়ে যাওয়া, শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া, বমি হওয়া, রক্তচাপ কমে যাওয়া, মাথা ঘোরা এমনকি মূর্ছা যাওয়া।
অ্যালার্জি থেকে বাঁচবেন যেভাবে
অ্যালার্জি কখনও পুরোপুরি দূর করা যায় না। তবে এর প্রকোপ কমানো যায়। যে বস্তুতে অ্যালার্জি আছে তার থেকে ১০০ হাত দূরে থাকলেই অ্যালার্জিমুক্ত থাকা সম্ভব।
রোগীভেদে একেকজনের একেক বস্তুতে অ্যালার্জি থাকতে পারে। ধরুন, কারও রেশমি কাপড়ে অ্যালার্জি, তিনি রেশমি কাপড় পরবেন না। যার চিংড়ি মাছে অ্যালার্জি তিনি চিংড়ি মাছ খাবেন না।
কোন কোন বস্তুতে অ্যালার্জি, সেটা রোগীকে মনে রাখতে হবে এবং সেগুলো এড়িয়ে চলতে হবে। তবেই অ্যালার্জির হাত থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব।
-
ত্বকের অ্যালার্জি দূর করার ঘরোয়া উপায়
টি-ট্রি অয়েল
ত্বকের অ্যালার্জিতে টি-ট্রি অয়েল দারুণ কাজ করে। এতে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এবং অ্যান্টি-আইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা অনেক ত্বকের অ্যালার্জি থেকে মুক্তি দেয়।
আপেল সিডার ভিনিগার
অ্যাপল সিডার ভিনিগারে আছে অ্যাসিটিক অ্যাসিড। ত্বকের চুলকানি কমিয়ে অ্যালার্জির প্রকোপ দূর করতে কাজ করে এই উপাদানটি। তবে ব্যবহারের আগে দেখে নিতে হবে আপেল সিডার ভিনিগারে অ্যালার্জি আছে কি না। থাকলে ব্যবহার করা যাবে না।
নারকেল তেল
নারকেল তেলে থাকা ময়েশ্চারাইজিং অ্যালার্জির ক্ষেত্রে ত্বককে সুরক্ষা দেয়। শুধু তা-ই নয়, নারকেল তেল অ্যালার্জিজনিত চুলকানি কমায়। একটি বাটিতে সামান্য নারকেল তেল নিয়ে কুসুম গরম করুন। যেখানে অ্যালার্জির লক্ষণ রয়েছে, সেখানে লাগান। এক ঘণ্টা রেখে দিন। উপকার পেলে দিনে দুই বার করতে পারেন।
অ্যালোভেরা জেল
ত্বকের অ্যালার্জি থেকে মুক্তি পাওয়ার সেরা উপায় অ্যালোভেরা জেল। এটি ত্বকে জ্বালাপোড়া এবং চুলকানি থেকে মুক্তি দেয়। সতেজ অ্যালোভেরা সরাসরি ত্বকে লাগালেই উপকার পাওয়া যায়।
-
চোখের অ্যালার্জি দূর করার ঘরোয়া উপায়
গোলাপজল
গোলাপজল চোখের অ্যালার্জির প্রিভেন্টিভ হিসেবে কাজ করে। চোখ অ্যালার্জিতে আক্রান্ত হলে ২ থেকে ৩ ফোঁটা গোলাপজল দিয়ে দিন। এতে যে ইনফেকশনের কারণে চোখ অ্যালার্জিতে আক্রান্ত হয়েছে সেটি কেটে যায়। গোলাপজল দেয়ার পর চোখ কিছুক্ষণ বন্ধ করে রাখুন। খোলা রাখলে তরলটি বেরিয়ে যাবে। তখন পুরোপুরি কাজ হবে না।
লবণপানি
এক গ্লাস পানি নিন। এতে ৩ চা-চামচ পরিমাণ লবণ গুলে পানি ভালোমতো ফোটান। ঠান্ডা হয়ে গেলে সেই পানিতে এক টুকরা পরিষ্কার তুলা ভিজিয়ে চোখগুলো ধীরে ধীরে মুছে দিন। এতে চোখে থাকা ময়লা বেরিয়ে যাবে এবং জ্বালাপোড়া বা চুলকানি থেকেও আরাম মিলবে।
ঠান্ডা পানি
কথায় আছে পানির অপর নাম জীবন। চোখের অ্যালার্জির ক্ষেত্রেও ঠান্ডা পানি অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখে। অ্যালার্জির কারণে চোখ ফুলে গেলে, লাল হলে বা চুলকালে বারবার ঠান্ডা পানির ঝাপটা দিন। এতে যন্ত্রণার উপশম হবে।
আমলকী ও মধু
আমলকী পাউডার করে নিন। প্রতি রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে এই পাউডারের সঙ্গে মধু মিশিয়ে খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এতে শরীরের ইমিউন সিস্টেম বা রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে এবং শরীর অ্যালার্জেনমুক্ত থাকবে।
সায়েনি
সায়েনি এক ধরনের হার্ব। এটি অনেকটা মরিচের মতো দেখতে। সায়েনি শরীরের রক্ত সঞ্চালন উন্নত করার পাশাপাশি টক্সিন রিলিজ করতেও সহায়তা করে। চোখের ময়লা দূর করতে এর ভূমিকা রয়েছে।
সানগ্লাস
যদি আপনার অতিরিক্ত অ্যালার্জির সমস্যা থেকে থাকে, তবে অবশ্যই কোথাও বের হওয়ার আগে সানগ্লাস পরে বের হবেন। বিশেষ করে যেখানে বাস করেন সেটি যদি ধুলাবালিপূর্ণ এলাকা হয়, তাহলে চোখকে ডাস্ট অ্যালার্জিমুক্ত রাখতে সানগ্লাসের জুড়ি নেই।
পরিচ্ছন্নতা
ঘর এবং বিছানা সব সময় পরিষ্কার রাখবেন। যাতে ধুলাবালি না ওড়ে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। টিভি, মোবাইল ফোন ও কম্পিউটারের সামনে টানা বসে থাকবেন না। আর চোখ চুলকালে আঙুল দিয়ে রগড়ানো থেকে বিরত থাকুন।
-
ঠান্ডা অ্যালার্জি দূর করার ঘরোয়া উপায়
পেয়ারা খান
পেয়ারায় আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। ঠান্ডাজনিত অ্যালার্জি দূর করতে এই উপাদানটি দারুণ কাজ করে। পেয়ারার পাশাপাশি লেবুর শরবত অথবা লেবু চা খেলেও উপকার পাবেন।
ঘিতে উপকার
ঠান্ডাজনিত অ্যালার্জি দূর করতে খাবারের সঙ্গে ঘি খেতে পারেন। বিশুদ্ধ ঘি সংগ্রহ করে একবার এক চা-চামচ ঘি খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে গ্রহণ করলে ঠান্ডার সমস্যা কেটে যাবে।
কালিজিরা একটি মহৌষধ
কালিজিরা খেয়ে ঠান্ডাজনিত অ্যালার্জি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। রাতের খাবার কালিজিরা ভর্তা অথবা ঘুমানোর আছে কালিজিরার বড়ি খান। উপকার পেলে নিয়মিত খেতে পারেন।
ঠান্ডার সমস্যায় মধু
গ্রামে এখনও ঠান্ডার চিকিৎসায় মধু ব্যবহার করা হয়। যাদের অ্যালার্জিজনিত ঠান্ডার সমস্যার কষ্ট দিচ্ছে, তারা দিনে দুই চা-চামচ মধু খেয়ে দেখুন, ঠান্ডার সমস্যা চলে যাবে।