হৃৎপিণ্ড আমাদের শরীরে রক্ত সরবরাহের কাজ করে। এই কাজ করতে তার প্রচুর শক্তির প্রয়োজন হয়। হৃৎপিণ্ডের দেয়ালে থাকা রক্তনালীগুলোর মাধ্যমে প্রয়োজনীয় শক্তি পায় সে। কোনো কারণে এই রক্তনালীগুলোতে ব্লক সৃষ্টি হলে প্রয়োজনীয় রক্ত সরবরাহ ব্যাহত হয়। দেখা দেয় হার্ট অ্যাটাক। মায়ো ক্লিনিক ওয়েবসাইটের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বিস্তারিত। চলুন দেখে নিই।
হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ
হার্ট অ্যাটাকের অনেক ধরনের লক্ষণ আছে। কারও হার্ট অ্যাটাক হলে সবগুলো লক্ষণ একসঙ্গে প্রকাশ না-ও পেতে পারে।
বুকে ব্যথা হতে পারে
হার্ট অ্যাটাক হলে বুক চেপে ধরার মতো ব্যথা হতে পারে। এ ছাড়া রোগীর বুকের মধ্যে কিছু চেপে বসে আছে অথবা কিছু আটকে আসছে এমন অনুভূত হতে পারে।
শরীরের অন্য জায়গায় ব্যথা
বুক থেকে এই ব্যথা হাতে নেমে যেতে পারে। সাধারণত বাম হাতে এমন ব্যথা হয়। তবে এই ব্যথা উভয় হাতেই যেতে পারে। হাতের পাশাপাশি চোয়াল, ঘাড়, পিঠ ও পেটে ব্যথা হতে পারে।
মাথা ঘোরানো অথবা মাথা ঝিমঝিম করা
হার্ট অ্যাটাক হলে রোগীর মাথা ঘোরাতে পারে। করতে পারে মাথা ঝিমঝিম। মাথা ঘুরে রোগী পড়েও যেতে পারে।
বিনা কারণে ঘামতে থাকা
হার্ট অ্যাটাক হলে আক্রান্ত ব্যক্তি বসে বসে ঘামতে পারে। এই ঘামের পরিমাণ অল্প কিংবা বেশি হতে পারে।
শ্বাসকষ্ট হতে পারে
হার্ট অ্যাটাক হলে মৃদু থেকে তীব্র শ্বাসকষ্ট হতে পারে। এ সময় রোগীর বমি হওয়া কিংবা বমি বমি ভাব দেখা দিতে পারে।
আতঙ্কিত হতে পারে
হার্ট অ্যাটাক হলে রোগী তীব্র ভয়ে আচ্ছন্ন হতে পারে। অস্থিরতার পাশাপাশি এমন মনে হতে পারে যে তিনি মারা যাচ্ছেন।
কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট অবস্থা
কিছু কিছু ক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাক হলে হৃৎপিণ্ড তৎক্ষণাৎ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এটাকে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট বলে। তেমন হলে রোগীর নড়াচড়া বন্ধ হয়ে যেতে পারে। শ্বাস নেয়া বন্ধ হওয়া, ধাক্কা দিলেও সাড়া না দেয়ার মতো লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
এ রকম পরিস্থিতিতে রোগীকে সিপিআর (কার্ডিও পালমোনারি রিসাসিটেশন) দিয়ে তার হৃৎপিণ্ড চালু করতে হবে। সিপিআর দেবার নিয়ম দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
হার্ট অ্যাটাক হয় যে কারণে
হৃৎপিণ্ডে রক্ত সরবরাহকারী রক্তনালীগুলোকে করোনারি আর্টারি বলা হয়। এসব ধমনির ভেতরের দেয়ালে কোলেস্টেরল জমা হলে রক্তনালি সরু হয়ে যায়। ফলে রক্তের স্বাভাবিক প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে। জমাট বাঁধা এসব কোলেস্টেরলকে প্ল্যাক বলা হয়।
হার্ট অ্যাটাকের আগে এমন একটি কোলেস্টেরল প্ল্যাক ফেটে যায়। ফলে সেখানে রক্ত জমাট বাঁধে। জমাট বাঁধার কারনে ধমনীতে ব্লকের সৃষ্টি হয়। এই ব্লকের পরের অংশে রক্ত যেতে পারে না। ফলে হৃদপিন্ডের সেই অংশ নষ্ট হয়ে যায়। দেখা দেয় হার্ট অ্যাটক।
ধমনীর ভিতরে কোলেস্টেরল জমার কারণ
কোলেস্টেরল এক ধরনের চর্বি। এটি কয়েক ধরনের হয়ে থাকে। ট্রাইগ্লিসারাইড, এলডিএল, এইচডিএল এবং টোটাল কোলেস্টরল। এইচডিএল বাদে অন্য কোলেস্টেরলগুলো ক্ষতিকর।
নানা কারণে ধমনীর ভিতরের দেয়ালে কোলেস্টেরল জমে। ধূমপান এর মধ্যে অন্যতম। এ ছাড়া অলস জীবনযাপন, খাবারে চর্বির পরিমাণ বেশি রাখা, উচ্চ রক্তচাপ, স্থূলতা ধমনিতে কোলেস্টেরল জমতে সহায়তা করে। এ ছাড়া বংশগত কারণেও রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেশি থাকতে পারে।
হার্ট অ্যাটাকের প্রাথমিক চিকিৎসা
হার্ট অ্যাটাকের রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। এ সময় রোগীকে বিশ্রামে রাখতে হবে। সম্ভব হলে অ্যাসপিরিন ট্যাবলেট দিতে হবে। অ্যাসপিরিন রক্ত পাতলা করে এবং হৃৎপিণ্ডে রক্ত সরবরাহ বাড়াতে সাহায্য করে।
হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধের উপায়
নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন করার মাধ্যমে হার্ট অ্যাটাক এড়ানো সম্ভব। ধূমপান ও মদ্যপানের অভ্যাস থাকলে ছেড়ে দিতে হবে। কমিয়ে ফেলতে হবে শরীরের বাড়তি ওজন।
নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের সপ্তাহে কমপক্ষে আড়াই ঘণ্টা মাঝারি ধরনের ব্যায়াম করতে হবে।
খাবারে চর্বির পরিমাণ কমিয়ে আঁশযুক্ত খাবার বাড়িয়ে দিতে হবে। এ ছাড়া প্রতিদিনের খাবার তালিকায় প্রচুর ফলমূল ও শাকসবজি রাখতে হবে।