উঠানে দাগ দেয়া বৃত্তের মাঝে মুখোমুখি দুটি বিশাল আকৃতির মোরগ। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একজনের ইশারা পেতেই ঝাঁপিয়ে পড়ে শুরু করে লড়াই। একটি অন্যটিকে পরাস্ত করার আপ্রাণ চেষ্টা চালায়। বিরতির পর একটি মোরগের বিভিন্ন স্থানে ক্ষত দেখা গেছে। এটির মালিক পানি ছিটিয়ে বিশ্রাম দিয়ে আবার এটিকে লড়াইয়ের ময়দানে পাঠায়।
কিছুক্ষণ যুদ্ধ শেষে ক্লান্ত হয়ে একটি বসে পড়ে। অন্যটি হয়ে যায় চ্যাম্পিয়ন; নাম বাদশা।
মোরগের এই লড়াই দেখা গেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নিয়াজ মুহাম্মদ স্টেডিয়ামে। সেখানে বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজের পর অনুষ্ঠিত হয় গ্রামের ঐতিহ্যবাহী এই খেলা।
জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলমে এই মোরগ লড়াইয়ের আয়োজক।
লড়াইয়ে আরও ৩টি দল অংশ নেয়। প্রতিটি থেকেই একটি করে মোরগ জয় পায়।
লড়াইয়ে নিজের মোরগ নিয়ে অংশগ্রহণকারী আলমগীর মিয়া জানান, ব্যাডমিন্টন খেলার কোর্টের মতো মোরগ লড়াইয়ের জন্য একটি কোর্ট বানানো হয় মাটিতে দাগ টেনে। এর দুপাশে নিজ নিজ মোরগ নিয়ে অবস্থান নেয় দুজন।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ৭টি লড়াই অনুষ্ঠিত হয়। উভয় দল কমপক্ষে ৯টি যোদ্ধা মোরগকে প্রস্তুত রাখে। ৭টি ম্যাচের জন্য ৭টি এবং আহত মোরগের বদলী যোদ্ধা হিসাবে আরও দুটি মোরগ রাখা হয়।
বিজয় দিবসের এই লড়াইয়ে ভাদুঘর গ্রামের আব্দুল লতিফের মোরগ ‘যুবরাজের’ সঙ্গে ফাইনালে লড়ে জয়ী হয় আলমগীরের মোরগ ‘বাদশা’।
ভাদুঘরের আব্দুল লতিফ বলেন, ‘আমার মোরগটি যথেষ্ট সাহসিকতার সঙ্গে লড়াই করেছে। তবে শেষ দিকে এসে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। তবে খেলাটা শখের হওয়াতে আমরাও বেশ উপভোগ করি।’
মোড়গ লড়াই দেখতে আসা মুসলিমা বেগম বলেন, ‘গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী খেলা এই মোরগ লড়াই। দীর্ঘদিন পর মোরগ লড়াই উপভোগ করতে পেরে খুবই ভালো লেগেছে। আমার ছোট্ট মেয়ে নাভাও লড়াই দেখে খুব খুশি হয়েছে।’
মোরগ লড়াইয়ের আয়োজক জেলা প্রশাসক শাহগীর বলেন, ‘ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখতে ও দর্শনার্থীদের আনন্দ দিতে আমাদের এই প্রচেষ্টা। প্রত্যেক অংশগ্রহণকারীদের ক্রেস্ট ও ১ হাজার টাকা করে সম্মানী দেয়া হয়েছে।’