বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট করে জীবন খোয়ালেন রশিদ

  •    
  • ২ ডিসেম্বর, ২০২২ ২০:৪২

যুগ যুগ ধরে নারীর সৌন্দর্য্য বিচার করা হয়েছে তার চেহারা দেখে। ক্রমবর্ধমান বস্তুবাদী ভারতীয় সমাজে পুরুষরাও এখন একই চাপ অনুভব করেন। সামাজিক অবস্থান হারানোর ভয়ে তারা নিজেদের তরুণ এবং প্রফুল্ল দেখাতে ব্যস্ত হয়ে উঠছেন।

ভারতের একটি টেলিভিশন চ্যানেলের নির্বাহী আতহার রশিদ চেয়েছিলেন তাকে যেন সুদর্শন দেখায়। কারণ শিগগিরই বিয়ে করবেন তিনি। তবে ৩০ বছরের রশিদ চুল প্রতিস্থাপনের (হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট) সিদ্ধান্ত আপাতদৃষ্টিতে মারাত্মক ভুল প্রমাণিত হয়েছে।

যুগ যুগ ধরে নারীর সৌন্দর্য্য বিচার করা হয়েছে তার চেহারা দেখে। ক্রমবর্ধমান বস্তুবাদী ভারতীয় সমাজে পুরুষরাও এখন একই চাপ অনুভব করেন। সামাজিক অবস্থান হারানোর ভয়ে তারা নিজেদের তরুণ এবং প্রফুল্ল দেখাতে ব্যস্ত হয়ে উঠছেন।

অকালে টাক পড়া পুরুষরা চুল প্রতিস্থাপনে ঝুঁকছেন। আয় মোটামুটি বেড়ে যাওয়ায় পুরুষরা নিজেদের চেহারা আরও আকর্ষনীয় করতে টাকা খরচ করতে দ্বিধা করেন না।

চুল প্রতিস্থাপন (হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট) দুর্বলভাবে নিয়ন্ত্রিত একটি সেক্টর। কখনো কখনো ইউটিউব দেখে স্ব-প্রশিক্ষিত অপেশাদাররা এ কাজটি করে থাকেন; যার ফলাফল হতে পারে মারাত্মক।

রশিদ তার পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ছিলেন। একটি দারুণ জীবনের আকাঙ্ক্ষায় বিভোর ছিলেন তিনি। চাকরি করে নিজে বাড়ি কিনেছেন; দুই বোনকে বিয়েও দিয়েছেন রশিদ।

রশিদের মা আছিয়া বেগম বলেন, ‘সবকিছু ওর পরিকল্পনা অনুযায়ী হচ্ছিল। বিপত্তি বাধে গত বছর। দিল্লির একটি ক্লিনিকে হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট করার পর সে সেপসিস রোগে আক্রান্ত হয়। তার মাথা ফুলে ওঠে। ভয়ানক যন্ত্রণা ভোগ করেছিল আমার ছেলে।

‘আমার ছেলের খুব কষ্টের মৃত্যু হয়েছে। তার কিডনি কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিল। এক সময় তার অন্যান্য অঙ্গগুলো অকার্যকর হতে শুরু করে।’

রশিদের ফুলে যাওয়া মুখ এবং তার মৃত্যুর আগে সারা শরীরে কালো ফুসকুড়ি দেখা দিয়েছিল। সেসব ছবি দেখিয়ে রশিদের পরিবার পুলিশে অভিযোগ করে। তার ভিত্তিতে অস্ত্রোপচারকারী দুই ব্যক্তি সহচারজনকে গ্রেপ্তার করা করেছে পুলিশ। তারা এখন বিচারের অপেক্ষায় দিন গুনছে।

দিল্লির একটি পাড়ায় তার এক রুমের ভাড়া করা ফ্ল্যাটে বসে রশিদের মা আছিয়া বেগম বলেন, ‘প্রতিদিনই ছেলের কথা মনে করে তিলে তিলে মরছি।

‘আমি আমার ছেলেকে হারিয়েছি। কিছু মানুষের এমন প্রতারণার কারণে যেন আর কারও বুক খালি না হয়।’

আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধিকারী

একজন দক্ষ সার্জন যদি চুল প্রতিস্থাপন করেন তবে এটি হতে পারে জীবন-পরিবর্তনকারী। এতে আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়বে।

হরিশ আইয়ার একজন সমঅধিকার কর্মী। তিনি বলেন, ‘জীবনধারা পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পুরুষরা তাদের সাজসজ্জার দিকে আরও বেশি মনোযোগ দিতে শুরু করেছে। তারুণ্য এবং প্রাণশক্তি প্রদর্শনের প্রয়োজনীয়তা আসলে সব লিঙ্গের মধ্যেই থাকে।

‘আগে এটা কেবল নারীদের ওপর ছিল। কিন্তু সময় বদলেছে। এখন নারীর পাশাপাশি পুরুষরাও সেই চাপ অনুভব করেন।’

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অলস জীবনযাপন, ধূমপান, অনুপযুক্ত খাদ্য এবং মানসিক চাপের ফলে চুল পড়ে যেতে পারে।

চুল প্রতিস্থাপনের পদ্ধতিতে মাথার পেছনের চুলের ঘন জায়গা থেকে ফলিকল নিয়ে তা মাথার যে অংশের চুল পড়ে গেছে সে অংশে লাগানো হয়। এটা অনেকটা চারাগাছ রোপনের মতো।

ডাক্তার মায়াঙ্ক সিং এক মাসে ১৫টি পর্যন্ত অস্ত্রোপচার করেন। নয়া দিল্লিতে তার ক্লিনিক।

মায়াঙ্কের বেশিরভাগ রোগীর বয়স ২৫-৩৫ বছর। হয় তারা বিয়ে করতে কিংবা পেশাগত জীবনে আরও উন্নতি করতে চাইছেন।

ভারতের কোটি কোটি মানুষ যেখানে দিনে ২০০ টাকারও কম আয় করেন, সেখানে এই সার্জারির জন্য গুনতে হয় আনুমানিক চার লাখ ৪০ হাজার টাকা (৪ হাজার ৩০০ ডলার)। এ কারণে অলিগলিতে গজিয়ে ওঠা বিভিন্ন ক্লিনিকে অল্প টাকায় চুল প্রতিস্থাপনে আগ্রহী হয়ে থাকেন মানুষ।

ইউটিউব কর্মশালা

মায়াঙ্ক সিং অ্যাসোসিয়েশন অফ হেয়ার রিস্টোরেশন সার্জনস অফ ইন্ডিয়ার সেক্রেটারিও। তিনি বলেন, ‘কিছু মানুষের কারণে এই সেক্টরটির বদনাম হচ্ছে।

‘অনেকের এই পৌরাণিক ধারণা আছে যে এটি খুবই নিরাপদ এবং অল্প সময়ের প্রক্রিয়া। অথচ অস্ত্রোপচারের সময়কাল বেশ দীর্ঘ। প্রায় ৬ থেকে ৮ ঘন্টা লাগে।

‘এতে প্রচুর লোকাল অ্যানেস্থেসিয়া ব্যবহার হয়; যা ধাপে ধাপে প্রয়োগ করা হয়। যদি কারও সে সম্পর্কে জ্ঞান না থাকে, তবে পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে।’

ভারতের চুল প্রতিস্থাপনের ক্লিনিকের সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। গ্রাহক টানতে প্রায়ই তাদের নানা অফার বা ছাড় দিতে দেখা যায়। এ অবস্থা বিবেচনায় দেশটির ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশন সেপ্টেম্বরে একটি সতর্কতা জারি করেছে৷

এতে বলা হয়, চুল প্রতিস্থাপনের মতো নান্দনিক প্রক্রিয়ার জন্য ওয়ার্কশপ বা ইউটিউব বা অনুরূপ প্ল্যাটফর্মে প্রশিক্ষণ পর্যাপ্ত নয়। কেবল প্রশিক্ষিত চিকিৎসকের মাধ্যমে এসব করা উচিত।

প্লাস্টিক সার্জন মায়াঙ্ক সিং বলেন, ‘নির্দেশিকাগুলো কঠোরভাবে মেনে চলা অপরিহার্য ছিল।’

মায়াঙ্কের কাছে প্রতিস্থাপন করে নতুন চুল গজানোর তালিকা দীর্ঘ; যারা বছরের পর বছর ধরে টাকের কারণে সামাজিক অনুষ্ঠান এড়িয়ে চলেছেন। তাদের একজন ডাক্তার লক্ষ্মী নারায়ণন।

২৯ বছরের নায়রায়ণ বলেন, ‘১৮ বছর বয়স থেকে আমার চুল ঝরতে শুরু করে। আমি নিজের ছবি তোলা বা এমনকি আয়নায় তাকাতেও ভয় পেতাম।

‘সে অবস্থা এখন আর নেই। এখন আমি মানুষের সঙ্গে আত্মবিশ্বাসের সাথে যোগাযোগ করতে পারি।’

এ বিভাগের আরো খবর