ঘড়ির কাঁটা রাত ১২টার ঘর পেরিয়ে তখন ৩টা ২৬। চারদিকে সুনসান। হাসপাতালের সামনের অংশের গার্ডহাউসের ডেস্কে মাত্র একজন নিরাপত্তাকর্মী।
হঠাৎ খুলে যায় রাস্তার পাশের গ্লাস ডোর। চেয়ার ছেড়ে নিরাপত্তাকর্মী এগিয়ে যান, কথা বলেন দরজা পেরিয়ে আসা রোগীর সঙ্গে। হাতের ক্লিপবোর্ডের কাগজে লেখা নয় রোগীর নাম-পরিচয়।
এরপর পিছিয়ে গিয়ে লিফটের পাশ থেকে একটি হুইলচেয়ার বের করে আনেন নিরাপত্তাকর্মী। তবে রোগী বসতে না চাওয়ায় আবার সেটি রেখে দেন লিফটের পাশে।
আর্জেন্টিনার বুয়েনস আইরেস শহরের ফিনোচিয়েত্তো স্যানাটোরিয়াম হাসপাতালে ১১ নভেম্বর ভোররাতের এই দৃশ্য ধরা পড়েছে সিসিটিভি ক্যামেরায়। তবে শুনলে চমকে উঠবেন, হাসপাতালের গ্লাসডোর খুলে ঢোকা কিংবা নিরাপত্তাকর্মীর সঙ্গে কথা বলা সেই রোগীর কোনো ছবি দেখা যায়নি সিসিটিভি ফুটেজে। প্রায় মিনিটখানেক যেন বাতাসের সঙ্গে কথা চালিয়ে গেছেন ওই নিরাপত্তাকর্মী।
আর প্রৌঢ়া নারী রোগীর জলজ্যান্ত ছবি ভিডিওতে থাকবেই বা কী করে? তিনি তো ওই হাসপাতালেই মারা গেছেন মাত্র একদিন আগে!
ভোররাত পার হওয়ার বেশ কিছু সময় পর ঘটনাটিতে কিছু একটা গড়বড় ধরা পড়ে। নাম এন্ট্রি করে ভেতরে পাঠানো রোগীর বের হওয়ার তথ্য না পেয়ে সকালে খোঁজ নেন হাসপাতালের কর্মীরা। আর তখনই জানা যায়, আগের কয়েক ঘণ্টায় এমন কোনো রোগীকে পাননি চিকিৎসক। শুধু তাই নয়, রোগী হিসেবে যে নারীর নাম এন্ট্রি করা হয়েছে তিনি হাসপাতালেই ভর্তি ছিলেন, তবে তার মৃত্যু হয়েছে ঠিক আগের দিন।
এরপরই দুটি সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরা পড়া ‘ভৌতিক’ ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
ফিনোচিত্তো স্যানাটোরিয়ামের জনসংযোগ বিভাগের প্রধান ডা. গুইলারমো ক্যাপুয়া বলছেন, ভিডিওতে যে নিরাপত্তাকর্মীকে দেখা গেছে তিনি হাসপাতালের নিজস্ব কর্মী নন। সেকিউরিটাস নামের একটি আউটসোর্সিং নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান থেকে তাকে ওই রাতে পাঠানো হয়েছিল।
ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর বেশ বিপাকে পড়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। গুইলারমো ক্যাপুয়া বলেন, ‘লোকজন আমাকে আমাকে যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো, পানামা থেকেও ফোন করেছে। একটি ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে আমরা পড়েছি। রসিকতা বা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ভিডিওটি ছড়ানো হয়েছে কি না, আমি জানি না। তবে ওখানে কোনো ভৌতিক ঘটনা ঘটেছে বলে আমি বিশ্বাস করি না।’
ভৌতিক না হলে দরজা আপনাআপনি কীভাবে খুলে গেল, নিরাপত্তাকর্মীই-বা কার সঙ্গে কথা বললেন?
এসব প্রশ্নেরও জবাব রয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে।
ক্যাপুয়া বলেন, ‘ওই দিন অনেক আগেই গ্লাসডোরটিতে কারিগরি সমস্যা ধরা পড়ে। এ কারণে ১০ ঘণ্টায় অন্তত ২৮ বার আপনাআপনি খুলে সেটি খুলে যায়। ভোররাতের ওই সময়েও একই কারণে দরজাটি খুলে গিয়েছিল।
‘সে সময় ওই নিরাপত্তাকর্মী একাই ডেস্কে ছিলেন। সম্ভবত তিনি সুযোগের সদ্ব্যবহার করে প্রাঙ্ক ভিডিও তৈরি করেন।’
ওই নিরাপত্তাকর্মীর নাম পরিচয় প্রকাশ করেনি তার প্রতিষ্ঠান সেকিউরিটাস। তবে তারা জানিয়েছে তার একটি সাইকোটেকনিক্যাল পরীক্ষা করা হয়েছে৷