হু হু করে বাড়ছে সব ধরনের কাগজের দাম। মাসখানেকের ব্যবধানে হোয়াইট প্রিন্ট কাগজের দাম টন প্রতি ৩৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এই কাগজেই সাধারণত ছাপা হয় বিভিন্ন প্রকাশনীর বই।
হোয়াইট প্রিন্ট কাগজের লাগামহীন দামে বিপাকে পড়েছে প্রকাশনা সংস্থাগুলো। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে বইমেলাকেন্দ্রিক প্রকাশনীর মালিকদের কপালে পড়েছে চিন্তার ভাঁজ।
কয়েকজন প্রকাশক ও প্রকাশনা সমিতির নেতারা বলছেন, বইমেলার পাশাপাশি কাগজের দাম বৃদ্ধিতে গোটা প্রকাশনা শিল্পই ঝুঁকিতে পড়েছে।
প্রকাশনা সংস্থা ‘অন্যপ্রকাশ’-এর প্রধান নির্বাহী ও বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির রাজধানী কমিটির সভাপতি মাজহারুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের অধিকাংশ বই প্রকাশ হয় মেলা কেন্দ্র করে। কাগজের দাম বৃদ্ধির কারণে বই প্রকাশ তো বন্ধ থাকবে না, যেটা হবে বইয়ের দাম বেড়ে যাবে, এটা পাঠকের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে।
তিনি দাবি করেন, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে অন্যান্য দ্রব্যের দাম যেভাবে বেড়েছে তার চেয়ে দ্বিগুণ বেড়েছে কাগজের দাম।
মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘আমি মনে করি দেশীয় মিলগুলো সিন্ডিকেট করে একসঙ্গে দাম বাড়িয়েছে। ইমপোর্ট ট্যাক্স বাড়িয়ে দেয়ার ফলে কাগজের দাম এমনিতেই বেশি, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এরাও কাগজের মূল্য বাড়িয়ে যাচ্ছে। বাড়াতে বাড়াতে গত এক বছরে দাম দ্বিগুণেরও বেশি হয়ে গেছে। এ ব্যপারে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে সামগ্রিকভাবে আমাদের প্রকাশনা শিল্প ধ্বংস মুখে পড়বে।’
‘সময় প্রকাশন’-এর কর্ণধার এবং জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি সভাপতি ফরিদ আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের বই ছাপার একটা বড় উপকরণই হচ্ছে কাগজ। কাগজের যদি দুর্মূল্য থাকে বা কাগজ যদি না পাওয়া যায় তাহলে তো বই ছাপার ক্ষেত্রেই সমস্যা তৈরি হবে। এ সমস্যা এখন থেকেই আমাদের ফেস করতে হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘কাগজের দাম না কমলে কী হবে সেটা তো এখনও বুঝতে পারছি না। তবে এ অবস্থা চলতে থাকলে প্রকাশনা শিল্প ঝুঁকির মুখে পড়বে।’
দাম কমানোর বিষয়টি নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারে কাছে কোনো দাবি জানাননি প্রকাশকেরা। এ বিষয়ে ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘কিছু কিছু ব্যাপার আছে যেগুলোর দাবি জানাতে হয় না। সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আছে যাদের কাজই এই মনিটরিং করা। তারা যে জানে না তা তো না, তারা জানে। কেন তারা মনিটরিং করছে না সেটা আমরা বুঝতে পারছি না।
‘আর কাগজের কনজ্যুমার শুধু যে আমরা প্রকাশকরা তা তো নয়, এর বিশাল কনজ্যুমার রয়েছে। বিভিন্ন অ্যাঙ্গেল থেকে বলা হচ্ছে। যেকোনো একটা জিনিস বলার পর ওটার রেজাল্ট কী হয় তার জন্য তো একটু অপেক্ষা করতে হয়। আমরাও সেই অপেক্ষা করে বসে আছি।’
তবে বইমেলা ঘিরে বন্ধ নেই ছাপার কাজ। এই প্রকাশক নেতা বলেন, ‘প্রস্তুতিমূলক কাজ তো আমাদের চালাতেই হবে। বই ছাপার কাজ অনেক আগে থেকেই চলছে। এখন যার কাছে কাগজ আছে সে ছাপতে পারছে, যার স্টকে কাগজ নেই তাকে বাজার থেকে কিনতে হচ্ছে। উচ্চ রেটে যে কিনতে পারছে বা কেনার ইচ্ছা হচ্ছে সে ছাপছে, যার ইচ্ছা হচ্ছে না সে ছাপছে না। এটা তো সমষ্টিগত ব্যবসা নয়, স্বাধীন ব্যবসা।’
‘শ্রাবণ প্রকাশনী’র স্বত্বাধিকারী রবীন আহসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের সব প্রকাশনীর বড় একটা অংশ বই প্রকাশ করে বইমেলা ঘিরে। আগামী বইমেলা ধরে সেই কাজ আমাদের শুরুও হয়েছে। অনেক বই আমাদের কাছে এসেছে, কিন্তু কাগজের দামের কারণে আমরা সব বই ছাপাতে পারব না।
‘বৈশ্বিক মন্দার কারণে কাগজের দাম হয়ত বেড়েছে, কিন্তু আমাদের এখানে ব্যবসায়ীরা সেটা দুই-তিনগুণ বাড়িয়েছেন। এমনিতেই তো প্রকাশনা শিল্পের অবস্থা খারাপ, এ অবস্থা চলতে থাকলে তো ধ্বংস মুখে দাঁড়াবে।’
কাগজের বাড়তি দামের কারণ জানার চেষ্টা করেছে নিউজবাংলা।
বিষয়টি নিয়ে রাজধানীর ফকিরাপুলের কাগজের পাইকারি ব্যবসায়ী স্বদেশ পেপারের মালিক মো. সাফায়েত হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘গত এক মাস ধরেই কাগজের দাম বাড়ছে। সবশেষ একমাসে হোয়াইট প্রিন্টের দাম টন প্রতি বেড়েছে ৩৫ হাজার টাকা। এক মাস আগে যেটা ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা টনে বিক্রি হতো, সেটা এখন ১ লাখ ৬০ হাজারে বিক্রি করতে হচ্ছে। কখনও কখনও সেটা ১ লাখ ৬৫ হাজারও হচ্ছে। আমরা যাদের কাছ থেকে নেই তারা যখন বাড়াচ্ছে আমাদেরও বাড়াতে হচ্ছে।’