বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

নাচে-গানে সাঙ্গ হলো রাস উৎসব

  •    
  • ৯ নভেম্বর, ২০২২ ১০:৪২

মাধবপুর মণিপুরি মহারাসলীলা সেবা সংঘের সাধারণ সম্পাদক শ্যাম সিংহ নিউজবাংলাকে জানান, রাখালনৃত্যের মাধ্যমে দুপুরে শুরু হয়েছে রাসলীলা। ধর্ম-বর্ণ ভেদাভেদ ভুলে লাখো মানুষের সমাগম ঘটেছে। সব ধরনের সুবিধা বিদ্যমান থাকায় এখানকার রাসলীলা বড় উৎসবে রূপ নিয়েছে। উৎসবে যোগ দিতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার ভক্ত-অনুরাগী এসেছেন এখানে।

মণিপুরিদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব রাসলীলা। ঢাকঢোল, মৃদঙ্গ, করতাল আর শঙ্খধ্বনির সঙ্গে ব্যাপক আনন্দ উল্লাসের মধ্যদিয়ে রাত ১২টায় শুরু হয় ঐতিহ্যবাহী রাসনৃত্য। মণ্ডপে মণিপুরি শিশু নৃত্যশিল্পীদের সুনিপুণ নৃত্যাভিনয় রাতভর মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখে ভক্ত-দর্শনার্থীদের। মণিপুরি লোকজনের সঙ্গে সবাই মেতে ওঠে এই আনন্দ আয়োজনে।

সাদা কাগজের নকশায় নিপুণ কারুকাজে সজ্জিত করা হয় মণ্ডপগুলো। মহারাত্রির পরশ পাওয়ার জন্য হাজারো মানুষের মিলনতীর্থে পরিণত হয় মাধবপুর জোড়া মণ্ডপ আর আদমপুরের মণ্ডপগুলোতে।

রাধা-কৃষ্ণের লীলাকে ঘিরে এই উৎসবে মেতেছে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের মানুষ। এ আয়োজনে রয়েছে জোরদার নিরাপত্তা।

রাস উৎসব মূলত মণিপুরিদের হলেও তা আর তাদের মাঝেই সীমাবদ্ধ নেই। জাতিধর্মবর্ণ-নির্বিশেষে সব লোকজনের অংশগ্রহণেই উদযাপিত হয় এই আনন্দ উৎসব।

মঙ্গলবার দুপুর ১২টা থেকে রাখালনৃত্যের মাধ্যমে শুরু হয় এই উৎসব। রাত ১২টায় শুরু হয় ঐতিহ্যবাহী রাসনৃত্য। এই আনন্দ আয়োজনে যোগ দিতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কমলগঞ্জে হাজির হয়েছে নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোরসহ নানা পেশার হাজারো মানুষ। তাদের পদচারণে সকাল থেকে মুখর হয়ে ওঠে মণিপুরি পল্লি। বুধবার ভোরে এ উৎসব শেষ হয়।

উষালগ্নে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে অনুষ্ঠানের পরিসমাপ্তি ঘটে। কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর জোড়া মণ্ডপ প্রাঙ্গণে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি, আদমপুরের মণিপুরি কালচারাল কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে মণিপুরি মী-তৈ সম্প্রদায়ের আয়োজনে হয়েছে মহারাসোৎসব।

রাস উৎসব ঘিরে প্রতিবারের মতো এবারও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বসেছে রকমারি আয়োজনে বিশাল মেলা। ভিড় সামলাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।

রাসলীলা উপলক্ষে কমলগঞ্জের তিনটি স্থানে মেলার আয়োজন করা হয়েছে। মেলায় খই, মুড়ি, বাতাসা, ছোটদের বিভিন্ন ধরনের খেলনা, পোশাক-পরিচ্ছদ, ঘর সাজানোর বিভিন্ন উপকরণ ও প্রসাধনী, শ্রীকৃষ্ণের ছোট-বড় বিভিন্ন আকৃতির ছবিসহ বাহারি পণ্য শোভা পাচ্ছে।

মাধবপুর শিববাজার এলাকায় মেলা প্রাঙ্গণে বসেছে মণিপুরিদের ভাষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে বইপত্রের কয়েকটি স্টল।

বাঁশ ও কাগজ কেটে বিশেষ কারুকাজে রাসের মণ্ডপ তৈরি করা হয়েছে। মণ্ডপের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে বসেন রাসধারী বা রাসের গুরু, সূত্রধারী ও বাদকরা। পাশাপাশি তিনটি মণ্ডপে দু’শতাধিক তরুণী এই রাসলীলায় অংশ নিচ্ছেন।

রাসের সাধারণ ক্রম হচ্ছে- সূত্রধারীর রাগালাপ ও বন্দনা, বৃন্দার কৃষ্ণ আবাহন, কৃষ্ণ অভিসার, রাধা ও সখীদের অভিসার, রাধা-কৃষ্ণের সাক্ষাৎ ও মান-অভিমান, ভঙ্গীপারেং, রাধার কৃষ্ণ-সমর্পণ, যুগলরূপ প্রার্থনা, আরতি ইত্যাদি।

মহারাসলীলা সেবা সংঘের সাধারণ সম্পাদক শ্যাম সিংহ জানান, মাধবপুর জোড়ামণ্ডপে রাসোৎসব সিলেট বিভাগের মধ্যে ব্যতিক্রমী আয়োজন। এখানে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার আগমন ঘটে। বর্ণময় শিল্পসমৃদ্ধ বিশ্বনন্দিত মণিপুরী সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী রাস উৎসবে সবার মহামিলন ঘটে।

মাধবপুর মণিপুরি মহারাসলীলা সেবা সংঘের সাধারণ সম্পাদক শ্যাম সিংহ নিউজবাংলাকে জানান, রাখালনৃত্যের মাধ্যমে দুপুরে শুরু হয়েছে রাসলীলা। ধর্ম-বর্ণ ভেদাভেদ ভুলে লাখো মানুষের সমাগম ঘটেছে। সব ধরনের সুবিধা বিদ্যমান থাকায় এখানকার রাসলীলা বড় উৎসবে রূপ নিয়েছে। উৎসবে যোগ দিতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার ভক্ত-অনুরাগী এসেছেন এখানে।’

মণিপুরি সংস্কৃতির গবেষক প্রভাস সিংহ জানান, ১৭৬৯ খ্রিষ্টাব্দে রাজা ভাগ্যচন্দ্র সিংহের আয়োজনে মণিপুরিরা প্রথম রাসলীলা পালন করেন। সে সময় মণিপুরি রাজা স্বপ্নাদীষ্ট হয়ে কন্যা লাইরোবিকে রাধার ভূমিকায় অবতীর্ণ করে রাস অনুষ্ঠানটির আয়োজন করেন। মৈথিলি ও ব্রজবুলি ভাষার বিভিন্ন পদের মণিপুরি সংগীতের নিজস্ব গায়কী ও মুদ্রা-পদবিক্ষেপে জটিল এবং ধ্রপদি ধারার গীতি-নৃত্যধারায় তা পালন করা হয়েছিল।

মণিপুরিদের আদিভূমি ভারতের মণিপুর থেকে এই রাস উপমহাদেশে তথা সমগ্র বিশ্বের নৃত্যকলার মধ্যে একটি বিশেষ স্থান করে দিয়েছে। ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান হলেও এর নৃত্যশৈলী বরাবরই সব ধর্ম ও জাতির মানুষকে আকর্ষণ করেছে।

এ বিভাগের আরো খবর