একবিংশ শতাব্দীতে সোশ্যাল মিডিয়ার আধিপত্য বিস্তার একেবারেই স্পষ্ট। সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব এখন সর্বত্রই। বিশ্বব্যাপী ৪৭০ কোটি মানুষ এখন সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করছে, যা বিশ্বের জনসংখ্যার ৫৯ শতাংশ।
যোগাযোগব্যবস্থা সহজ করার পাশাপাশি মানুষের জীবন যাপনে এক বিশাল ধরনের পরিবর্তন এনেছে এই সোশ্যাল মিডিয়া। ব্যবহারকারীদের এর সঙ্গে জড়িত রাখতে সোশ্যাল মিডিয়া এবং বিনোদন প্ল্যাটফর্মগুলো বিভিন্ন ধরনের ফিচার উন্নয়ন করে চলেছে।
আমাদের যোগাযোগদক্ষতা, সম্পর্ক তৈরি, তথ্য জানতে এবং প্রচারে এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার ওপর একটা উল্লেখযোগ্য প্রভাব তৈরি করেছে সোশ্যাল মিডিয়া। তাই সোশ্যাল মিডিয়া বিশেষ করে টিকটকের সঠিক ব্যবহারে সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন দেশের বিনোদনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের তারকারা।
প্রতিদিনের জীবনে এখন সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার অত্যাবশ্যকীয় হয়ে পড়েছে। এখন এটি শুধু ব্যক্তিগত উদ্দেশ্যেই নয়, বরং ব্যবসায়িক কাজে পণ্য বা সেবার বিস্তারেও এর ব্যবহার করা হচ্ছে। মার্কেটারটা বিভিন্ন ধরনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে তাদের ব্যবসাকে বিভিন্ন উপায়ে বড় করছেন। সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সাররাও বিভিন্ন সময় মার্কেটিং টুল হিসেবে বিভিন্ন উদ্দেশ্যে কাজ করে যাচ্ছেন। সর্বোপরি, মানুষের মন এখন সোশ্যাল মিডিয়া দ্বারা খুব ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হচ্ছে।
তারওপর তরুণরা বিভিন্ন সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং প্ল্যাটফর্মে আগের চেয়ে আরও বেশি সক্রিয়। তারা তাদের প্রতিদিনের জীবন নিয়ে কনটেন্ট তৈরি এবং সেটি প্ল্যাটফর্মগুলোতে শেয়ার করছেন। চলমান ট্রেন্ড এবং বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ-সম্পর্কিত কনটেন্ট ভার্চুয়াল জগতে শেয়ার করার দিকে তরুণরা ঝুঁকছেন। আমরা দেখতে পাচ্ছি যে পরবর্তী প্রজন্ম তাদের প্রকাশ করতে খুব বেশি সোশ্যাল মিডিয়ার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।
জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোর মধ্যে তরুণ প্রজন্মের কাছে শীর্ষে রয়েছে টিকটক। এখন তরুণ জনগোষ্ঠী অন্য যেকোনো সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের চেয়ে টিকটকই বেশি ব্যবহার করে। আমরা দেখেছি যে কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে টিকটক কীভাবে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। মাসে ১০০ কোটির বেশি সক্রিয় ব্যবহারকারী নিয়ে টিকটক এখন বিশ্বের শীর্ষ সোশ্যাল মিডিয়া।
ব্যবহারকারীরা টিকটকে ১৫ সেকেন্ড থেকে শুরু করে ১০ মিনিট পর্যন্ত সাউন্ড ইফেক্টসহ ভিডিও তৈরি ও শেয়ার করতে দেয়। নাচ, গান, খবর, ভ্রমণ, ভ্লগ, শিক্ষা ইত্যাদি-সম্পর্কিত বিভিন্ন ধরনের কনটেন্ট যে কেউ এই প্ল্যাটফর্মটিতে পেতে পারে। খুব সহজেই হাই-কোয়ালিটির শর্ট ভিডিও তৈরির জন্য টিকটক ব্যবহারকারীদের সরবরাহ করে এডিটিং টুলস, মিউজিক ক্লিপস, সাউন্ড ইফেক্ট, ফিল্টার এবং আরও অনেক ধরনের ভিডিও ক্রিয়েশন টুলস।
টিকটকে অনেক সেফটি ফিচার রয়েছে এবং ফ্যামিলি পেয়ারিং ফিচার এর অন্যতম প্রমাণ। ফ্যামিলি পেয়ারিংয়ের মাধ্যমে টিকটক তিনটি অপশন অফার করে: স্ক্রিন টাইম ম্যানেজমেন্ট, রেস্ট্রিক্টেড মোড এবং ডিরেক্ট মেসেজ। স্ক্রিন টাইম ম্যানেজমেন্টের সাহায্যে অভিভাবকরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন তাদের কিশোর-কিশোরীরা দৈনিক কতক্ষণ সময় টিকটকে ব্যয় করতে পারবে।
অপরদিকে, রেস্ট্রিক্টেড মোড এমন সব কনটেন্টের উপস্থিতি সীমিত করে যা তরুণদের জন্য উপযুক্ত না-ও হতে পারে। ফ্যামিলি পেয়ারিংয়ের মাধ্যমে, বাবা-মা তাদের সন্তানদের টিকটক অ্যাকাউন্ট পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। সব মিলিয়ে, ফ্যামিলি পেয়ারিং বাবা-মায়ের উদ্বেগের প্রতি টিকটকের ইতিবাচক প্রতিক্রিয়ার বিষয়টিই প্রমাণ করে।
প্রতিটি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের সুবিধা এবং অসুবিধা দুটি দিকই রয়েছে, তবে এটি নির্ভর করে আমরা এটি কীভাবে ব্যবহার করি তার ওপর। ব্যবহারকারীরা তাদের নিজস্ব পছন্দের ওপর ভিত্তি করে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলো কীভাবে ব্যবহার করবে, তা নির্ধারণ করতে পারে৷
টিকটক অল্প সময়ের মধ্যে যে অসাধারণ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে, তা দেখায় কীভাবে বিভিন্ন বয়সের মানুষজন প্ল্যাটফর্মটির দিকে ইতিবাচকভাবে সাড়া দিয়েছে। এই প্ল্যাটফর্মের ইতিবাচক বৈশিষ্ট্যগুলোকে সমর্থন করেই এখন এটিকে আমরা আরও বড় এবং উন্নত মাধ্যম হিসেবে গড়ে তুলতে পারি।
লেখক: একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক