কক্সবাজারের রামুর বাঁকখালী নদীর দুই পাড়ে ভিড় হাজারও নর-নারীর। তাদের বেশিরভাগই বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী, অন্যরা দর্শনার্থী। নানা বাদ্য বাজিয়ে নাচ-গানে ব্যস্ত শিশু-কিশোর-যুবকরা।
প্রবারণা পূর্ণিমায় ফানুস ওড়ানোর পর রীতি অনুযায়ী নদীতে কল্পজাহাজ ভাসায় বৌদ্ধরা। রামুর বাঁকখালী নদীতে সোমবার বিকেলে চলে এই উৎসব। বাঁশ, বেত, কাঠ ও রঙিন কাগজের তৈরি বাহারি কল্পজাহাজ ভাসানো হয় উৎসবমুখর পরিবেশে। তাতে অংশ নিতে ও উৎসব দেখতে জমে ভিড়।
বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে দুই দিনব্যাপী উৎসবের শেষ দিন হয় জাহাজ ভাসা উৎসব।
‘সম্প্রীতির জাহাজে, ফানুসের আলোয় দূর হোক সাম্প্রদায়িক অন্ধকার’- এই স্লোগানে রামুর ফকিরা বাজারের পূর্বপাশে বাঁকখালী নদীতে আয়োজিত হয় এবারের উৎসব।
রামুর পূর্ব রাজারকুল, হাজারীকুল, হাইটুপী রাখাইন পাড়া, হাইটুপী বড়ুয়াপাড়া, দ্বীপ-শ্রীকুল, জাদিপাড়া ও মেরংলোয়া গ্রাম থেকে মোট ৮টি কল্পজাহাজ ভেলায় করে নদীতে ভাসানো হয়। প্রতিটিতে লাগানো মাইক; শিশু-কিশোররা জাহাজে চড়ে নানা বাদ্য বাজিয়ে ঘুরে বেড়ায়।
জাহাজ নিয়ে নদীর এক পাড় থেকে অন্য পাড়ে যেতে যেতে মাইকে চলে বৌদ্ধ কীর্তন- ‘বুদ্ধের মতো এমন দয়াল আর নাইরে...।’
রামু কেন্দ্রীয় প্রবারণা ও জাহাজ ভাসা উৎসব উদযাপন পরিষদের সভাপতি অর্পণ বড়ুয়া বলেন, ‘৭১ সালে যেভাবে সবকিছু ভুলে স্বাধীনতার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছিল বাঙালি, সে ঐতিহ্যে আঘাত করছে দুষ্কৃতিকারীরা। সেই প্রেক্ষাপটে এই জাহাজ ভাসা উৎসবে সব ধর্মের মানুষের উপস্থিতি বলে দেয়- সাম্প্রদায়িক উসকানিদাতাদের কালো দাঁত ভেঙে দেয়ার শপথ নেবে সব ধর্মের মানুষ।’
আয়োজক কমিটির সাধারণ সম্পাদক জিৎময় বড়ুয়া বলেন, ‘দেশে চলমান যে সাম্প্রদায়িক হামলার বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটছে, সে ঘটনার পুনরাবৃত্তি চাই না আমরা। রামু যে একটি অসাম্প্রদায়িক এলাকা, এটি প্রমাণ করে এ উৎসবে আসা সব ধর্মের মানুষের সরব উপস্থিতি। এ মেলবন্ধন ধরে রাখতে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।’
রামুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএও) ফাহমিদা মোস্তফা বলেন, ‘মূলত উৎসবটি বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের হলেও এখানে সব ধর্মের মানুষের উপস্থিতি লক্ষণীয়। সব ধর্মের মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে।’
এই উৎসব ঘিরে নদীর দুই পাড়েই ছিল অতিরিক্ত পুলিশ। রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ারুল হোসাইন জানান, সাদা পোশাকেও পুলিশ নজর রেখেছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া। উৎসব দেখতে আসেন কক্সবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ব্যারিস্টার প্রশান্ত ভুষণ বড়ুয়া, ঢাকা আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারের উপাধ্যক্ষ ভিক্ষু সুনন্দপ্রিয়, রামুর কেন্দ্রীয় সীমা মহাবিহারের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ভদন্ত শীলপ্রিয় মহাথের, বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান সুপ্ত ভূষণ বড়ুয়াসহ অনেকে।
রামুর পাশাপাশি কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতেও জাহাজ ভাসা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।
অর্ধশতাব্দীকাল ধরে রামুতে এ উৎসবের আয়োজন করা হলেও বৌদ্ধপল্লীতে হামলার ঘটনার পর ২০১২ ও ২০১৩ সালে এ উৎসব হয়নি।