বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

দূরে থাকুক সব যুক্তি, ভেসে যান কোজাগরী পূর্ণিমায়  

  •    
  • ৯ অক্টোবর, ২০২২ ২০:৪৯

গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টটল এবং রোমান ইতিহাসবিদ প্লিনি দ্য এল্ডার মনে করতেন, আকাশের পূর্ণ চাঁদ পৃথিবীকে উন্মাদনায় ভাসিয়ে নিতে সক্ষম। চন্দ্রাহত বা লুনাটিক (lunatic) শব্দটিও এসেছে ল্যাটিন লুনাটিকাস (lunaticus) থেকে।

নিবিড় অমা-তিমির হতে বাহির হল জোয়ার-স্রোতে

শুক্লরাতে চাঁদের তরণী।

ভরিল ভরা অরূপ ফুলে, সাজালো ডালা অমরাকূলে

আলোর মালা চামেলি-বরনী॥

তিথির পরে তিথির ঘাটে আসিছে তরী দোলের নাটে,

নীরবে হাসে স্বপনে ধরণী।

উৎসবের পসরা নিয়ে পূর্ণিমার কূলেতে কি এ

ভিড়িল শেষে তন্দ্রাহরণী॥

আশ্বিনের শেষে কোজাগরী পূর্ণিমার রাত আজ। রবীন্দ্রসংগীতের সুরের সঙ্গে নিন্দ্রাহীন সারা রাত নিজেকে ভেজাতে পারেন পূর্ণ চাঁদের নরম আলোয়।

বহুকাল ধরে চাঁদের সঙ্গে গভীর আত্মিক বন্ধন মানুষের। দিনের রুক্ষ সূর্যের বিপরীতে রাতের আকাশের চাঁদ আনে প্রশান্তি, মনে বুলিয়ে দেয় ভালোলাগার পরশ। আর যদি হয় আজকের মতো পূর্ণিমা, তবে প্রাণখুলে হোন ‘চন্দ্রাহত’।

চাঁদের সঙ্গে মানুষের আত্মার সম্পর্ক ঠিক কবে থেকে সেটি খুঁজে বের করা কঠিন। তবে প্রাচীন কাল থেকেই চন্দ্রবন্দনা বিভিন্ন সমাজে প্রচলিত।

আধুনিক বিজ্ঞান বলছে, মানুষের মন ও শরীরের ওপর চাঁদের প্রভাব সামান্য। তারপরেও প্রাচীন নানান বিশ্বাসের কারণে চাঁদ এখনও আমাদের এত প্রিয়।

তাই চাঁদের আলোয় নিজেকে ভাসাতে হলে হতে হবে যুক্তিহীন, তবু আজ রাত জোৎস্নায় ডুবতে পারেন সব হিসাব ভুলে।

গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টটল এবং রোমান ইতিহাসবিদ প্লিনি দ্য এল্ডার মনে করতেন, আকাশের পূর্ণ চাঁদ পৃথিবীকে উন্মাদনায় ভাসিয়ে নিতে সক্ষম। চন্দ্রাহত বা লুনাটিক (lunatic) শব্দটিও এসেছে ল্যাটিন লুনাটিকাস (lunaticus) থেকে।

শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মানুষ মনের চাঞ্চল্য, মেজাজ পরিবর্তনসহ রহস্যময় নানা আচরণের জন্য চাঁদের প্রভাবকে দায়ী করেছে। পূর্বপুরুষের এই ধারণাগুলো প্রবাহিত হয়েছে প্রজন্মান্তরে।

আধুনিক মনোবিজ্ঞান বলছে, মানুষের মনের ওপরে চাঁদের প্রভাব নিয়ে ধারণাগুলোর বেশিরভাগই প্রাচীন লোককথা, পৌরাণিক কাহিনী বা মিথের সঙ্গে যুক্ত। এসব বাস্তব না হলেও এখনও প্রায় সবাই চাঁদের ‘মনভোলানো’ শক্তিতে আস্থা রাখেন

অ্যারিস্টটল এবং প্লিনি দ্য এল্ডার বিশ্বাস করতেন, মানুষের মস্তিষ্ক আর্দ্র বলে চাঁদ একে প্রভাবিত করার ক্ষমতা রাখে, যেভাবে পৃথিবীর জলাধার চাঁদের কারণে হয় উদ্বেলিত। তারা মনে করতেন, চাঁদের প্রতি মুগ্ধতা মানুষের মৃগী রোগ বা উন্মাদনাও বাড়িয়ে দিতে পারে।

কিছু আধুনিক চিন্তাবিদেরও ছিল এমন ধারণা। মনোচিকিৎসক আর্নল্ড লিবার ১৯৭৮ সালে ‘দ্য লুনার ইফেক্ট: বায়োলজিক্যাল টাইডস অ্যান্ড হিউম্যান ইমোশন্স’ এবং “হাউ দ্য মুন ইফেক্টস ইউ: আ কম্পেলিং অ্যান্ড কনট্রোভার্সিয়াল বুক অন দ্য মুন’স অওসাম পাওয়ার” বইয়ে অনেকটা একই কথা লিখেছেন।

লিবার বলেছেন, ‘দেহে প্রায় ৭০ ভাগ পানি থাকায় পৃথিবীর মহাসাগরের মতো মানুষও চাঁদের বিভিন্ন পর্যায়ে জোয়ার-ভাটার মতো পরিবর্তন অনুভব করে। তিনি লিখেছেন, এ কারণে পূর্ণিমা রাতে খুন, আত্মহত্যা, আক্রমণ, মানসিক উচাটন এবং মারাত্মক দুর্ঘটনা নাটকীয়ভাবে বেড়ে যায়।

সাধারণভাবে তত্ত্বটি আকর্ষণীয় মনে হলেও বিভিন্ন গবেষণায় এর কোনো প্রমাণ মেলেনি। একটি সমীক্ষায় দেখা যায়, পৃথিবীর অভিকর্ষ বল চাঁদের তুলনায় ৫ হাজার ১২ গুণ বেশি, ফলে মানুষের ওপর চাঁদের প্রভাব পোকার সমতুল্য।

চাঁদ বিশাল এবং উন্মুক্ত জলাধারের জোয়ার নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, তবে এক গ্লাস পানি বা বাথটাবের উপর বলতে গেলে এর কোনো প্রভাব নেই। মানুষের দেহের জলীয় উপাদানেও চাঁদের কোনো প্রভাব নেই।

১৯৮৫ সালে গবেষকেরা আত্মহত্যা, অপরাধ এবং মানসিক জটিলতার ঘটনার সঙ্গে চান্দ্রচক্রের সম্পর্ক আছে কিনা, তা নিয়ে গবেষণা চালান। এতে পূর্ণিমার সঙ্গে মানুষের মনের অস্থিরতার সম্পর্ক পাওয়া যায়নি। এছাড়া আরও কিছু গবেষণায় একই ধরনের ফল পাওয়া গেছে। এমনকি ফিনল্যান্ডে এক গবেষণায় দেখা গেছে, পূর্ণিমার সময়ে খুনোখুনির পরিমাণ বরং কম।

তাহলে চাঁদ আমাদের মনকে চঞ্চল করে তোলে এমন ধারণা তৈরি হলো কীভাবে? ডিসকভার ম্যাগাজিনে প্রকাশিত এক নিবন্ধে এর একটি সম্ভাব্য জবাব দেয়া হয়েছে।

এতে বলা হয়, চাঁদের আলোয় ভেসে যাওয়া রাতে আমাদের পূর্বপুরুষের স্বাভাবিক ঘুমে ব্যাঘাত ঘটত। আর ঘুমের অভাবে মেজাজ খারাপের কথা তো সবার জানা। সাম্প্রতিক কিছু গবেষণাতেও দেখা গেছে, চান্দ্রচক্র মানুষের ঘুমকে প্রভাবিত করে। আর এ কারণেই সম্ভবত চাঁদের পরিক্রমার সঙ্গে আমাদের আচরণেও কিছু পরিবর্তন ঘটে।

অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, চাঁদ নিয়ে মনের ভেতরে লুকিয়ে থাকা কিছু দৃঢ় বিশ্বাসের কারণে আমরা যুক্তিহীনভাবেই চন্দ্রাহত হতে ভালোবাসি। পূর্ণিমার রাতে আমরা আলোড়িত হই, কখনও গ্রাস করে অস্থিরতা, আবার কখনও ভাসি প্রশান্তিতে।

সূর্যের আলো ধার করে চলার পরেও সূর্যের চেয়ে আমরা বেশি ভালোবাসি চাঁদকেই।

এ বিভাগের আরো খবর