বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বাবার বাড়ি থেকে স্বামীর ঘরে ফিরলেন দুর্গা

  •    
  • ৫ অক্টোবর, ২০২২ ১৭:১৭

সকালে দশমী বিহিত পূজা শেষে দর্পণ বিসর্জন দেয়া হয়। এরপর শুরু হয় বিজয়া দশমীর শোভাযাত্রা। এই আয়োজন শেষে বিসর্জন দিতে ঢাকা মহানগরের পূজা মণ্ডপগুলোর প্রতিমাবাহী গাড়িগুলো জড়ো হয় বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে।

লাখো-কোটি ভক্তকে বিচ্ছেদের কষ্টে ভাসিয়ে কৈলাসে স্বামীর ঘরে ফিরে গেলেন দেবী দুর্গা। শেষ হলো মর্ত্যে বাবার বাড়িতে সন্তানদের নিয়ে বার্ষিক অবকাশ। ভক্তদের সঙ্গে বিচ্ছেদের বিজয়া দশমীতে তাই বেজেছে বিষণ্ণতার সুর ৷

একে একে ষষ্ঠী, সপ্তমী, অষ্টমী আর নবমী তিথি পার করে বিজয়ার শেষ দিনে বুধবার বিকেলে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে সব মণ্ডপে দেবীকে বিদায় জানান ভক্ত-পুণ্যার্থীরা। মণ্ডপে মণ্ডপে চলে নারীদের সিঁদুরের খেলা।

রাজধানীর মণ্ডপগুলোতে সকালে দশমী বিহিত পূজা শেষে দর্পণ বিসর্জন দেয়া হয়। এরপর শুরু হয় বিজয়া দশমীর শোভাযাত্রা। এই আয়োজন শেষে বুড়িগঙ্গা নদীর বিভিন্ন প্রান্তে বিসর্জন দিতে ঢাকা মহানগরে পূজা মণ্ডপগুলোর প্রতিমাবাহী গাড়ি জড়ো হয় নদী তীরে।

বুধবার বিকেলে রাজধানীতে প্রতিমা বিসর্জনের শোভাযাত্রায় ভক্তরা। ছবি: নিউজবাংলা

বিকেল সাড়ে ৩টায় ওয়ারীর টিপু সুলতান রোড থেকে শ্রীশ্রী রাধা গোবিন্দ জিউ বিগ্রহ মন্দির থেকে প্রথম প্রতিমা বির্সজনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে বির্সজন শুরু হয়।

এরপর একে একে আসে ধানমন্ডি সার্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটি, টিকাটুলির সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজ থেকে ইয়াংস্টার পূজা কমিটি ও হাজারীবাগ সিটি কলোনি মন্দিরের প্রতিমা।

প্রতিমা নিয়ে আসা সারি সারি ট্রাক থেকে পর্যায়ক্রমে সেগুলো নৌকায় করে বুড়িগঙ্গা নদীতে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেখানে দেয়া হয় বিসর্জন।

ভক্তরা বিষাদ ভুলে হাসিমুখে দেবী মাকে বিদায় জানাতে উৎসবে মেতে ওঠেন। বিসর্জনের আগ পর্যন্ত তারা একে-অন্যকে সিঁদুরে রাঙান, ঢাক ঢোলের তালে নাচ-গান করেন। একই সঙ্গে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন, সারাটা বছর যেন এমন আনন্দে কেটে যায়।

স্বামীবাগ থেকে এসেছেন ননী গোপাল সরকার ও তার স্ত্রী পুষ্প রানী সরকার। তারা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা এসেছি মাকে বির্সজন দিতে। আজ মাকে বির্সজন দিলাম, যাতে মা আগামী বছর আবার আসে আমাদের জন্য সুখ-সমৃদ্ধি নিয়ে।’

বিজয়া দশমীতে রাজধানীর এক পূজা মণ্ডপে ভক্ত-পুণ্যার্থীরা মাতেন সিঁদুর খেলায়। ছবি: নিউজবাংলা

বিকেল ৩টায় রাজধানীর মোহাম্মাদপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, কড়া পুলিশ পাহারায় একাধিক প্রতিমাবাহী গাড়িগুলো বসিলা অভিমুখে এগিয়ে যাচ্ছে। আর ভক্তরা ঢাক-ঢোল ও বাঁশি বাজিয়ে নেচে-গেয়ে দেবীকে বিদায় জানাচ্ছেন। সড়কের দুই পাশে পথচারীরা দাঁড়িয়ে এই আনন্দ আয়োজনের শেষ মুহূর্তের দৃশ্য উপভোগ করছেন। বসিলায় বুড়িগঙ্গা নদীতে প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয় বিকেল ৪টা ১৫ মিনিটে।

এদিকে নদী প্রান্তে এসে দেখা যায় হাজারও মানুষের ভিড়। শেষবারের মতো দেবী দুর্গাকে দেখতে ভিড় জমিয়েছেন অনেকে।

রায়েরবাজার শেরেবাংলা রোডের কালী মন্দির থেকে প্রতিমা নিয়ে এসেছেন প্রদীপ মণ্ডল ও অন্যরা। এই ভক্ত নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মায়ের কাছে চেয়েছি তিনি আমাদের সকলের মঙ্গল করুন। সুখে-শান্তিতে রাখুন। সকলের মঙ্গল হোক- এটাই কামনা করি৷’

প্রতিমা বিসর্জনকে কেন্দ্র করে সদরঘাটসহ বুড়িগঙ্গার বিভিন্ন অংশে ছিল কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা। এ বিষয়ে কোতোয়ালি থানার ওসি মিজানুর রহমান নিউজবাংলাক বলেন, ‘সুষ্ঠুভাবে প্রতিমা বিসর্জনের জন্য আমরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছি। আশা করি প্রতিমা বিসর্জনে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে না।

‘প্রতিমা বির্সজন দিতে গিয়ে যাতে কোনোরকম দুর্ঘটনা না ঘটে সে জন্য আমরা বৃদ্ধ, শিশু ও মহিলাদের নৌকায় উঠতে দিচ্ছি না। এখানে পূজা উদযাপন কমিটি আছে। তারা যাদের সিলেক্ট করছে তারাই কেবল নৌকায় উঠে প্রতিমা বির্সজন দিতে পারছে।’

রাজধানীতে বিজয়া দশমীর দিনে প্রতিমা বিসর্জনের আয়োজনেও ছিল কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা। ছবি: নিউজবাংলা

এ ছাড়া প্রতিমা বিসর্জনের সময় কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে তাৎক্ষণিক উদ্ধার তৎপরতার জন্য ছিল নৌ-পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের উপস্থিতি।

প্রতিমা বির্সজনের সময় বুড়িগঙ্গা নদীতে বাংলাদেশ নৌ-পুলিশের জলযান নিয়ে টহল দিতে দেখা গেছে। এ সময় তারা বেশ কয়েকটি স্পিড বোট দিয়ে প্রতিমা বির্সজনের ঘাটসহ আশপাশ এলাকা টহল দেয়। নদীপথে প্রতিমা নিয়ে যাওয়া প্রতিটা নৌকার সঙ্গে ছিল নৌ-পুলিশের স্পিড বোট।

মহানগর সার্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটির সহ-সমাজ কল্যাণ সম্পাদক বিপুল ঘোষ শংকর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রতিমা বির্সজন উপলক্ষে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যে নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিয়েছে তাতে আমরা খুশি। সব মিলে ৯০টি মন্দির থেকে এখানে প্রতিমা নিয়ে আসা হচ্ছে বির্সজনের জন্য। আমরা আমাদের কমিটির মাধ্যমে এই বির্সজন প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’

শারদীয় দুর্গোৎসবের সমাপ্তি ঘটে বিজয়া দশমীর মাধ্যমে। তাই তো ‘দশমী’ কথাটির মধ্যে রয়েছে আবেগ, বিচ্ছেদের কষ্ট। শনিবার ষষ্ঠীতে দেবী দুর্গা কৈলাস ছেড়ে সপরিবারে এসেছিলেন মর্ত্যে। দশমী তিথিতে দেবী ফিরছেন কৈলাসে।

ঢাকাসহ সারা দেশে আজই দেবী দুর্গার প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হবে। এর মধ্য দিয়ে শুরু হবে এক বছরের অপেক্ষা- যেদিন দেবী আবার স্বামীর ঘর থেকে নেমে আসবেন মর্ত্যে, ভক্তদের মাঝে।

রাজধানীর বসিলায় বুড়িগঙ্গা নদীতে প্রতিমা বিসর্জন দিচ্ছেন ভক্তরা। ছবি: নিউজবাংলা

পৌরাণিক শাস্ত্র অনুযায়ী, টানা যুদ্ধ করে দশম দিনে দেবী দুর্গা বধ করেছিলেন মহিষাসুরকে। এ জন্য একে বিজয়া দশমী বলা হয়ে থাকে।

পুরাণ অনুযায়ী, এবার দেবী মর্ত্যে এসেছেন গজে চেপে। এর অর্থ হলো সুখ ও সমৃদ্ধি বয়ে আনা।

আর দেবী মর্ত্য ছাড়ছেন নৌকায় চড়ে। এর ফলে ধরনী হবে শস্যপূর্ণ। তবে একই সঙ্গে থাকবে অতিবৃষ্টি বা বন্যা।

সারা দেশে এবার ৩২ হাজার ১৬৮টি মণ্ডপে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়। গত বছরের তুলনায় এবার মণ্ডপ সংখ্যা বেড়েছে ৫০টি। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরে ২৪১টি মণ্ডপে পূজা উদযাপন হচ্ছে।

এ বিভাগের আরো খবর