বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

গুগল বদলে দিচ্ছে দুর্গার রূপ

  •    
  • ২ অক্টোবর, ২০২২ ১৭:৩৪

প্রতিমা শিল্পীরা বলছেন, ১৫ বছর আগেও দেবী দুর্গাসহ লক্ষ্মী, সরস্বতীর মুখের গড়ন ছিল এক। মাটি দিয়ে বানানো ছাঁচে গড়া হতো প্রতিমা। গণেশ, কার্তিক ও অসুরের জন্য ছিল আলাদা ছাঁচ। তবে এখন ছাঁচে ফেলে প্রতিমা গড়ার রীতি অনেকটাই বদলে গেছে। প্রতি বছর আলাদা গড়নে ও রূপে তৈরি হচ্ছে দেবী দুর্গার প্রতিমা।

দুই দশক আগেও সারা দেশে দুর্গা প্রতিমার মুখের গড়ন বা সাজসজ্জা ছিল অনেকটা আটপৌড়ে। সময় যত গড়িয়েছে সেই গড়নে এসেছে পরিবর্তন। প্রতিমার সাজসজ্জাও হচ্ছে বর্ণাঢ্য। এর পেছনে ইন্টারনেটের মতো প্রযুক্তির বড় ধরনের ভূমিকা দেখছেন প্রতিমা শিল্পীরা।

তাদের বক্তব্য, আগে সব প্রতিমাই তৈরি হতো শিল্পীর নিজস্ব ভাবনা থেকে, তবে এখন অনেকে সার্চ ইঞ্জিন গুগল থেকে পছন্দের প্রতিমার ছবি বাছাই করে সে অনুযায়ী দুর্গা গড়তে বলেন। ফলে প্রতি বছর বদলে যাচ্ছে প্রতিমার মুখের গড়ন ও সাজসজ্জা।

শিল্পীরা বলছেন, ১৫ বছর আগেও দেবী দুর্গাসহ লক্ষ্মী, সরস্বতীর মুখের গড়ন ছিল এক। মাটি দিয়ে বানানো ছাঁচে গড়া হতো এই তিন প্রতিমা, এ ছাঁচকে বলা হতো একচালা। এ ছাড়া গণেশ, কার্তিক ও অসুরের জন্য ছিল আলাদা ছাঁচ।

তবে এখন ছাঁচে ফেলে প্রতিমা গড়ার রীতি অনেকটাই বদলে গেছে। ফলে প্রতি বছর আলাদা গড়নে ও রূপে তৈরি হচ্ছে দেবী দুর্গার প্রতিমা।

শাঁখারীবাজারের একটি মণ্ডপের দুর্গা প্রতিমা

দুর্গা প্রতিমার গড়ন দুই দশকে কতটা এবং কেন বদলেছে তা জানতে নিউজবাংলা কথা বলেছে পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী শাঁখারীবাজার, বাংলাবাজার, তাঁতীবাজার এলাকার প্রতিমা শিল্পী ও পূজার আয়োজকদের সঙ্গে।

বদলে যাচ্ছে দেবীর গড়ন, মণ্ডপের নকশা

বাংলাবাজারের জমিদার বাড়িতে দুর্গাপূজা হচ্ছে ৪৫ বছর ধরে। নব্বইয়ের দশকেও মন্দিরে পূজার সাজ ছিল ছিমছাম। তবে এখন মণ্ডপ সাজানো হয় বড় আয়োজনে।

এবার মণ্ডপজুড়ে সাদা রঙের ছড়াছড়ি। দেবী দুর্গাসহ সব প্রতিমার রংও সাদা।

আয়োজকেরা বলছেন, এবার তারা শান্তির প্রতীক হিসেবে সাদা রং বেছে নিয়েছেন। আর প্রতিমা বানানোর ক্ষেত্রে সহায়তা নেয়া হয়েছে ইন্টারনেট প্রযুক্তির।

জমিদার বাড়ির প্রতিমা তৈরি করেছেন বলাই পাল। ৩৪ বছর ধরে প্রতিমা শিল্পীর কাজ করছেন তিনি। এবারের পূজায় সব মিলিয়ে ১২টি দুর্গা প্রতিমা তৈরি করেছেন এই শিল্পী। এর মধ্যে ঢাকায় ১১টি এবং ঢাকার বাইরে একটি প্রতিমা গড়েছেন তিনি।

বলাই পাল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের আগে একচালা বা পাঁচচালা দিয়ে প্রতিমা তৈরি করতে হতো। তখন সব প্রতিমার চেহারা একই রকম থাকত। তবে এখন আর সে ধরনের কাজ হয় না। আমাদের এখন প্রতি বছর আলাদা আলাদা চেহারার প্রতিমা বানাতে হয়।’

বাংলাবাজার জমিদার বাড়ি মণ্ডপের দুর্গা প্রতিমা

এখন অনেকেই গুগল থেকে ছবি ডাউনলোড করে সে অনুযায়ী প্রতিমা করতে বলেন জানিয়ে বলাই পাল বলেন, ‘আমাদের কাছে ছবি দিলে আমরা তেমন করে তৈরি করে দিই। তবে দেবীর যে রূপ তাতে বড় কোনো পরিবর্তন আসে না। দেখা যায় অনেকেই গোলাকার বা লম্বাকৃতির মুখ বানাতে বললে আমরাও তেমন বানিয়ে দিই।

‘আমাদের মনের মধ্যে নিজস্ব যে চেহারা থাকে সেটাও প্রতিমার রূপে প্রতিফলিত হয়। আমি যে ১২টি প্রতিমা তৈরি করেছি সেগুলো ১২ রকমের হয়েছে। এর মধ্যে অনেকে আমাকে বিভিন্ন ছবির ক্যাটালগ দিয়েছে। আমি সেটাও অনুসরণ করেছি।

শাঁখারীবাজারের সঙ্ঘমিত্র পূজা কমিটির প্রতিমা তৈরি করেছেন মানিকগঞ্জের প্রতিমা শিল্পী সুকুমার পাল। ২৮ বছর ধরে প্রতিমা শিল্পের সঙ্গে জড়িত সুকুমার ১০ বছর ধরে এই কমিটির প্রতিমা তৈরি করছেন।

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রতিবারই মায়ের চেহারায় পরিবর্তন আসে। এটা আমাদের মাথার মধ্যে থাকে। আমরা একটা পরিকল্পনা করে থাকি। একেক বছর একেক রকম হয়। তবে এখন অনেকেই ছবি দিয়ে দেয়, আর সেটির সঙ্গে আমি একটা রূপ চিন্তা করে প্রতিমা তৈরি করি।’

পাশের দেশ ভারতে বিভিন্ন থিম ও ব্যক্তির চেহারার সঙ্গে মিল রেখে প্রতিমা তৈরির চল রয়েছে। তবে বাংলাদেশের প্রতিমা শিল্পী ও আয়োজকদের দাবি, নিজস্ব স্বকীয়তাকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন তারা।

শাঁখারীবাজারের প্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাবের দুর্গা প্রতিমা

বাংলাবাজারের জমিদার বাড়ি পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ দাস শংকর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা আমাদের মতো করেই প্রতিমা তৈরি করে থাকি। আমি নিজে ইন্টারনেট থেকে বিভিন্ন ছবি দেখে একটা নিজস্ব ছবি বানিয়ে তা নিয়ে প্রতিমা শিল্পীর সঙ্গে আলোচনা করি। এভাবে মায়ের রূপ নির্ধারণ করা হয়।’

নব্বইয়ের দশকের মণ্ডপে তেমন সাজসজ্জা থাকত না জানিয়ে বিশ্বজিৎ বলেন, ‘এখন আমরা মন্দিরের জন্য ভিন্ন ভিন্ন নকশা করে থাকি।’

শাঁখারীবাজারের গলিতে সব মিলিয়ে এবার ছয়টি মণ্ডপে পূজা হচ্ছে। এর মধ্যে গলির শুরুতে প্রতিদ্বন্দ্বী পূজা কমিটির পূজায় জাঁকজমক সবচেয়ে বেশি।

প্রতিমা তৈরির খরচ বেড়েছে

গত বছরের তুলনায় এবার প্রতিমা তৈরির খরচ বেড়েছে বলে জানান আয়োজক ও শিল্পীরা।

শাঁখারীবাজারের নব নবমী মণ্ডপের দুর্গা প্রতিমা

জমিদার বাড়ির প্রতিমা শিল্পী বলাই পাল বলেন, ‘এবার জমিদার বাড়ির প্রতিমা গড়তে আমার খরচ হয়েছে প্রায় ৮৫ হাজার টাকা, যা গতবারের তুলনায় ১০ হাজার টাকা বেশি। আমার সঙ্গে আরও পাঁচজন কাজ করেছেন। তাদের আলাদা বেতন দিতে হয়। সেখানেও গতবারের তুলনায় ১ থেকে ২ হাজার টাকা বাড়তি দিতে হচ্ছে। এর আগের দুই বছর করোনার কারণে প্রতিমা বানানোর খরচ পড়ে গিয়েছিল, এবার তা বেড়ে গেছে।’

পূজার আয়োজকেরা বলছেন, প্রতিমার পাশাপাশি মণ্ডপ সাজানোর খরচও বেড়েছে। এ ছাড়া পূজার উপকরণের দামও বাড়তি।

শাঁখারীবাজার ঘুরে দেখা যায়, পূজায় সবচেয়ে ব্যবহৃত ধূপকাঠির দাম প্যাকেটপ্রতি বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা। এ ছাড়া দেবীর অলংকারসহ অন্য উপকরণের দামও বেড়েছে।

সুর ঘুড়ি ঘরের বিক্রেতা সুমন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘করোনার কারণে গত দুবার বিক্রি তেমন না হলেও এবার চাহিদা অনেক। আমার দোকানে বিভিন্ন ধরনের ধূপকাঠি আছে। এর মধ্যে ভারতীয়গুলো বেশি জনপ্রিয়। আর দাম বেড়েছে প্রতি প্যাকেটে ১০ থেকে ২০ টাকা।’

পূজার অঞ্জলির উপকরণ, ঘট, প্রদীপ, থালাসহ অন্যান্য উপকরণের দোকানেও ভিড় দেখা গেছে। এ ছাড়া পূজারি নারীর সিঁদুর, আলতা, টিপের বিক্রিও বেড়েছে কয়েক গুণ। ভিড় রয়েছে শাঁখার দোকানেও।

৫ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে শেষ হবে এবারের শারদীয় দুর্গোৎসব।

এ বিভাগের আরো খবর