ষষ্ঠীতে বোধনের মধ্য দিয়ে শনিবার শুরু হচ্ছে বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। গত দুই বছরে করোনা মহামারির বিবর্ণ সময় ও সর্বশেষ পূজায় কুমিল্লায় সহিংসতাকে উতরে এবারের দুর্গোৎসব জমজমাট করতে সারা দেশে নেয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি।
গতবারের চেয়ে এ বছর বেড়েছে মণ্ডপের সংখ্যা, জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনে দেবীবন্দনায় পুরোপুরি প্রস্তুত সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।
পঞ্জিকা অনুযায়ী, এবার দেবী মর্ত্যে আসছেন গজে (হাতি) চেপে। গজ বা হাতিতে চড়ে দেবীর আগমনের অর্থ হলো শুভ। মনে করা হয়ে থাকে, দেবী যদি গজে চড়ে মর্ত্যে আসেন, তাহলে তিনি সঙ্গে করে সুখ-সমৃদ্ধি নিয়ে আসেন। হাতি হচ্ছে জ্ঞান এবং সমৃদ্ধির প্রতীক।
আর ৫ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে দেবী মর্ত্য ছাড়বেন নৌকায় চড়ে। নৌকায় মনোকামনা পূর্ণ হওয়া বোঝানো হয়। ধরিত্রী হয়ে ওঠে শস্য-শ্যামলা। কিন্তু সেই সঙ্গে অতিবর্ষণ বা প্লাবনের আশঙ্কাও দেখা যায়।
পঞ্জিকা অনুযায়ী, শনিবার মহাষষ্ঠীর সকালে হবে দুর্গাদেবীর ষষ্ঠ্যাদি কল্পারম্ভ এবং ষষ্ঠিবিহিত পূজা, সন্ধ্যায় হবে দেবীর বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাস।
রোববার মহাসপ্তমীবিহিত পূজা, সোমবার মহাষ্টমীবিহিত পূজা, মঙ্গলবার মহানবমীবিহিত পূজা এবং বুধবার দশমীবিহিত পূজা সমাপন ও প্রতিমা বিসর্জন হবে।
পূজা উদযাপন পরিষদের হিসাবে দেশে এবার প্রায় ৩২ হাজার ১৬৮ মণ্ডপে দুর্গাপূজা হচ্ছে। এই সংখ্যা গতবারের চেয়ে ৫০টি বেশি। ঢাকা মহানগরে এবার পূজা হবে ২৪১টি মণ্ডপে, যা গতবারের চেয়ে ছয়টি বেশি। গতবার সারা দেশে পূজামণ্ডপের সংখ্যা ছিল ৩২ হাজার ১১৮টি।
প্রসঙ্গত, গত বছর সারা দেশে ব্যাপক নিরাপত্তা প্রস্তুতি নিয়ে শারদীয় উৎসব শুরু হয়। সার্বিক পরিস্থিতিও ছিল সন্তোষজনক। এর মধ্যে কুমিল্লায় একটি মন্দিরে হনুমান মূর্তির পায়ের কাছে মুসলমানদের ধর্মীয় গ্রন্থ কোরআন শরিফ রাখার মতো একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পরবর্তী সময়ে তা প্রাণঘাতী অবস্থায় রূপ নেয়। সহিংসতায় নিহত হন পাঁচজন। ওই সময়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনাও ঘটে। হুমকিতে পড়ে দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি।
এ বছরের মণ্ডপগুলোতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির স্বার্থে মণ্ডপকেন্দ্রিক সিসিটিভি ক্যামেরাও বসছে। তবে গ্রামের মণ্ডপগুলোতে এই নিরাপত্তা সুবিধা থাকছে না।
পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. চন্দ্রনাথ পোদ্দার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা এবার আশাবাদী। সরকার আন্তরিক, প্রশাসনও আন্তরিক। আমাদের দিক থেকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি আছে।
‘সার্বিক নিরাপত্তা বিষয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশনা দিয়েছি। সব মণ্ডপে নজরদারির ব্যবস্থাটা রাখতে বলা হয়েছে। এবার সব মন্দিরে আমাদের স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। যারা ২৪ ঘণ্টা পাহারায় থাকবেন।’
এই আগে গত সোমবার সংবাদ সম্মেলনে পূজা কমিটির সভাপতি জে এল ভৌমিক বলেন, ‘আমরা সম্পূর্ণভাবে নিরাপদ, এ কথা বলা যাবে না। ঘটনা ঘটতে পারে, তবে আমরা এবার খুব সচেতন। সর্বোচ্চ সিসিটিভির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। গ্রামে বিভিন্ন বার্তা পৌঁছে দেয়া হয়েছে।
ঢাকায় পূজা
ষষ্ঠীতে ঢাকা মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির উদ্যোগে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মেলাঙ্গনে কেন্দ্রীয় পূজামণ্ডপে, ঢাকার রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল, সিদ্ধেশ্বরী মন্দির, রমনা কালী মন্দির, স্বামীবাগের লোকনাথ ব্রহ্মচারী আশ্রম ও মন্দির, রামসীতা মন্দির, জয়কালী মন্দিরসহ বিভিন্ন মণ্ডপে ষষ্ঠীপূজার আয়োজন করা হয়েছে।
মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রমেন মণ্ডল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের প্রস্তুতি শেষ। এবার পূজা নিয়ে আমাদের খুব উদ্দীপনা রয়েছে। মেলা কমবেশি থাকবে। এবার আরতি প্রতিযোগিতা থাকবে।’
ঢাকা মহানগরে মোট ২৪১টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা হবে। এর মধ্যে সূত্রাপুর থানায় সবচেয়ে বেশি ২৫টি মণ্ডপে, কোতোয়ালি থানায় ২১টি, ওয়ারীতে ১৬টি, গেন্ডারিয়ায় ১৪টি, হাজারীবাগে ১৩টি, তুরাগে ১২টি, বাড্ডায় ১০টি, বনানীতে ৯টি, মোহাম্মদপুরে ৯টি, দারুসসালাম ও গাবতলীতে ৮টি, ডেমরায় ৮টি এবং তেজগাঁও থানায় ৬টি মণ্ডপ রয়েছে।’
পুরান অনুযায়ী, ব্রহ্মার বর পেয়ে মানুষ ও দেবতাদের অজেয় হয়ে উঠেছিলেন মহিষাসুর। ফলে তাকে পরাজিত করার জন্য ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বর যে মহামায়ারূপী নারী শক্তি তৈরি করেন তিনিই দেবীদুর্গা। দশভূজা দুর্গা টানা ৯ দিন যুদ্ধ করে মহিষাসুরকে বধ করেন।