নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে না পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তাতে তাদের কার্যাদেশ বাতিল করা হয়। সেই ঠিকাদার মামলা করে দেয়ায় নতুন করে কাজও শুরু করা যায়নি। বাগেরহাট পর্যটন করপোরেশনের মোটেলের মূল ভবনের কাজ এভাবেই আটকে গেছে মাঝপথে।
২০১৯ সালের জুনে শুরু হওয়া এই ভবনের কাজ ২০২১ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা ছিল। এরপর ১৫ মাস পার হলেও এখনও শেষ হয়নি এটির নির্মাণকাজ। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বাগেরহাট পর্যটন শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা। তবে পর্যটন করপোরেশন বলছে, মূল ভবনের কাজ বন্ধ থাকলেও সীমানা প্রাচীরসহ অন্যান্য কাজ চলমান রয়েছে।
বাগেরহাটের টুরিস্ট গাইড গোলাম মাওলা জুয়েল বলেন, ‘বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন ও ষাটগম্বুজ মসজিদ দেখতে প্রতিদিন কয়েক’শ দেশি-বিদেশি পর্যটক আসে এখানে। তবে ভালো হোটেল-মোটেল না থাকায় অনেক পর্যটক ও দর্শনার্থীকে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। থাকার ভালো জায়গা না থাকায় অনেকে পরিবার নিয়ে আসতে চায় না। এ কারণে এখানে পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটছে না। পর্যটন মোটেল নির্মাণ শুরু হলে আমরা ভেবেছিলাম এসব সমস্যার সমাধান হবে। কিন্তু অনেকদিন ধরে কাজ বন্ধ থাকায় আমরা খুবই হতাশ।’
ষাটগম্বুজ-সুন্দরবন ট্যুরিজম নামের ট্যুর অপারেটরের পরিচালক মীর ফজলে সাঈদ ডাবলু বলেন, ‘পর্যটন করপোরেশনের এ মোটেলের কোনো বিকল্প নেই। সরকারের উচিত অতি দ্রুত এই ভবনের নির্মাণকাজ শেষ করে বাগেরহাটবাসীর আশা-আকাঙ্খা পূরণ করা।’
ষাটগম্বুজ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জামান বাচ্চু বলেন, বাগেরহাটের পর্যটন মোটেলের সাথে এই অঞ্চলের পর্যটন শিল্পের ভবিষ্যৎ জড়িত। এই ভবন নির্মানে যদি কোন জটিলতা থাকে, তাহলে সেসব জটিলতা নিরসন করে অতিদ্রুত কাজ শেষ করার দাবি জানাই।
বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে বাগেরহাট শহরের মাজার মোড়ে ৩৩ শতকের বেশি জমির উপরে সাত তলা মোটেল নির্মাণের উদ্যোগ নেয় পর্যটন করপোরেশন। নির্মাণাধীন এই ভবনে ৩০টি কক্ষ, ৫০ আসনের রেস্টুরেন্ট, অফিস রুম, অভ্যর্থনা কক্ষ, বারবিকিউ রুম ও গাড়ি পার্কিংয়ের সুবিধা থাকবে। পুরো ভবনের আয়তন ২ হাজার ৭৬০ বর্গ মিটার। এর সাথে বাগান করা হবে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সময়মতো কাজ শেষ না করায় পর্যটন করপোরেশন নির্মাণকাজে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান খাজা রাব্বি বিলকিসের কার্যাদেশ বাতিল করে। সেই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটিকে জরিমানাও করা হয়।
পর্যটন করপোরেশনের সিদ্ধান্তকে অন্যায় দাবি করে উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দায়ের করে খাজা রাব্বি বিলকিস। ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে উচ্চ আদালত এ মোটেলের কাজের উপর স্থগিতাদেশ জারি করে। পর্যটন করপোরেশন এই স্থগিতাদের বিরুদ্ধে এখন আদালতে আইনি লড়াই করছে।
বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের মহাব্যবস্থাপক (পিটিএস) ও প্রকল্প পরিচালক মো. জাকির হোসেন সিকদার বলেন, ‘ঠিকাদারের দায়িত্ব শুধু ভবন নির্মাণির কাজ ছিল। এর বাইরের কাজ, যেমন বাউন্ডারি ওয়াল, লিফট স্থাপন, বৈদ্যুতিক সাবস্টেশন নির্মাণসহ অন্যান্য কাজ চলমান রয়েছে। এসব কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে। নতুন নির্ধারিত সময় অনুযায়ী ২০২৩ সালের ৩০ জুনের মধ্যে মূল ভবনের কাজ শেষ হবে বলে আশা করছি। মূল ভবনের নির্মাণব্যয় ধরা হয়েছে ১২ কোটি ৭৭ লাখ ৬ হাজার টাকা। এ ছাড়া বাগেরহাটের পর্যটন শিল্পের বিকাশে সুন্দরবন সংলগ্ন শরণখোলা ও মোংলা উপজেলা এলাকা ঘিরে বেশ কিছু পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান তিনি।