দেশের পর্যটন শিল্পকে বিকশিত করতে নবমবারের মতো সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক পর্যটন মেলা এশিয়ান ট্যুরিজম ফেয়ার (এটিএফ) হতে যাচ্ছে চলতি সপ্তাহে।
রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেশন সিটি বসুন্ধরায় আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর তিন দিনের এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে।
রাজধানীর কারওয়ানবাজারে প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে রোববার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন এশিয়ান ট্যুরিজম ফেয়ারের চেয়ারম্যান মো. মাহিউদ্দিন হেলাল।
লিখিত বক্তব্যে মাহিউদ্দিন হেলাল বলেন, ‘নবম এশিয়ান ট্যুরিজম ফেয়ার ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে। তিন দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক মেলাটি ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে ১ অক্টোবর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে। মেলা চলবে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত।
‘বিগত বছরের ধারাবাহিকতায় পর্যটন বিচিত্রার আয়োজনে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সার্বিক দিক নির্দেশনায় বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন ও বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের সহযোগিতায় এই মেলা আয়োজন করা হচ্ছে।’
দেশের পর্যটন শিল্পকে জানান দেয়ার সময় এসেছে জানিয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী বলেন, ‘বিশ্ববাসী যখন দেখবেন আমাদের লেক, নদী, পাহাড়, সমুদ্র, চা বাগান, পদ্মা ব্রিজ, মেট্রো রেল, ঘুমধুম পর্যন্ত রেললাইন, কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। এই সবকিছু কিন্তু আমাদের পর্যটনকে বিকশিত করার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর পদক্ষেপ। এই পদক্ষেপের কারণেই একজন পর্যটক এসে বাংলাদেশের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবে।’
সবার ঐক্যবদ্ধ চেষ্টা দেশের পর্যটন শিল্পকে বিকশিত করতে পারবে বলে মত দেন মাহবুব। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশ, আমাদের বিমানবন্দর, আকর্ষণীয় জায়গা সবকিছুই একজন দেশি এবং বিদেশি পর্যটকের চিত্ত বিনোদনের জন্য আন্তর্জাতিক মানের কাছাকাছি। খুব একটা দূরত্ব নাই।’
পর্যটন শিল্পকে টেকসই শিল্প বলে আখ্যায়িত করে মাহবুব আলী বলেন, ‘২০৪১ সালে উন্নত দেশ হওয়ার যে লক্ষ্য রয়েছে, সে লক্ষ্য পূরনে পর্যটন শিল্প বড় ভূমিকা রাখবে।’
বেসামরিক বিমান ও পর্যটন সচিব মোকাম্মেল হোসেন বলেন, ‘সুন্দর সময়ে এই পর্যটন মেলা আয়োজন করা হয়েছে। পর্যটন খুব খারাপ সময় অতিবাহিত করেছে। অভ্যন্তরীণ ট্যুরিজম অনেকটা সাফল্য অর্জন করেছি। এই মেলার মাধ্যমে বাংলাদেশকে তুলে ধরার বিশাল সুযোগ তৈরি হয়েছে। আমরা চাই সবাই মিলে বাংলাদেশ যেন এগিয়ে যায়।’
কমিউনিটি বেইজড ট্যুরিজম বেশ আলোচিত হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আগামীতে বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে ট্যুরিজম সেক্টরে। আমরা নিয়মমাফিক উপায়েই এগিয়ে যাচ্ছি। অবকাঠামো সীমাবদ্ধতা আমরা কাটিয়ে উঠতে পেরেছি। ভবিষ্যতে ট্যুরিজম শিল্পে বাংলাদেশ আরও ভালো করবে।’
নবম এশিয়ান ট্যুরিজম ফেয়ারে আটটি দেশ অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছে। বাংলাদেশ, নেপাল, থাইল্যান্ড, ভারত, ভুটান, মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা ও লিথুনিয়ার প্রায় ১৩০টি পর্যটন সংস্থা এতে অংশ নেবে। এর মধ্যে ৫০টির বেশি বিদেশি প্রতিষ্ঠান।
মেলায় থাকবে আসন্ন পর্যটন মৌসুমে দেশ ও বিদেশে বেড়ানোর বিভিন্ন আকর্ষণীয় ভ্রমণ অফার, হোটেল, রিসোর্ট বা প্যাকেজ বুকিংসহ বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থা। মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট, ক্রুজলাইনার, এয়ারলাইন্স, ট্যুর অপারেটর ও থিমপার্কসহ বিনোদনের আরও অনেক প্রতিষ্ঠান।
এ ছাড়া মেলায় বৈচিত্র্যময় আয়োজনে থাকবে পর্যটনবিষয়ক সেমিনার, শিশুদের জন্য চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, বিজনেস টু বিজনেস মিটিং। মেলায় থাকবে শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এই মেলার মাধ্যমে পর্যটন শিল্পের একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্র দর্শনার্থীদের মাঝে তুলে ধরার প্রচেষ্টা থাকবে।
মেলায় এয়ারলাইন্স পার্টনার হিসেবে রয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, হসপিটালিটি পার্টনার হিসেবে রয়েছে ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকা, প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও, অ্য্যাডভেঞ্চার ডাইনিং পার্টনার- ফ্লাই ডাইনিং, ক্রুজ পার্টনার ঢাকা ডিনার ক্রুজ, এন্টারটেইনমেন্ট পার্টনার ফ্যান্টাসি কিংডম ও ট্রান্সপোর্ট পার্টনার কনভয় সার্ভিস।
মেলার প্রবেশ মূল্য ৩০ টাকা, প্রবেশ কুপনের বিপরীতে র্যাফেল ড্র বিজয়ীদের জন্য থাকবে এয়ারলাইন্স টিকিটসহ মালয়েশিয়ায় বেড়ানো এবং আকর্ষণীয় গিফট ভাউচার। এ ছাড়া প্রতিটি টিকিটেই থাকবে মেলার এন্টারটেইনমেন্ট পার্টনার ফ্যান্টাসি কিংডমে প্রবেশে ৫০ শতাংশ ডিসকাউন্ট।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যান মো. আলি কদর, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মো. জাবের, ঢাকায় নেপালি দূতাবাসের ডেপুটি চিফ অফ মিশন কুমার রায়, এশিয়ার ট্যুরিজম ফেয়ারের পরিচালক বোরহান উদ্দিন, ট্যুরিজম রিসোর্ট ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের (ট্রিয়ার) সভাপতি খবিরউদ্দিন আহম্মেদ।