শিশুদের ঘুম পাড়ানো নিয়ে ঝক্কির শেষ নেই মায়েদের। আধুনিক ব্যস্ত জীবনে বাবারা কিছুটা সহায়তার হাত বাড়ালেও মূল ধকলটি এখনও মায়েদেরই পোহাতে হয়।
অনেক শিশুই ঘুমের ঠিক আগে প্রতিদিন তারস্বরে চিৎকার করে দুর্বিষহ করে তোলে বাবা-মায়ের জীবন। শিশুদের কোন কৌশলে সহজে ঘুম পাড়ানো যায় তা নিয়ে রয়েছে বিস্তর গবেষণা, তবে এগুলোর কোনোটিই দস্যি শিশুদের চোখ ঢুলু ঢুলু করতে খুব একটা কাজে লাগেনি।
একদল বিজ্ঞানী এবার দাবি করেছেন, কেঁদে গলা ফাটানো শিশুকে মাত্র ১৩ মিনিটে ঘুমের মাঝে তলিয়ে দেয়ার অব্যর্থ কৌশল খুঁজে পাওয়া গেছে।
কৌশলটিও বেশ সহজ। কান্নারত শিশুকে বুকে নিয়ে মাত্র পাঁচ মিনিট হাঁটাহাঁটি করুন। এ সময়ের মধ্যে ধীরে ধীরে সে শান্ত হয়ে আসবে। এরপরের আট মিনিট ওকে বুকে জড়িয়ে রেখেই একটি চেয়ারে বসে থাকুন। ব্যস আপনার লক্ষ্য পূরণ হয়ে গেছে। বুকের মাঝে ঘুমিয়ে পড়া শিশুটিকে এবার আলতো করে শুইয়ে দিন বিছানায়।
বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী কারেন্ট জার্নালে ১৩ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত হয়েছে গবেষণাপত্রটি।
গবেষক দলের সদস্য জাপানের আরআইকেইএন সেন্টার ফর ব্রেইন সায়েন্সের ড. কুমি কুরোদা বলেন, ‘শিশুর ঘুমাতে যাওয়ার আগে নানান তালবাহানা ও কান্নাকাটিতে অনেক বাবা-মায়ের জীবন হয়ে পড়ে দুর্বিষহ। সন্তান পালনের ক্ষেত্রে এটা একটি বড় সমস্যা। বিশেষ করে অনভিজ্ঞ বাবা-মাকে আরও বেশি ঝামেলা পোহাতে হয়। বিরক্ত হয়ে অনেকে শিশুর সঙ্গে দুর্ব্যবহারও করেন।’
গবেষণায় শূন্য মাস থেকে সাত মাস বয়সী ২১টি শিশু ও তাদের মায়েদের বেছে নেয়া হয়েছিল। এই শিশুদের চোখে ঘুম আনার কয়েকটি কৌশল প্রয়োগ করে ফল পর্যালোচনা করা হয়েছে।
কৌশলগুলোর মধ্যে রয়েছে শিশুকে বুকে নিয়ে মায়েদের হাঁটাহাঁটি করা, শিশুকে শান্ত করতে চেয়ারে বসে থাকা, একটি খাটে শুইয়ে দেয়া অথবা কোনো দোলনা খাটে শুইয়ে রাখা।
গবেষণায় দেখা গেছে, শিশুদের বুকে নিয়ে মা হাঁটাহাঁটি করলে তারা মোটামুটি দ্রুত শান্ত হয়ে যায়। এ সময় ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে তাদের হৃদস্পন্দন ধীর হয়ে আসে।
দোলনায় রাখলেও শিশুদের মধ্যে শান্ত হওয়ার প্রবণতা দেখা গেছে। তবে মা বসে থেকে শিশুকে বুকে আগলে রাখলে বা খাটে শুইয়ে রাখলে এমনটি ঘটে না।
গবেষকরা বলছেন, প্রথাগতভাবে মনে করা হয় মায়ের বুকের মাঝে থাকলেই শিশুর অস্থিরতা কমে আসে। তবে গবেষণায় তার প্রমাণ মেলেনি। কোথাও বসে বা শুয়ে থেকে শিশুকে বুকে ধরে রাখার খুব একটি উপযোগিতা লক্ষ করা যায়নি। তবে হাঁটাহাঁটি করলে এটি বেশ কার্যকর।
গবেষকেরা বলছেন, বাচ্চাকে বুকে নিয়ে পাঁচ মিনিট হাঁটাহাঁটির মধ্যেও শিশু ঘুমিয়ে যেতে পারে, তবে এরপর তাকে সরাসরি বিছানায় শুইয়ে দেয়া ঠিক নয়। কারণ দেখা গেছে, সরাসরি খাটে শুইয়ে দেয়ার ২০ সেকেন্ডের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ শিশু আবার চোখ মেলে তাকিয়েছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, কোনো শিশু চোখ বন্ধ করার পর অন্তত আট মিনিট বা তার কিছু বেশি সময় ঘুমিয়ে থাকলে খাটে শোয়ানোর পরেও তার জেগে ওঠার সম্ভাবনা কম। এ জন্য শিশুকে নিয়ে পাঁচ মিনিট হাঁটাহাঁটির পর আরও আট মিনিট বুকে রেখেই মায়েদের কোনো চেয়ারে বসে থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
এই কৌশল মোটামুটি অব্যর্থ বলে দাবি করছেন গবেষকেরা। ড. কুরোদা বলেন, ‘আমি নিজে চার সন্তানের মা। এরপরেও আমি গবেষণার ফল দেখে চমকে গেছি। এতদিন ভাবতাম বিছানায় শুইয়ে দেয়ার পরপরই সন্তানের চোখ মেলে তাকানোর কারণ হয়ত শোয়ানোর সময় আমি কোনো কিছু ভুল করেছি। তবে এখন দেখছি, এর কারণ একদম অন্য।’