অফিস নিয়ে আফসোস নেই এমন মানুষ খুব কমই আছে। কিছুদিন কাজ করার পর বেশির ভাগ চাকরিই হয়ে ওঠে ‘বিরক্তিকর’। সব ছেড়েছুড়ে দূরে কোথাও পাড়ি জমাতে চান অনেকে।
হতে পারে কাজটি একদম একঘেয়ে, হতে পারে বস খুব একটা চলনসই নন, আবার বেশি চাপও আপনাকে করে ফেলতে পারে ক্লান্ত। নিয়ম করে প্রতিদিন অফিসে ছোটাও ভালো লাগে না অনেকের।
কেউ কেউ এমন চাকরিতে আটকে আছেন, যেটি তারা হয়তো কখনই চাননি। অনেকের ক্ষেত্রে স্বপ্নের চাকরিও একসময়ে পরিণত হতে পারে দুঃস্বপ্নে।
তবে একটু চেষ্টা করলেই কিন্তু সাদামাটা চাকরিজীবনকেও করে তুলতে পারেন ‘উপভোগ্য’। সিস্টেমের অংশ না হয়েও নিজের কাজটিকে ভালোবাসতে পারেন বা ঘৃণার মাত্রা কমাতে পারেন।
মন খানিকটা স্থির করে দেখুন তো নিচের টিপসগুলো কাজে লাগিয়ে আপনার কর্মপরিবেশকে কিছুটা স্বস্তিদায়ক করে তুলতে পারেন কি না-
সব সুযোগ কাজে লাগান
আমাদের চারপাশে বিনা মূল্যে পাওয়ার মতো অনেক কিছুই আছে। সাধারণত এসব আপনার জীবনে তেমন গুরুত্ব রাখে না। তারপরও অনেক সময় এগুলো থেকে খুঁজে নিতে পারেন আনন্দ, সুখ।
আপনার স্বাস্থ্যবিমা থাকলে নিয়মিত চেকআপের জন্য চিকিত্সক এবং ডেন্টিস্টের কাছে যান। মানবসম্পদ বিভাগকে বলুন আপনাদের মোবাইল, ইন্টারনেট এবং পরিবহন ফি কভার করতে। বালিশের নিচে রাখা কুপনগুলো খুঁজুন, ডিসকাউন্টের সুবিধা নিন। ফ্রিতে পিৎজা, বার্গার খান, কফি পান করুন।
সুখ সব সময় আপনাকে ধরা নাও দিতে পারে, তবে আপনাকে সুখের সন্ধান করতে হবে।
আপনি যে কাজ করেন, সে রকম কোনো চরিত্রের টিভি শো দেখুন
তাড়াহুড়োর এই জীবনে আমাদের কোনো কিছু নিয়ে কল্পনা করার বাড়তি সময় কই? টেলিভিশনের বিভিন্ন চ্যানেল ঘুরেও আমরা কোথাও থিতু হতে পারি না।
তবে নিজের মতো চরিত্র রয়েছে এমন টিভি শো আপনাকে আনন্দ দিতে পারে। এটি আপনাকে জানাবে, নিজের জীবনে কী করতে হবে, কী করতে হবে না। আপনাকে শেখাবে, অনেক বিষয় আরও ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
স্রেফ আপনার জন্য সম্ভবত কিছু শো আছে: ম্যাড ম্যান ফর অ্যাডভারটাইজার, দ্য হোয়াইট লোটাস ফর হোটেল স্টাফ, দ্য বিয়ার ফর কুকস।
বিরতি নিন
বলা হয়ে থাকে, দূরত্ব হৃদয়কে অনুরাগী করে তোলে। বিরক্তিকর শোনালেও কিছুক্ষণের জন্য কাজ থেকে বিরতি নিতে পারেন। এতে আপনি বুঝতে পারবেন কাজটিকে ঠিক কতটা পছন্দ করেন।
ছুটি নিন, চমৎকার একটা লম্বা বিরতি। নিজেকে সময় দিন। সুযোগ পেলেই অবকাশ কাটান। এতে কাজের ক্লান্তি কিছুটা হলেও কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।
বিরক্তিকর বিষয়গুলো যতটা সম্ভব দূর করার চেষ্টা করুন
কখনও কখনও মনে হতে পারে, চাকরি সম্পর্কিত প্রতিটি বিষয়কেই আপনি ঘৃণা করছেন। তবে বিরতি নিয়ে একটু সুস্থিরভাবে ভাবলে বুঝতে পারবেন এমন কিছু জিনিস রয়েছে, যা আপনি চাইলেই দূর করতে পারবেন না।
আপনাকে বিরক্ত করছে এমন বিষয়গুলোর কারণ এবং এর পরিবর্তে কী করতে চান তা লিখুন। তারপর সেই নোট বসের সঙ্গে শেয়ার করার সাহস অর্জন করুন। খোলামেলা আলোচনায় সমস্যার সহজ সমাধান মিলতে পারে। তবে ভুলে যাওয়া চলবে না যে আপনার বস কোনো থেরাপিস্ট নন। তাই পেশাদার এবং যৌক্তিক আচরণ করুন।
অনেক সময় বসরা জানেনই না (যদিও তাদের জানা উচিত), কর্মক্ষেত্রের পরিবেশে কেমন পরিবর্তন আনা উচিত। যদি তাদের (বস) এমন কোনো চিন্তা না থাকে, তবে ওই নোট সাহায্য করতে পারে। কারণ বিরক্তের কারণগুলো অন্তত তাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখাতে পেরেছেন আপনি।
দুঃখের সঙ্গী খুঁজুন
আপনি সম্ভবত একমাত্র ব্যক্তি নন যিনি ‘চ্যালেঞ্জ’ ঘৃণা করেন। সহকর্মীদের সঙ্গে ‘বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক’ আপনাকে সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহায়তা করতে পারে।
কর্মক্ষেত্রে বন্ধু তৈরি করার বিষয়টি সব সময় ইতিবাচক। এটা কর্মক্ষেত্রের প্রতি আপনার আকর্ষণ বাড়াতে দারুণ ভূমিকা রাখতে পারে।
চাকরিটিকে আপনি ঘৃণা করেন বা কর্মক্ষেত্রে যেতে আপনি বাধ্য- এটা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলুন। বরং ভাবুন, সেখানে (অফিস) গেলে আপনি বন্ধুদের দেখাও পাবেন।
লিংকডইন-এ যান
এটা সত্যি, সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপ করপোরেট জীবনের সব খারাপ দিক তুলে ধরতে পারে৷ তবে এর পাশাপাশি সফল মানুষের গল্পও ঘুরপাক খায় এসব প্ল্যাটফর্মে।
সফলতার এসব গল্প আপনার করপোরেট জীবনে কিছুটা হলেও স্বস্তি দিতে পারে। এমনটা না ঘটলেও সমস্যা নেই। তবে আপনি বুঝতে পারবেন, চাকরির জন্য মানুষ কতটা হন্যে হয়ে আছে। আপনার চাকরিজীবন এতে কিছুটা প্রফুল্ল হতে পারে।
মনে রাখবেন, চাকরির জন্য আপনি টাকা পাচ্ছেন
খেয়াল করে দেখুন যেদিন বেতন হয়, সেদিন বসের প্রতি জমে থাকা অভিযোগগুলো কেমন যেন হালকা হয়ে যায়। মনে হতে থাকে, কাজের এই চাপ যুক্তিসংগত, আপনার মানসিক স্বাস্থ্য ঠিকঠাকই আছে।
মনে রাখবেন, নিয়মিত বেতন হয় এমন অফিসে এই অনুভূতি প্রতিটি মাস শেষে আবার আসতে বাধ্য।