প্রিয়জনের ঘনিষ্ঠ আলিঙ্গন বা কঠিন একটি দিন শেষে কারও কাছ থেকে অপ্রত্যাশিত ভালোবাসা... যা-ই হোক না কেন, এমন অভাবিত পরিস্থিতিতে চোখের কোণে জল জমেনি এমন মানুষ পাওয়া কঠিন। এটি দুঃখের কান্না নয়, এই সজল চোখ আনন্দের।
এতদিন ভাবা হচ্ছিল, প্রাণিজগতে কেবল মানুষেরই আছে উচ্ছ্বাসেও অশ্রু বিসর্জনের ক্ষমতা। তবে সাম্প্রতিক এক গবেষণা বলছে, কুকুরও অতি আবেগে ফেলে চোখের জল!
জাপানের একদল বিজ্ঞানীর দাবি, লম্বা বিরতি শেষে মনিবের সান্নিধ্য আনন্দের বান ডাকে কুকুরের মনে। আর সেই আনন্দ কখনও কখনও দুচোখের অশ্রু হয়ে ঝরে।
মানুষের মতো চোখ পরিষ্কার রাখতে কুকুরেরও এক ধরনের গ্রন্থি আছে। তবে সাধারণ সেই কান্নার সঙ্গে আবেগের সম্পর্ক নেই।
সায়েন্স জার্নালের কারেন্ট বায়োলজিতে সোমবার প্রকাশিত গবেষণাটি বলছে, মানুষ ছাড়াও আরও কিছু প্রাণীর মধ্যে অশ্রু সৃষ্টি করে আবেগ।
গবেষণার অন্যতম সহকারী টেকফুমি কিকুসুই বলেন, ‘আগে কখনই শুনিনি, মনিবের সঙ্গে দেখা হওয়ার আনন্দে কুকুর কাঁদে। গবেষণাটি নিয়ে তাই ভীষণ উত্তেজিত ছিলাম।’
শিব ইনু প্রজাতির একটি কুকুর পোষেন জাপানের নাগরিক হিরোফুমি ইতো, নাম মেম। তিনি বলেন, ‘সপ্তাহব্যাপী ছুটির পর বাড়িতে ফিরে দেখতাম মেমের চোখ ভেজা। এখন জেনে খুব ভালো লাগছে, ওই সজল চোখ আসলে আমাকে দেখে ওর খুশির প্রকাশ।’
ছয় বছর আগে বিষয়টি প্রথম খেয়াল করেন অধ্যাপক টেকফুমি কিকুসুই। তখন তার পুডল প্রজাতির একটি কুকুর ছিল।
‘এটি আমাকে ধারণা দিয়েছিল, অক্সিটোসিন অশ্রু বাড়াতে পারে। এটি এমন একটি হরমোন, যা আপনি কারও প্রতি তীব্র আকর্ষণের সময় অনুভব করেন। এই হরমোন প্রেমের ওষুধ নামেও পরিচিত।’
বিষয়টি নিশ্চিত হতে কিকুসুই এবং তার দলের সদস্যরা ১৮টি কুকুরের ওপর পরীক্ষা চালান। শুরুতে তারা মালিকের সঙ্গে থাকার সময় কুকুরের কান্নার মাত্রা পরিমাপ করেন। এ পরীক্ষায় চোখের ভেতর এক মিনিট একটি কাগজের টুকরো রাখা হয়। কাগজে বেশি আর্দ্রতা মানে বেশি কান্না।
দ্বিতীয় ধাপেও কুকুরের কান্না পরিমাপ করা হয়। তবে এবার মালিকের সঙ্গে বিচ্ছেদের ৫-৬ ঘণ্টা পর ফের মিলিত হওয়ার সময়। মালিকের দেখা পাওয়ার প্রথম ৫ মিনিটে কুকুরের চোখ থেকে যে পরিমাণ অশ্রু ঝরে, তা আগের অশ্রুর সঙ্গে তুলনা করেন কিকুসুই ও তার দল।
গবেষকরা দেখেছেন, মালিকের অর্থাৎ প্রিয় মানুষের সঙ্গে মিলিত হওয়ার পর কুকুরের প্রায় ১০ শতাংশ বেশি অশ্রু তৈরি করে।
এবার আরও ২০টি কুকুরের ওপর চলে পরীক্ষা। এ ধাপে মালিক নয়, এমন ব্যক্তির সঙ্গে মিলিত হওয়ার পর কুকুরের অশ্রু পরিমাপ করেন গবেষকরা। দেখা যায়, এবার অশ্রুর পরিমাণ বাড়েনি।
অশ্রুর সঙ্গে অক্সিটোসিনের কোনো সম্পর্ক আছে কি না জানতে দলটি কুকুরের চোখে হরমোনযুক্ত একটি দ্রবণ রেখেছিল। দেখা গেছে, এ পর্যায়ে কান্নার পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।
অতীতের গবেষণায় প্রমাণ হয়েছে, মানুষের আবেগকে স্বীকৃতি দেয় কুকুর। মানুষের চাক্ষুষ এবং শ্রুতিগত সংকেত ব্যবহার করে কুকুর বিভিন্ন পরিস্থিতিতে কী প্রতিক্রিয়া দেখাবে, তা ঠিক করতে পারে।
কিকুসুই বলেন, ‘বিজ্ঞানীরা এখনও কুকুরের কান্নার সামাজিক কার্যকারিতা নির্ধারণ করতে পারেননি। কোনো কুকুর অন্য কুকুরের সঙ্গে পুনরায় মিলিত হওয়ার পর কান্নাকাটি করে কি না, তাও জানা যায়নি। এরপরও গবেষণাটি প্রমাণ করে, কুকুরের আবেগ মানুষের অনেকটা কাছাকাছি।’