বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কিছু মানুষ কেন বদলায়, কেউ থাকে আগের মতোই

  •    
  • ২১ আগস্ট, ২০২২ ১৯:৪৩

বেশিরভাগ মানুষ জীবন কাটিয়ে দেন নিজের একমুখী বৈশিষ্ট্য নিয়ে। তাদের সেই সহজাত বৈশিষ্ট্যকে অনেক সময় আমরা চিনতে ভুল করি বলেই পরে ভাবি, ‘মানুষটি বদলে গেছে’।

মানুষের বদলে যাওয়া নিয়ে আক্ষেপ অহরহ আমরা শুনতে পাই। মাসের পর মাস যেভাবে কাউকে দেখছেন, হয়ত হঠাৎ করেই তিনি হয়ে যেতে পারেন ‘অচেনা’। আচরণ থেকে শুরু করে বদলে যায় অনেক কিছুই।

মানুষের এই হঠাৎ ‘বদল’ বিস্ময়কর হলেও বিজ্ঞান বলছে, বদলে যাওয়াটা কোনো সহজ কিছু নয়। এখনকার ‘অচেনা’ মানুষটি হয়ত তার নিজ স্বভাবেই আছেন, তাকে চেনার ভুলটি করেছিলেন আপনিই।

তবে কিছু ক্ষেত্রে মানুষ সত্যিই বদলায়। আর সেই বদলানোর কাজটি সফল করতে দরকার ব্যক্তির সচেতন চেষ্টা এবং বেশ কঠোর পরিশ্রম। এই কাজটি খুব কম মানুষই পারেন, ফলে বেশিরভাগ মানুষ জীবন কাটিয়ে দেন একমুখী বৈশিষ্ট্য নিয়ে। তাদের সেই সহজাত বৈশিষ্ট্যকে অনেক সময় আমরা চিনতে ভুল করি বলেই পরে ভাবি, ‘মানুষটি বদলে গেছে’।

মানুষ কি আসলেই বদলে যেতে পারে?

জীবনে পরিবর্তন ঘটানো সহজ বিষয় নয়। সাধারণ আচরণগুলোকে অনুসরণ করা যে কোনো মানুষের জন্য অনেক সহজ। তবে এর মানে এই নয়, পরিবর্তন একেবারেই সম্ভব নয়। মানুষের স্বভাবের ওপর বেশ কিছু বিষয়ের প্রভাব আছে, এগুলো হলো- জেনেটিকস, ব্যক্তিত্ব ও প্রেরণা।এমন অসংখ্য গল্প আছে যেখানে মাদকাশক্তি দূর করে কেউ স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছেন, চিড় ধরা সম্পর্ককে অত্যন্ত সুখী সম্পর্কে পরিণত করেছেন কিংবা স্বার্থপর কেউ নিজের জীবনকে সম্পূর্ণভাবে অন্যের মঙ্গলে উৎসর্গ করেছেন।

অন্তত ২০০টি গবেষণায় দেখা গেছে, সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে মানুষ তার ব্যক্তিত্ব পরিবর্তনে সক্ষম হন। সুতরাং প্রশ্নটি আসলেই এটা নয় যে, মানুষ বদলাতে পারে কি না। আসল প্রশ্ন হলো, কেন কেউ বদলান, আর বাকিরা বদলান না।

প্রত্যেকেরই এমন ক্ষেত্র রয়েছে যেখানে তারা উন্নতি করতে পারেন। তাই জীবনে পরিবর্তন আনার প্রয়োজনে হোক বা নিজের জন্য অন্য কারো উপর নির্ভর করা হোক- পরিবর্তন আনা সম্ভব।জৈবিকভাবে মানুষ কি বদলাতে পারে?

মনোবিজ্ঞানবিষয়ক ম্যাগাজিন সাইকোলজি টুডের মতে, মানুষ যা করে তার বেশিরভাগের পেছনে জিনগত বৈশিষ্ট্য দায়ী। আমরা যেভাবে চিন্তা করি তার ওপর পরিবেশের প্রভাব রয়েছে, তবে এমন জৈবিক কারণও আছে যা প্রায় ৭০ শতাংশ পার্থক্যের জন্য দায়ী।

অনেক মনোবিজ্ঞানী মনে করেন, পরিবেশের প্রভাবের চেয়ে জিনগত কারণ বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আরেকটি তত্ত্ব অনুযায়ী, যারা জৈবিক প্রাধান্য নিয়ে জন্মগ্রহণ করেন তারা সেসব সামাজিক ধারা অনুসরণ করেন, যেগুলো তাদের জিনে গভীরভাবে প্রোথিত। এ জন্যই প্রবাদ রয়েছে, ‘একটি চিতা তার চামড়ার কালো ফোটা কখনও বদলাতে পারে না।’ এর অর্থ হল পরিবেশ কাউকে তার জৈবিক বৈশিষ্ট্যের বিপরীত কিছু ঘটাতে বাধ্য করতে পারে না।

সাইকোলজি টুডের নিবন্ধটিতে বলা হয়েছে যে, ‘জৈবিকভাবে প্রভাবিত’ ব্যক্তিকে ‘জৈবিকভাবে নির্ধারিত’-এর সঙ্গে গুলিয়ে ফেলা উচিত নয়। এর মানে হলো, সমাজে নেতিবাচক আচরণকে অপরিবর্তনীয় হিসেবে গ্রহণ করা উচিত নয়।

কিছু মানুষের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্যের জন্য প্রোগ্রাম করা রয়েছে। তবু আশা করা যায়, সমাজ ও পরিবেশ নেতিবাচক আচরণকে পুনঃপ্রোগ্রাম করতে পারে এবং খারাপ অভ্যাস দূর করতে পারে।

ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্যের বিশ্লেষণ

গবেষকরা মানুষের ব্যক্তিত্বের পার্থক্যগুলোকে পাঁচটি প্রধান বৈশিষ্ট্যে ভাগ করেছেন। এগুলোকে প্রায়ই বড় পাঁচটি ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এগুলোর রয়েছে অভিজ্ঞতার জন্য উন্মুক্ততা, বহির্মুখীনতা, স্নায়বিকতা, বিবেক ও সম্মতি।

লোকজন কীভাবে চিন্তা করে এবং আচরণ করে তার ব্যাখ্যা এসব বৈশিষ্ট্য থেকে পাওয়া যায়। সাইকোলজি টুডেতে প্রকাশিত নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, গবেষকরা হেক্সাকো নামের ষষ্ঠ ধাপের নতুন একটি মডেল তৈরি করেছেন। এটি মূল পাঁচটি বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে সততা ও নম্রতার বৈশিষ্ট্যকে যোগ করে।

পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডারের ভূমিকা

পরিবর্তনটি যদি একটি বড় পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডারের সঙ্গে সম্পর্কিত হয়, যেমন এপিডি (অসামাজিক) বা এনপিডি (আত্মপ্রেম), সেক্ষেত্রে পরিবর্তন শুধু পেশাদার কারও তত্ত্বাবধানে সম্ভব। কগনিটিভ বিহেভিওরাল থেরাপিতে (সিবিটি) নেতিবাচক আচরণের পুনঃপ্রোগ্রামিং জড়িত। তবে শক্তিশালী চিকিৎসা পদ্ধতি ও ওষুধ থাকার পরও এপিডি ও এনপিডির মতো পরিস্থিতি সামাল দেয়া চ্যালেঞ্জিং হতে পারে।

এ পদ্ধতিগুলো সফল হলে আপনার ব্যক্তিত্বে পরিবর্তন আসবে। সেক্ষেত্রে বন্ধু এবং পরিবারের সদস্যরা অবাক হয়ে ভাবতে পারেন, মানুষ সত্যিই কীভাবে বদলে যায়।

বড় ধরনের পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডারকে বাদ দিয়ে, কীভাবে ও কী কারণে মানুষ পরিবর্তন হয় তার গবেষণা আশাব্যঞ্জক। ১৬ সপ্তাহের মধ্যে ‘একটি নতুন ব্যক্তিত্ব তৈরি’ করা সম্ভব কিনা ও সেটি কতটুকু তা দেখার একটি পরীক্ষা চালিয়েছিল আমেরিকার ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়।

এর ফল মোটামুটি মানের হলেও, একটি জিনিস লক্ষ্য করা গেছে। দেখা গেছে, তাদের পরিবর্তনের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি যারা তাদের ‘বাস্তব জীবনে’ বা ব্যক্তিত্বের কয়েকটি দিকে সত্যিকারের পরিবর্তন করতে চেয়েছিল।

মানসিক স্বাস্থ্য ডিজঅর্ডার ও ব্যক্তিত্বে পরিবর্তন

বর্ডারলাইন পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার এমন এক ব্যধি যেটাতে আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব খুব দ্রুত পরিবর্তন হয়। সাইকোলজি টুডের মতে, বর্ডারলাইন পার্সোনালিটি একটি দীর্ঘস্থায়ী মানসিক অসুস্থতা, যার মধ্যে গুরুতর মেজাজ ও মানসিক অস্থিরতা অন্তর্গত।

মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা এই অসুস্থতাটিকে সাইকোসিস ও নিউরোসিসের সীমানায় বলে বর্ণনা করেন। উপসর্গগুলোতে হাত-পা কাটা ও আত্মহত্যার প্রচেষ্টার মতো নিজেকে আঘাত করার অভ্যাস অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।

ব্যক্তিত্বের পরিবর্তনের তীব্রতার কারণে, মনে হতে পারে, বর্ডারলাইন পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত ব্যক্তিদের কোনো আশা নেই। তবে ব্যধিটি প্রায়ই থেরাপি ও ওষুধ দিয়ে সফলভাবে চিকিত্সা করা যেতে পারে।

মানুষ কীভাবে বদলাতে পারে?

বর্ডারলাইন পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডারের সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে মানুষ সত্যিই বদলে যায়। বর্ডারলাইন ব্যক্তিত্ব গুরুতর মানসিক অস্থিরতা সৃষ্টি করে, যা বন্ধু এবং পরিবারের সদস্যদের মোকাবিলা করা কঠিন হতে পারে।

খাওয়ার ডিজঅর্ডার হলো আরেকটি সমস্যা যা ব্যক্তিত্বে পরিবর্তন ঘটায়। সাইকোলজি টুডে খাওয়ার ডিজঅর্ডারকে মনস্তাত্ত্বিক অসুস্থতা হিসাবে বর্ণনা করেছে। যেটি অস্বাস্থ্যকর, বিশৃঙ্খল খাদ্যাভ্যাস দ্বারা চিহ্নিত করা হয়।

খাওয়ার ডিজঅর্ডার মানসিক অস্থিরতা নিয়ে আসে, কারণ এটি স্বাভাবিক পরিপাক চক্রকে বিপর্যস্ত করে। খাওয়ার ডিজঅর্ডারের চিকিত্সা করা চ্যালেঞ্জিং, তবে অনেক লোক থেরাপি ও সহায়ক গ্রুপে যোগ দেয়ার পর সফল হন।

পরিবর্তন করা কি নিরাপদ?

বাইপোলার ডিজঅর্ডার হলো এক ধরনের মানসিক ব্যাধি, যেখানে কারও ব্যক্তিত্ব দ্রুত পরিবর্তিত হতে পারে। সাইকোলজি টুডের মতে, কিছু লোক এখনও বাইপোলার ডিজঅর্ডারকে ম্যানিক ডিপ্রেশন হিসেবে উল্লেখ করেন।

বাইপোলার ডিজঅর্ডারের লক্ষণগুলোর মধ্যে হুটহাট মেজাজের পরিবর্তন রয়েছে, যা গুরুতর মানসিক অস্থিরতা ও হতাশার মধ্যে পরিবর্তিত হতে থাকে। ম্যানিয়ায় আক্রান্তের সময় বাইপোলার ডিজঅর্ডারে ভোগা ব্যক্তি মানসিক অস্থিরতা অনুভব করেন। এর মধ্যে রয়েছে বিরক্তি, রাগ, বিষণ্নতা এবং কখনও কখনও অতিউচ্ছ্বাসের মিশ্রণ।

বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে থেরাপিস্টরা বাইপোলার ডিজঅর্ডার নির্ণয় করেন; বাইপোলার ডিজঅর্ডারে ভোগা ব্যক্তিদের জন্য থেরাপি এবং/অথবা ওষুধ দেয়া হয়।

বাইপোলার ডিজঅর্ডারকে বাইপোলার ওয়ান বা বাইপোলার টু হিসাবে ভাগ করা যেতে পারে। সাইকোলজি টুডে বাইপোলার ওয়ানে আক্রান্ত ব্যক্তিদের এমনভাবে ভাগ করেছে, যাদের অন্তত একটি ম্যানিক এপিসোড রয়েছে, যার কারণে হাসপাতালে নেয়ার দরকার হয়।

বাইপোলার ওয়ানে একটি বড় বিষণ্নতামূলক পর্ব থাকে, কিন্তু এটি স্থায়ী হয় না। যাদের বাইপোলার টু আছে তাদের হাইপোম্যানিয়ার সঙ্গে অন্তত দুই সপ্তাহ স্থায়ী বিষণ্নতার পর্ব থাকে। হাইপোম্যানিয়া হলো একটি হালকা বা মাঝারি ধরনের ম্যানিয়া, যার জন্য সাধারণত হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হয় না।

আমরা কত দ্রুত বদলাতে পারি?

মনঃস্থিতি স্থায়ী হওয়ার সময় ও কত ঘন ঘন তা পরবর্তিত হয়- সেটা ব্যক্তিভেদে বদলায়। মেজাজের ওঠানামা ঘন ঘন ও বছরে অন্তত চারবার হলে একে র‍্যাপিড সাইক্লিং বলা হয়। চরম মানসিক অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তার কারণে র‍্যাপিড সাইকেল সামলানো অত্যন্ত কঠিন।

মনোবৈজ্ঞানিক পরীক্ষার মাধ্যমে বাইপোলার ডিজঅর্ডার নির্ভুলভাবে নির্ণয় করা যায়। থেরাপি ও ওষুধ দিয়ে এর চিকিৎসাও সম্ভব। বাইপোলার ডিজঅর্ডারে আক্রান্তদের সঙ্গে তাদের পরিবারকেও এ রোগের চ্যালেঞ্জ নিতে হয়।

দীর্ঘমেয়াদি এ রোগীকে সামলানো কষ্টসাধ্য এবং মনে হতে পারে- আক্রান্ত ব্যক্তি আর বদলাবেন না। তবে, সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করলে বাইপোলার ডিজঅর্ডারের রোগীও বদলাতে পারেন।

নিজেকে বদলাতে চাইতে হবে

শুধু কথায় নয়, পরিবর্তনের সচেতন আকাঙ্ক্ষা থাকা জরুরি। মানুষ লেগে থাকলে সত্যিই পরিবর্তন ঘটানো সম্ভব। তবে অনেক সময় ধরে বদলাতে চাওয়ার পরেও একজনের আচরণ পরিবর্তিত না হলে তার বদলানোর সম্ভাবনা কম।

চিকিৎসকের সাহায্য নেয়ার পদক্ষেপ থেকে প্রমাণিত হয়, কারও কারও বদলে যাওয়ার ইচ্ছা সত্যিই আছে।

একজন পেশাদার থেরাপিস্ট বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে সাহায্য করেন। তার উদ্দেশ্য থাকে রোগীর চিন্তাভাবনার ধরনে পরিবর্তন ঘটানো। পাশাপাশি রোগীকে মানসিক চাপ মোকাবিলা করার উপায় শিখতে সহায়তা করা।

এ বিভাগের আরো খবর