২০০৭ সাল। জন্মভূমির বাইরে প্রথম দেশ হিসেবে থাইল্যান্ডে যান কাজী আসমা আজমেরী। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে গিয়েছিলেন একাই। বিশ্বভ্রমণের ইচ্ছাটা তখনও চেপে বসেনি মাথায়।
দুই বছর বিরতি দিয়ে ২০০৯ সালে আবার দেশের বাইরে যান আজমেরী। সে বছর তার গন্তব্য ছিল হিমালয়কন্যা নেপাল। সেই থেকে বিশ্বভ্রমণের নেশা পেয়ে বসে তাকে। চলতি বছরের মে পর্যন্ত ১৩০টি দেশ ঘুরেছেন তিনি।
এক দেশ থেকে আরেক দেশে যাত্রার এ গল্প নিউজবাংলাকে শুনিয়েছেন ৩৪ বছর বয়সী এ পর্যটক। এক যুগ আগে ফিরে গিয়ে তিনি বলেন, “আমি যখন নেপাল যাই, তার কিছুদিন আগে বন্ধুর মা আমাকে টিটকারি করেছিল। আমার বন্ধু ২৬টি দেশ ভ্রমণ করেছিল। আমি এক্সাইটেড হয়ে বলেছিলাম, ‘আমি বিশ্ব ভ্রমণ করতে চাই।’”
সে সময়ের স্মৃতিচারণ করে আসমা আরও বলেন, “তখন আমার বন্ধুর মা বলেছিল, ‘তুমি তো মেয়ে। তুমি ভ্রমণ করতে পারবে না।’ তখন আমার কথা ছিল, ‘কেন? মেয়েদের টিকিটের দাম কি বেশি ছেলেদের থেকে যে, আমি পারব না?”
ভ্রমণপিপাসু আসমার বেড়ে ওঠা খুলনায়। স্থায়ী বসবাসও বিভাগীয় শহরটিতে।
চলতি বছরের মে মাসে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের দেশ সেন্ট লুসিয়া ভ্রমণ করেন আসমা। দুই মাস বিরতি নিয়ে চলতি মাসে আবার বিশ্বভ্রমণে বেরিয়ে পড়বেন তিনি। এবার শুরুটা করবেন আফ্রিকার দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলের ভারত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্র মরিশাস দিয়ে।
এই যে একের পর এক দেশ ঘুরে বেড়াচ্ছেন, তাতে খরচ হয় অনেক টাকা। এর জোগান কীভাবে হয়, তা জানতে চাওয়া হয় আসমার কাছে।
জবাবে আবার স্মৃতি রোমন্থন করে এ পর্যটক জানান, প্রথম দেশ ভ্রমণের সময় মা তাকে সোনার গয়না বেচে টাকা দিয়েছিলেন। এখন চাকরির বেতনের টাকা জমিয়েই ছুটে চলেন এপাড়-ওপাড়।
প্রতি দুই বছরে ছয় মাস ভ্রমণ করেন আসমা। বাকি সময়টাতে সে ভ্রমণের টাকা জোগাতে করেন চাকরি।
তিনি বলেন, ‘আমি নিউজল্যান্ডে রেডক্রিসেন্টে চাকরি করতাম। এখন অস্ট্রেলিয়ান একটা কোম্পানিতে আছি। ওখানে এইচআর ও ফাইন্যান্সের দেখাশোনা করছি। অনলাইনে কাজ করছি মে মাস থেকে।
‘এটা একটা অস্ট্রেলিয়ান ইন্টারনাশন্যাল কোম্পানি। সোর্স অফ ইনকামটা হলো প্রত্যেক দুই বছরে দেড় বছর চাকরি করি আর ছয় মাসের জন্য আমি বিশ্বভ্রমণ শুরু করি। এইভাবেই আমি করে আসছি আজ পর্যন্ত।’
আগামী দুই বছরে বিশ্বের আরও ৬৩ দেশ ভ্রমণের ইচ্ছা আসমার। তিনি বলেন, ‘আমার ইচ্ছা আছে বিশ্বের ১৯৩টি দেশ ঘুরে দেখার। সেটা পূরণ করতে আরও ৬৩টি দেশ বাকি। আগামী দুই বছরে সেসব দেশে যাওয়ার ইচ্ছা।’
ভ্রমণের পাশাপাশি বাংলাদেশের পাসপোর্টকে বিশ্ব পরিসরে পরিচিত করাচ্ছেন বলেও জানান আসমা। এরই মধ্যে তিনি আখ্যা পেয়েছেন ‘গ্রিন পাসপোর্ট গার্ল’ হিসেবে।
‘বাংলাদেশি মানুষ যে বিশ্ব ভ্রমণ করতে পারে, আমরা যে বাংলাদেশি পাসপোর্ট পরিবর্তন না করেও কিছু করতে পারি, এটা আমি দেখাতে চেয়েছি’, বলেন আসমা।