তীব্র দাবদাহে পুড়ছে দিনাজপুরসহ পুরো উত্তরাঞ্চল। প্রায় এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে এই অঞ্চলে বৃষ্টির দেখা নেই। ভ্যাপসা গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন। একটু স্বস্তির আশায় বৃষ্টির দেবতা হিসেবে পরিচিত ইন্দ্র দেবের প্রতীকী বিয়ের আয়োজন করেছে দিনাজপুরের সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।
সদর উপজেলার শেখপুরা ইউনিয়নের নুলাইবাড়ী কর্মকারপাড়ায় সোমবার রাত ১০টার দিকে শুরু হয় বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা, যা চলে রাত ২টা পর্যন্ত।
নুলাইবাড়ী গ্রামের বাসিন্দা ও দিঘন এসসি উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষক রতন কুমার কর্মকার এই বিয়ের আয়োজন করেন।
বিয়েতে বর ইন্দ্র দেব হিসেবে আসনে বসেন প্রাণকৃষ্ণ ও কলাবতী হিসেবে কনে সাজেন প্রদীপ রায়। বরের বাবা ছিলেন ললিত মোহন রায় এবং কন্যাদান করেন রতন কুমার কর্মকার।
অনুষ্ঠানে ৫ শতাধিক অতিথিকে আপ্যায়ন করা হয়।
এর আগে সন্ধ্যায় একই ইউনিয়নের দক্ষিণ নগর গ্রাম ও গোপালপুর গ্রামে বিয়ের আয়োজন করা হয়। এই দুটি আয়োজনেও বর-কনে ছিলেন প্রাণকৃষ্ণ ও প্রদীপ রায়।
বিয়ে দেখতে আসা কিশোরী সঞ্চিতা রায় বলেন, ‘এ ধরনের বিয়ে আমি কোনো দিন দেখিনি। কিন্তু দাদা-দাদির কাছে শুনেছি, যখন অনাবৃষ্টি ও খরা দেখা দেয়, তখন এই ধরনের বিয়ের আয়োজন করা হয়। আজ নিজে উপস্থিত থেকে বিয়েটা দেখার সৌভাগ্য হয়েছে আমার।’
৫৫ বছর বয়সী নীরেন চন্দ্র রায় বলেন, ‘এই আয়োজনের পর বৃষ্টি অবশ্যই হবে- এই আশায় আমরা বিয়ের আয়োজন করেছি। ভগবানের কাছে বৃষ্টি প্রার্থনা করেছি।’
আয়োজক রতন কুমার কর্মকার বলেন, ‘বর্তমানে দিনাজপুরসহ উত্তরাঞ্চলে অনাবৃষ্টি দেখা দিয়েছে। তীব্র রোদের কারণে মাটি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। জনজীবন একেবারে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ঠিকমতো কৃষকরা ধান লাগাতে পারছে না। কোনোভাবেই ক্ষেতে কাজ করতে পারছেন না। তাই আমরা বৃষ্টির জন্য বৃষ্টির দেবতা ইন্দ্রদেব ও কলাবতীর এই বিয়ের আয়োজন করেছি।’
পূর্ব পুরুষের আমল থেকে এই রীতি চলে আসছে বলে জানান পুরোহিত পরিতোষ চক্রবর্তী। বলেন, ‘এই বিয়ে হলো ইন্দ্র রাজার বিয়ে। যখন কোথাও অনাবৃষ্টি দেখা দেয় তখন সেই এলাকায় ইন্দ্র রাজার বিয়ের আয়োজন করা হয়। আমরা সেই পূর্ব পুরুষদের রীতি ধরে রাখছি। বিয়েতে বৃষ্টির জন্য সবাই প্রার্থনা করি।’
দিনাজপুর আঞ্চলিক আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন জানান, চলতি জুলাই মাসে সব মিলিয়ে প্রায় ৪০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হওয়ার কথা। কিন্তু আজ (মঙ্গলবার) পর্যন্ত মাত্র ২২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। তবে আগামী ২২ তারিখের পর অর্থাৎ চলতি মাসের তৃতীয় সপ্তাহে বৃষ্টিপাত হতে পারে।’