বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বিছনাকান্দি, জাফলংয়ে হাহাকার

  •    
  • ১২ জুলাই, ২০২২ ১৮:৪৭

চলতি বছর মে মাসে ১৮ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় বন্যার কবলে পড়ে সিলেট। সেই পানি কমতে না কমতেই জুনের মাঝামাঝিতে ফের দেখা দেয় বন্যা। এটি আগের বন্যাকে ছাড়িয়ে স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়ংকর হয়ে উঠেছে। এটাই পর্যটক না আসার কারণ।

‘করোনার মৌসুমেও ঈদের সময় দু-চারজন পর্যটক ছিল, কিন্তু এবার আমার হোটেল একেবারে ফাঁকা। একজন পর্যটকও নেই।’

বললেন সিলেট নগরের জিন্দাবাজার এলাকার হোটেল গোল্ডেন সিটির ব্যবস্থাপক মৃদুল দত্ত মিষ্ঠু।

প্রায় ১৫ বছর ধরে পর্যটন খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মিষ্ঠু বলেন, ‘সিলেটের পর্যটন খাতে এমন খারাপ দিন আর আসেনি। ঈদে কখনই পর্যটকশূন্য থাকেনি সিলেট।

তিনি বলেন, ‘আমি আজকে হোটেল ডালাস, ফরচুন গার্ডেন, মেট্রো সিটিসহ কয়েকটি হোটেলে খোঁজ নিয়েছি। কোথাও কোনো অতিথি নেই। সব রুম ফাঁকা।’

বন্যার কারণে পর্যটকরা সিলেট থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন এই খাতের সঙ্গে জড়িতরা।

চলতি বছর মে মাসে ১৮ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় বন্যার কবলে পড়ে সিলেট। সেই পানি কমতে না কমতেই জুনের মাঝামাঝিতে ফের দেখা দেয় বন্যা। এটি আগের বন্যাকে ছাড়িয়ে স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়ংকর হয়ে উঠেছে। এটিই পর্যটক না আসার কারণ।

তবে বন্যা আক্রান্ত না হলেও সিলেট বিভাগের অন্যতম পর্যটন আকর্ষণীয় স্থান মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলেও এবার ঈদে নেই পর্যটক।

সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র জাফলং। এই পর্যটন এলাকায় গ্রিন রিসোর্ট ও গ্রিন রেস্টুরেন্ট নামে দুটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন বাবুল আহমদ। গত ২৫ জুন থেকে নিজের রেস্টুরেন্ট বন্ধ রাখেন তিনি। খুলেছেন ঈদের দিন।

বাবুল আহমদ বলেন, ‘লোকসান আর সামাল দিতে পারছিলাম না। গত ঈদের পর থেকে এখানে কোনো পর্যটক নেই। পর্যটক না হলে আমাদের ব্যবসাও নেই। ফলে প্রায় দুই মাস ধরে লোকসান গুনতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘ঈদের দিন রেস্টুরেন্ট খুলেছিলাম। আশা করেছিলাম ঈদের সময় পর্যটক আসবেন। কিন্তু এবার দেখি ঈদেও মানুষজন নেই। এই সময় কখনও জাফলং এমন ফাঁকা থাকেনি।’

জাফলং এলাকার গুচ্ছগ্রাম দিয়ে এখানকার মূল পর্যটন কেন্দ্রে প্রবেশ করেন পর্যটকরা। পর্যটকদের ওপর ভিত্তি করেই এই এলাকায় গড়ে উঠেছে শতাধিক স্থায়ী ও অস্থায়ী ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান।

সোমবার ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, হাতে গোনা কয়েকজন পর্যটক আছেন জাফলংয়ে। যারা এসেছেন তারাও সিলেট অঞ্চলের লোক। বাইরে থেকে কেউ আসেননি।

ঘুরতে আসা পর্যটকদের ছবি তোলার কাজ করেন আব্দুর রহিম। তিনি বলেন, ‘পর্যটক না আসায় আমরা প্রায় বেকার হয়ে পড়েছি।’

বর্ষা মৌসুমে সিলেটে সবচেয়ে বেশি পর্যটক সমাগম হয়। এখানকার পাহাড়, ঝরনা, হাওর, জলাবন, নদী বর্ষায় সবচেয়ে সুন্দর রূপ ধারণ করে।

পর্যটন কেন্দ্রগুলো থেকে এখন বন্যার পানি নেমেছে। পানিতে হাওর, বিছনাকান্দিসহ কিছু এলাকার সৌন্দর্যও বেড়েছে। শ্রীমঙ্গলে তো বন্যাই নেই, তবু কেন পর্যটক নেই সিলেটে- এমন প্রশ্নে হোটেল ব্যবস্থাপক মৃদুল দত্ত মিষ্ঠু বলেন, ‘মিডিয়ায় কেবল সিলেটের বন্যা দেখানো হচ্ছে, আর ত্রাণ বিতরণের কথা প্রচার হচ্ছে। তাই বাইরের মানুষ ভাবছেন পুরো সিলেটই বোধহয় এখনও পানিতে তলিয়ে আছে। এখানকার অবস্থা বোধহয় খুবই খারাপ। তাই কেউ সিলেটে বেড়াতে আসছেন না।’

পর্যটন না আসায় ক্ষতির অঙ্ক হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা ব্যবসায়ীদের।

বিছনাকান্দি পর্যটন কেন্দ্রের ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আমির হোসেন বলেন, ‘অন্যান্য বছর বর্ষায় এখানে পর্যটকদের ভিড় লেগে থাকে। এবার প্রায় দিনই ফাঁকা থাকছে পর্যটন কেন্দ্র। এতে আমরা লোকসানের মুখে পড়েছি।’

সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর একেবারে খাঁ খাঁ করায় ভীষণ হতাশ তাহিরপুরের ইঞ্জিন নৌকার চালক আসকর আলী। তিনি বলেন, ‘সুন্দর করে আমার নৌকাটি বানিয়েছিলাম। রাতে থাকা, রান্না করার সুবিধা আছে। এখন এই নৌকা ত্রাণ বিতরণে ব্যবহার হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘আমি না হয় কোনোমতে চলতে পারছি। কিন্তু পর্যটকদের ওপর নির্ভরশীল অনেক ছোট ছোট ব্যবসায়ী পথের ফকির হয়ে গেছেন।’

পর্যটক না আসায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন সিলেটের হোটেল, মোটেল ও রিসোর্ট ব্যবসায়ীরা। সিলেট জেলায় পাঁচ শতাধিক হোটেল, মোটেল রয়েছে, যার বেশির ভাগই এখন পুরো ফাঁকা।

সিলেট হোটেল-মোটেল রিসোর্ট মালিক সমিতির সভাপতি সুমাত নুরী জয়েল বলেন, ‘ক্ষতি সামলাতে না পেরে অনেকেই এখন হোটেল বিক্রি করে দেয়ার কথা ভাবছেন। কর্মীদের ছাঁটাই করছেন অনেকে। অনেক বড় বড় হোটেল রিসোর্ট ৬০/৭০ পার্সেন্ট ছাড়ের ঘোষণা দিয়েও পর্যটক আকর্ষণ করতে পারছে না।’

অন্যান্য বছর ঈদে হাউসফুল থাকলেও এবার উল্লেখযোগ্য বুকিং নেই জানিয়ে হোটেল ব্যবসায়ী ও সিলেট চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবু তাহের মো. শোয়েব বলেন, ‘মানুষ বন্যার কারণে সিলেটে না এসে পদ্মা পাড়ি দিয়ে কুয়াকাটাসহ দেশের অন্যান্য এলাকায় যাচ্ছেন।’

শ্রীমঙ্গলেও পর্যটক না আসা প্রসঙ্গে পর্যটক সেবা সংস্থার সাংগঠনিক সম্পাদক ও গ্রিনলিফ গেস্ট হাউসের স্বত্বাধিকারী এস কে দাশ সুমন বলেন, ‘ঈদ কিংবা এমন উপলক্ষে আমরা অনেক প্রস্তুতি নিয়ে থাকি। আলাদা বিনিয়োগ করি। তবে এ বছর চিত্রটা পুরোটাই ভিন্ন। সিলেট ও সুনামগঞ্জের বন্যার প্রভাবে এবার শ্রীমঙ্গলেও একেবারে পর্যটক নেই।’

সিলেট চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি তাহমিন আহমদ বলেন, ‘একজন রিকশাচালক, একজন কাপড় ব্যবসায়ীও পর্যটকদের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত। শ্রীমঙ্গল, জাফলংসহ কিছু এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্য তো পুরোটাই পর্যটকের ওপর নির্ভরশীল। তার ওপর এখন সিলেটে পর্যটনের ভরা মৌসুম। এখন কারও আয় নেই।’

এ বিভাগের আরো খবর