বিশ্বজুড়ে ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি এবং অর্থনৈতিক টানাপড়েনের শিকার কেবল মানুষ হচ্ছে- এটা ভেবে থাকলে ভুল করবেন। মানুষের ছায়ায় লালিতপালিত প্রাণীরাও পড়ছে বিপদে। উন্নত দেশের চিত্রও খুব একটা আলাদা নয়।
শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ হিসেবে বিবেচিত জাপানের কথাই ধরা যাক। সেখানেও হু হু করে বাড়ছে মূল্যস্ফীতি। এর ব্যাপক প্রভাব পড়ছে, এমনকি চিড়িয়াখানার প্রাণীরাও শান্তিতে নেই। খরচ কমাতে প্রাণীদের জন্য কম দামি খাবার বরাদ্দ দিতে শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ। এতে খাবারের প্রতি অরুচি তৈরি হচ্ছে অনেক প্রাণীর।
টোকিওর দক্ষিণে কানাগাওয়ার হাকোনে-এন অ্যাকোয়ারিয়ামে দেখা দিয়েছে অদ্ভুত এক সংকট। সেখানকার পেঙ্গুইন ও উদ্বিড়ালের জন্য দীর্ঘদিন ধরে বরাদ্দ ছিল চর্বিযুক্ত সুস্বাদু আজি (জাপানিজ হর্স ম্যাকেরেল মাছ)। তবে গত মে থেকে সেই সুদিন উধাও হওয়ার পথে। পেঙ্গুইন ও উদ্বিড়ালের জন্য বরাদ্দ হয়েছে বেশ সস্তা মেদহীন সাবা (ব্লু ম্যাকেরেল মাছ)।
তবে এই মাছ মোটেই মুখে রুচছে না পেঙ্গুইনদের। রীতিমতো বিদ্রোহ করে বসেছে সবাই। কোনো কোনো পেঙ্গুইন খাবারের কাছেই ঘেঁষছে না, আবার ক্ষুধার জ্বালায় কেউ কেউ ঠোঁটে নিলেও পরক্ষণেই ছুড়ে ফেলে দিচ্ছে।
এমন অবস্থায় চোখে অন্ধকার দেখছেন হাকোনে-এন চিড়িয়াখানা প্রধান হিরোকি শিমামোতো। তিনি বলেন, ‘কোনো কোনো পেঙ্গুইন সস্তা মাছটি ঠোঁটে নিয়েও থু করে ফেলে দিচ্ছে।’
কোভিড ১৯ মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বের বাকি সব দেশের মতো জাপানও অর্থনৈতিক মন্দার মুখে পড়েছে। চলতি বছরের এপ্রিলে দেশটিতে ভোক্তাদের মাসিক ব্যয় বেড়েছে ২.৫ শতাংশ।
হিরোকি শিমামোতো বলছিলেন, এমন অবস্থায় অ্যাকুয়ারিয়াম চালানোর খরচ বছরের শুরুর চেয়ে প্রায় ২০ শতাংশ বেড়েছে। এই চাপ সামলাতে প্রাণীদের জন্য সস্তা খাবার বরাদ্দ দেয়ার পাশাপাশি আলোকসজ্জা কমানোর পরিকল্পনা করছে কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া আগের চেয়ে বেশি সময় নিয়ে ট্যাংক পরিষ্কার করা হবে, যাতে এর পেছনে খরচও কমে আসে।
হিরোকি বলেন, ব্যয় কমাতে অ্যাকুয়ারিয়ামটিতে মে মাসে প্রথম ২০টি পেঙ্গুইন ও পাঁচটি সিলকে সস্তা ম্যাকেরেল মাছ দেয়া শুরু হয়। ধীরে ধীরে অভ্যস্ত করতে সে সময় এদের মোট খাদ্যের মধ্যে মাত্র ১০ শতাংশ ছিল কম দামি মাছ। চলতি জুলাইয়ের মধ্যে স্তন্যপায়ী প্রাণীদের খাবারের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশই হবে সস্তা মাছ।
তাহলে বিদ্রোহী পেঙ্গুইনদের কী হবে- এমন প্রশ্নে হিরোকি বলছেন, সস্তা মাছ একেবারেই যারা মুখে তুলবে না, তাদের আপাতত জোর করা হবে না। আগের মাছই তাদের দেয়া হবে। তবে বিদ্রোহী পেঙ্গুইনদের রুচি বদলানোর চেষ্টা চালিয়ে যাবে কর্তৃপক্ষ।