ত্যাগের মহিমা নিয়ে আবারও এসেছে ঈদুল আজহা। ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম বড় ধর্মীয় এই উৎসবটি উদযাপন হবে রোববার। যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে ঈদ উদযাপনে প্রস্তুত গোটা দেশ।
প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে মানুষ ছুটছে বাড়ির পথে। মঙ্গলবার শুরু হওয়া ঈদ যাত্রা প্রথম দুদিন ছিল স্বস্তির। পদ্মা সেতু খুলে দেয়ায় দক্ষিণবঙ্গের যাত্রীদের এবার ঈদযাত্রায় যোগ হয়েছে নতুন মাত্রা। তবে ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়, সড়কপথে দীর্ঘ যানজটে বৃহস্পতিবার থেকে নাকাল উত্তরের পথের যাত্রীরা।
ঈদের দিন সকালে ঈদ জামাতে শরিক হয়ে নামাজ আদায়ের মধ্য দিয়ে শুরু হবে ঈদ উদযাপন। মহান সৃষ্টিকর্তার অনুগ্রহের আশায় ঈদের নামাজ শেষে নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী পশু কুরবানি দেবেন ধর্মপ্রাণ ও সামর্থ্যবান মুসলমানরা। মূলত মনের পশুকে জবাই করে মানুষে মানুষে ভেদাভেদ ভুলে যাওয়াই দিনটির উদ্দেশ্য।
প্রায় চার হাজার বছর আগের কথা। মহান আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি পেতে নিজ সন্তান হজরত ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানি দিতে চেয়েছেন হজরত ইব্রাহিম (আ.)। তবে আল্লাহর কুদরতে হজরত ইসমাইল (আ.)-এর পরিবর্তে একটি দুম্বা কোরবানি হয়। হজরত ইব্রাহিম (আ.) ত্যাগের যে মহিমা স্থাপন করেছেন, তা অনুসরণেই সারা বিশ্বে মুসলিম সম্প্রদায় হিজরিবর্ষের ১০ জিলহজ আল্লাহর অনুগ্রহ পেতে পশু কোরবানি করে থাকে।
রোববার ঈদ উদযাপন হলেও পরের দুই দিনও পশু কোরবানির বিধান রয়েছে। ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী জবাই করা পশুর মাংসের একটি অংশ বিলি করা হয় দুস্থ ও দরিদ্রদের মাঝে। এ ছাড়া কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রির অর্থও গরিবের মাঝে বিতরণ করা হয়।
ঈদে সরকারি ও বেসরকারি ভবনগুলোতে আলোকসজ্জার রীতি থাকলেও এবার তা থাকছে না। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জের ধরে বিশ্ববাজারে অর্থনৈতিক মন্দা পরিস্থিতি, পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনের জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে বন্ধ থাকছে আলোকসজ্জা।
ঈদের জামাতহাইকোর্ট প্রাঙ্গণে জাতীয় ঈদগাহে সকাল ৮টায় হবে ঈদের প্রধান জামাত। জাতীয় ঈদগাহে নামাজ আদায়ে ঢাকাবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ আবারও বেড়ে যাওয়ায় এবারও বঙ্গবভনে ঈদের নামাজ আদায় করবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। সকাল সাড়ে ৮টায় বঙ্গভবনের দরবার হলে ঈদ জামাতে অংশ নেবেন রাষ্ট্রপ্রধান।
করোনার কারণে ২ বছর পর এবার কিশোরগঞ্জের শত বছরের ঐতিহ্য ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ময়দানেও হবে ঈদ জামাত। রোববার সকাল ৯টায় শুরু হবে এই জামাত।
প্রতিবারের মতো এবারও জাতীয় মসজিদ বায়তুল মুকাররমে হবে পাঁচটি ঈদ জামাত।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, সকাল ৭টায় প্রথম জামাতে ইমামতি করবেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মাওলানা মিজানুর রহমান।
দ্বিতীয় জামাত শুরু হবে সকাল ৮টায়। এতে ইমামতির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মুহিব্বুল্লাহিল বাকী নদভীকে।সকাল ৯টায় শুরু হবে তৃতীয় জামাত। বায়তুল মোকাররমের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা এহসানুল হক এই নামাজে ইমামতি করবেন।
সকাল ১০টায় হবে চতুর্থ জামাত। যেখানে ইমামতি করবেন ড. মাওলানা আবু সালেহ পাটোয়ারী।
আর পঞ্চম ও সর্বশেষ জামাতটি অনুষ্ঠিত হবে সকাল পৌনে ১১টায়। এই নামাজের ইমামের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা মুহীউদ্দিন কাসেমকে।
পাঁচটি জামাতে কোনো ইমাম অনুপস্থিত থাকলে বিকল্প ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুফতি মাওলানা মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ।
জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় জামাত হবে সকাল ৮টায়। জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ, হুইপ, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সংসদ-সদস্য ও সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এ জামাতে অংশ নেবেন। সংসদ সচিবালয় জানিয়েছে, স্থানীয় মুসল্লিরাও জামাতে অংশ নিতে পারবেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে ঈদের দুটি জামাত অনুষ্ঠিত হবে। প্রথমটি সকাল ৮টায় এবং দ্বিতীয়টি সকাল ৯টায়।বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ঈদের জামাতটি সকাল সাড়ে ৬টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত হবে। আবহাওয়া ভালো না থাকলে বা বৃষ্টি হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ধারিত তিনটি মসজিদে ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
এ ছাড়া সারাদেশে জেলা, উপজেলা, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ এবং সরকারি সংস্থাগুলো জাতীয় কর্মসূচির আলোকে ঈদ উদযাপনের প্রস্তুতি নিয়েছে।
ঈদ জামাতে মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধিকরোনাভাইরাসকে অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হলেও সম্প্রতি আবারও বেড়েছে সংক্রমণ। তাই আগের বছরের মতো এবারও সংক্রমণ ঠেকাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদ পালনের আহ্বান জানিয়েছে সরকার। ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে দেয়া হয়েছে আট দফা নির্দেশনা।
সবাইকে নিজ নিজ বাসা থেকে অজু করে ঈদগাহে বা মসজিদে আসতে হবে। করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে মসজিদ বা ঈদগাহের অজুখানায় সাবান বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখতে বলা হয়েছে।
ঈদের নামাজে আগত মুসল্লিদের অবশ্যই মাস্ক পরত হবে। মসজিদ বা ঈদগাহে সংরক্ষিত জায়নামাজ ও টুপি ব্যবহার করা যাবে না।ঈদের নামাজ আদায়ের সময় সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে এক কাতার অন্তর অন্তর দাঁড়াতে হবে।
করোনাভাইরাস মহামারি থেকে রক্ষা পেতে ঈদুল আজহার নামাজ শেষে আল্লাহর দরবারে খতিব ও ইমামদের দোয়া করারও অনুরোধ জানিয়েছে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
খতিব, ইমাম এবং মসজিদ পরিচালনা কমিটি ও স্থানীয় প্রশাসনকে এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নে অনুরোধ করা হয়েছে।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণীঈদুল আজহা উপলক্ষে দেশবাসীসহ বিশ্বের সব মুসলমানের প্রতি শুভেচ্ছা জানিয়ে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
করোনাভাইরাসের অভিঘাত ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার এই সময়ে নিম্নআয়ের মানুষ যেন ঈদ আনন্দ থেকে বঞ্চিত না হয়, সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে সমাজের বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
পবিত্র ঈদুল আজহার মর্মবাণী অন্তরে ধারণ করে জনকল্যাণমুখী কাজে অংশ নিয়ে বৈষম্যহীন, সুখী, সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়েও সবাইকে সচেতন করেছেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, ‘আমি এই মহামারিতে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নির্ধারিত স্থানে পশু কোরবানি করার অনুরোধ জানাই। আমরা যেন ঘরে পরিবার-পরিজন নিয়ে ঈদের আনন্দ উপভোগ করি এবং আল্লাহতায়ালার দরবারে বিশেষ দোয়া করি, যেন এই সংক্রমণ থেকে সবাই দ্রুত মুক্তি পাই।’