সংসার জীবনের খিটিমিটি কাটিয়ে সম্পর্কে রোমান্টিকতা ফেরানোর হাতিয়ার কিছু গবেষকের মতে যৌনতা।
পেশাগত জীবনে সাফল্যে আরোহণ করতে যে সময় আর পরিশ্রম করতে হয়, তা মানুষের যৌনজীবনে প্রভাব ফেলে অনেকটাই। গবেষকরা বলছেন, এই বৃত্ত ভাঙার চাবি আবার এই মানুষের হাতেই। গৎবাঁধা জীবন থেকে বেরিয়ে আসতে পারলে আরও মধুর হয় সঙ্গম।
আর গবেষণায় বিষয়টি উঠে আসার পর বিভিন্ন কোম্পানি ছাড়ছে নানা প্যাকেজ, যেখানে গিয়ে সব কাজ ভুলে প্রিয়জনের সঙ্গে সময় কাটিয়ে সম্পর্কটাকে আবার ঝালাই করে নেয়া যাবে।
অনাদিকাল থেকে ‘অবকাশকালীন যৌনতা’র নিজস্ব কিছু রহস্য আছে। নিউ ইয়র্কের সেক্স থেরাপিস্ট সারি কুপার বলছেন, ‘কামুকতায় নজর দেয়ার মতো সময়, বাস্তব জীবনের প্রতিদিনের চাহিদা থেকে দূরে থাকার মতো বিষয়গুলো যৌন আত্মবিশ্বাসকে মজবুত করে।
পর্যটনবিষয়ক সংস্থা দ্য গ্লোবাল ওয়েলনেস ইনস্টিটিউট চলতি বছরের শুরুতে ভবিষ্যদ্বাণী করে, ২০২৫ সালের মধ্যে বৈশ্বিক সুস্থতা পর্যটন ১ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলারের ফলক ছুঁয়ে ফেলবে। এখানে ‘যৌন সুস্থতা’ বাজারের দ্রুততম বর্ধনশীল খাতগুলোর একটি।
গত বছর ১৩তম বার্ষিক গ্লোবাল স্পা অ্যান্ড ওয়েলনেস ট্রেন্ডস ফরকাস্টে স্পাফাইন্ডার ওয়েলনেস ৩৬৫ ঘোষণা দেয়, সুস্থ যৌনতার জন্য তারা স্পা, রিট্রিটের মতো বেশ কিছু উদ্যোগ (থেরাপি) বাজারে আনতে যাচ্ছে।
দিন দিন সেক্স রিট্রিটের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। হোটেলগুলো সুস্থ যৌনতা সম্পর্কিত বিশেষ স্পা প্যাকেজের অফার দিচ্ছে। অবকাশকে উপভোগ্য করতে যৌনতা নিয়ে মানুষ এখন খোলাখুলি আলোচনায় স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। ভ্রমণে যৌনতায় খরচ করতে দ্বিধায় থাকা মানুষের সংখ্যাও কমে আসছে।
সেক্স থেরাপিস্ট মারিশা নেলসন বলেন, ‘মানুষ যৌনতাকে অগ্রাধিকার দিতে চায়। তবে সঙ্গীর সঙ্গে বোঝাপড়া কম কিংবা যদি ঘনিষ্ঠতার নতুন উপায় খুঁজতে হয়, তখন বিষয়টি কঠিন হয়ে ওঠে।
‘লোকেরা চায় যৌনতাকে অগ্রাধিকার দিতে, কিন্তু যদি তাদের সঙ্গীর সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে সমস্যা হয় বা ঘনিষ্ঠতার নতুন উপায় অন্বেষণ করতে হয়, তাহলে কাজ করা কিছু কঠিন সমস্যা হতে পারে। সেক্স রিট্রিট মানসিক চাপের সঙ্গে ছুটির বিলাসিতাকে আসলে এক বিন্দুতে মিলিয়ে থাকে।’
সেন্ট লুইজিয়ানায় মারিশার একটি সেক্স রিট্রিট সেন্টার আছে। সেখানে সাত দিনের জন্য গুনতে হয় সাড়ে ৭ হাজার ডলার। দম্পতিদের জন্য বিশেষ কর্মশালা, আলো-আঁধারি হোটেল রুমের পাশাপাশি এই প্যাকেজে থাকছে প্রশিক্ষিত সেক্স থেরাপিস্টদের কাছ পরামর্শ নেয়ার সুযোগ।
মারিশা বলেন, ‘আমার কাছে থাকা সব তথ্য বলছে, মানুষ স্টেরিওটাইপিক্যাল ও বিলাসবহুল অবকাশ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। তারা অভিজ্ঞতা অর্জনে আগ্রহী। তাদের জন্য আমাদের এই সেবা। অভিজ্ঞতার পাশাপাশি তারা এখানে আনন্দদায়ক ছুটি উপভোগ করতে পারছেন।’
অবশ্যই সেক্স রিট্রিট নতুন কিছু নয়। তবে যারা নিজেকে খোলামেলাভাবে উপস্থাপন করতে ইচ্ছুক না, তাদের কাছে ধারণাটি ‘অবাস্তব’ মনে হতে পারে। তার পরও আজকাল যৌনতা নিয়ে হোটেলের প্যাকেজগুলোর চাহিদা বাড়ছে।
যুক্তরাজ্যের সেক্স এক্সপার্ট কলিন রিচার্ডস বলেন, ‘আপনি যখন ছুটিতে থাকেন, আপনি তখন কল্পনায় পা রাখতে পারেন। হতে পারে আপনি সুন্দর কোনো দ্বীপে আছেন অথবা সুন্দর পোশাক পরেছেন কিংবা সুস্বাদু খাবার খাচ্ছেন।
‘এটা হতে পারে আপনাকে বাইরে যেতে হতে পারে, আপনি আপনার পোশাক খুলে ফেলতে পারেন। যদিও এটি চরিত্রের বিপরীত মনে হতে পারে। সেক্স রিট্রিট এখন অনেক বেশি পরিশীলিত হয়ে উঠছে। এখন সুন্দর সুন্দর রিসোর্ট আছে। আপনি অবশ্যই সেখানকার ছোট অন্ধকূপে বসে থাকতে পারেন। আর যদি সুইমিংপুলের পাশে বসে থাকেন, তবে অন্যসব রিসোর্টে থাকার মতোই অনুভূতি হবে। যদি না পানিতে যৌনতায় কেউ আপনাকে বাধা না দেয়।
যৌন সুস্থতাভিত্তিক ভ্রমণের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধির অর্থ হলো, ‘প্রথাগত’ হোটেলগুলো তাদের সব প্যাকেজ আকর্ষণীয় করছে। পোস্ট র্যাঞ্চ ইন-এ আপনি আরও চমৎকার স্পা অফারগুলোর পাশাপাশি ম্যাসাজ উপভোগ করতে পারেন।
দ্য ডব্লিউ ব্রিসবেনে একজন ‘যৌনবিদ’ আপনাকে পরামর্শ দেবে। ক্যারিলন মিয়ামিতে সিঙ্গেল এবং দম্পতিদের জন্য যৌনচক্র নিরাময় প্রোগ্রাম রয়েছে।
নেলসন বলেন, ‘মহামারিতে যেহেতু অনেক দিন সবাই আটকে ছিল, তাই মানুষ এখন বেশি রোমাঞ্চ খোঁজে। আমরা আর অসুখী হতে চাই না।
‘আমরা ভাবতে থাকি, দারুণ একটা জীবনে প্রবেশ করতে যাচ্ছি; যা আমার সম্পর্ক এবং কাজে উন্নতিতে সাহায্য করবে। আমরা আনন্দকে অগ্রাধিকার দিতে চাই।’